সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচারের দাবিতে ডিইউজের অনশন
সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রতীকী অনশনের ডাক দিয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী।
তিনি বলেন, আগামী বুধবার ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে না। সারাদেশে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকরা হামলার শিকার হচ্ছেন। কোনো বিচার আপনারা করছেন না। কেন সাংবাদিকদের সঙ্গে শত্রুভাবাপন্ন আচরণ করছেন? সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন পেছানো হচ্ছে বারবার। আর যেন পেছানো না হয়। এই খুন বার্ষিকীতে তাদের (সাগর-রুনি) খুনের বিচার দাবি করছি। এই সময়ে সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমরা আর সহ্য করতে পারছি না।
তিনি বলেন, গত এক বছরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে চারবার দেখা করেছি। সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়গুলো সুরাহা করতে বলেছি। তিনি আমাদের বারবার কথা দিয়েছেন। আমরা আসার পরই তিনি সাংবাদিকদের দাবি ভুলে গেছেন, এটা ঠিক না। আপনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) ভাববেন না, সাংবাদিকদের হাত থেকে রেহাই পাবেন। আপনাকে ঘেরাও করা হবে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য। সাগর–রুনিসহ আরও যারা হত্যার শিকার হয়েছেন, তাদের সবার বিচার চেয়েছি। আপনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) বলতে পারবেন, একটা হত্যাকাণ্ডের বিচারের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন? কেন একটা বিচারও করছেন না? আপনাদের আমলে সাংবাদিকেরা সবচেয়ে বেশি হত্যা, নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।
সাংবাদিকদের বেতন কাঠামোর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, নবম ওয়েজবোর্ড আইন করেছেন। আমরা আইন মেনেছি। কিন্তু মালিকরা মানেন না। আপনারা মালিকদের বলে দেন নবম ওয়েজবোর্ড না মানলে সংবাদমাধ্যম চালানোর দরকার নেই। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে আমরা কীভাবে জীবন-যাপন করছি, তার কোনো খোঁজ নিচ্ছেন না।
ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকতায় এসেছি কিন্তু জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। ১১ বছর আগে সাগর–রুনি হত্যার শিকার হয়েছেন। এই ১১ বছর একই সরকার ক্ষমতায়। অথচ সাগর–রুনি হত্যার বিচার হয় না। কোথায় যাব আমরা? সাংবাদিকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে বারবার হয়রানি করা হচ্ছে। একের পর এক সাংবাদিক হত্যা, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু সরকার বা রাষ্ট্র তা দেখছে না।
তিনি বলেন, যাদের দায়িত্ব পালন করার কথা তারা দায়িত্ব পালন করছেন না। আজকে আমাদের প্রতিবাদী হতে হবে। আমাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে।
ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, বিদেশ থেকে ফরেনসিক টিম আনা হয়েছিল। তারপর বলা হয়েছিল, ঘাতককে চিহ্নিত করা হয়েছে। দুজনকে শনাক্ত করার কথা জানানো হয়েছিল, যারা হত্যা করেছেন। আজ পর্যন্ত সেই দুজনের নামই জানতে পারলাম না। বিচারব্যবস্থা ও তদন্তকারী সংস্থার প্রতি দিন দিন আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে।
ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, ডিইউজের সিনিয়র সহ-সভাপতি এম এ কুদ্দুস, সাংগঠনিক সম্পাদক এ জিহাদুর রহমান জিহাদ, বিজেসির ট্রাস্টি রাশেদ আহমেদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মুরসালিন নোমানী, ডিআরইউর সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামিউল আহসান সিপু, ঢাকা সাব এডিটর কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি শাহ্ মুহতাসিম বিল্লাহ, ডিইউজের নিউ নেশন ইউনিট প্রধান জাহিদুল হাসান, আরটিভির ইউনিট প্রধান সাইখুল ইসলাম উজ্জ্বল, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (টিসিএ) সভাপতি শেখ মাহাবুব আলম।
এছাড়া সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিইউজের সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, ডিইউজের সহ-সভাপতি মানিক লাল ঘোষ, দপ্তর সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক শাকিলা পারভীন, কল্যাণ সম্পাদক জুবায়ের চৌধুরী, ডিআরইউর সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শুকুর আলী শুভ, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মিজান মালিক প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল কদম ফোয়ারা প্রদক্ষিণ করে জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।
এমএইচএন/এফকে