বইমেলায় গুণিজন স্মৃতি পুরস্কার পেল ৮ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান

একেবারেই শেষ সময়ে গড়িয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলা। প্রতিবছরের মতো এবারও বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশ, প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা বই, গুণমান বিচারে সর্বাধিক সংখ্যক শিশুতোষ বই, নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে ৫টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে গুণিজন স্মৃতি পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ থেকে বিষয়টি জানানো হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অমর একুশে বইমেলা- ২০২৫ উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চিত্তরঞ্জন সাহা, মুনীর চৌধুরী, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কারের জন্য ৫টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করেছে।
আরও পড়ুন
যেসব প্রতিষ্ঠান পেল গুণিজন স্মৃতি পুরস্কার
এরমধ্যে ২০২৪ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘কথা প্রকাশ’ কে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২৫ দেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালে প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘পাঠক সমাবেশ’ (প্লেটো : জীবন ও দর্শন-আমিনুল ইসলাম ভুইয়া), ‘ঐতিহ্য’ (ভাষাশহিদ আবুল বরকত : নেপথ্য-কথা- বদরুদ্দোজা হারুন) এবং ‘কথাপ্রকাশ’ কে (গোরস্তানের পদ্য : স্মৃতি ও জীবন স্বপ্ন সিরাজ সালেকীন) মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার- ২০২৫ দেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালে গুণমান বিচারে সর্বাধিক সংখ্যক শিশুতোষ বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘কাকাতুয়া’ কে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার- ২০২৫ দেওয়া হয়েছে এবং অমর একুশে বইমেলা- ২০২৫ উপলক্ষ্যে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘মাকতাবাতুল ইসলাম’ (১ ইউনিট); ‘গ্রন্থিক প্রকাশন’ (২–৪ ইউনিট) ও ‘বাতিঘর’ (প্যাভেলিয়ন)-কে কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫ দেওয়া হয়েছে।
২৫তম দিনে বইমেলায় ১০১ নতুন বই
অমর একুশে বইমেলার ২৫তম দিন আজ। মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। আজ নতুন বই এসেছে ১০১টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘গণ-অভ্যুত্থান, গ্রাফিতি এবং অপরাপর ভিজ্যুয়াল কালচার’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুনেম ওয়াসিফ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন তাসলিমা আখতার এবং কামার আহমাদ সাইমন। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
প্রাবন্ধিক বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের আগে এবং পরে দেওয়ালে দেওয়ালে আঁকা গ্রাফিতি, চিত্র ও লেখাগুলো থেকে বোঝা যায়, গত এক দশকের বেশি সময় আমরা যে ক্ষমতার জাঁতাকলের মধ্যে বসবাস করেছি, তরুণ প্রজন্ম সেই ক্ষমতার কর্তৃত্বকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চেয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের বেশিরভাগ গ্রাফিতি ও চিত্রগুলো গতানুগতিক শিল্পধারা অনুসরণ করেনি। এজন্যই সেগুলো এত অসাধারণ। এসব ছবির মধ্যে এক ধরনের তেজ, ক্রোধ, ক্ষমতাকে প্রশ্ন করার সাহস এবং উপহাস কিংবা গভীর রাজনৈতিক বিষয়কে হাস্যরসে পরিণত করার প্রবণতা আছে। এর ভিত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই আস্তে আস্তে তৈরি হয়েছে।
আলোচকরা বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে দেওয়ালে আঁকা গ্রাফিতি ও চিত্রগুলো শুধু ক্ষমতার কেন্দ্রকেই নয়, বরং শিল্পের প্রতিষ্ঠিত সংজ্ঞা ও ভাষাকেও চ্যালেঞ্জ করেছে। মানুষের সহজাত ভাষা, চিন্তা ও সমষ্টিগত আবেগকে ধারণ করে এসব গ্রাফিতি হয়ে উঠেছে অভ্যুত্থানের অন্যতম শক্তিশালী প্রকাশ-মাধ্যম। গণ-অভ্যুত্থানের সময় গ্রাফিতির ভাষা, শ্লেষ ও ক্ষোভ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার সাহস জুগিয়েছে এবং ছাত্র, তরুণ, শ্রমিক ও সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে ভূমিকা রেখেছে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে দেওয়ালে কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব গ্রাফিতি ও চিত্র প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোর শিল্পগত ও নান্দনিক বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি আরও নানামাত্রিক আলোচনা হতে পারে। এগুলোকে যদি যথার্থ স্থানে এবং মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা যায়, তাহলে এর যে ব্যাখ্যাগত সম্ভাবনা দাঁড়াবে সেটা হবে অসীম ও অসামান্য।
অন্যদিকে, আজ লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- কবি ও সম্পাদক শওকত হোসেন এবং কবি শামীমা চৌধুরী।
বইমেলায় আগামীকালের অনুষ্ঠানসূচি
আগামীকাল বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলার ২৬তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলাদেশ বিনির্মাণ : শিক্ষা ও প্রযুক্তি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সামিনা লুৎফা নিত্রা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন কল্লোল মোস্তফা এবং এসান মাহমুদ। সভাপতিত্ব করবেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
আরএইচটি/এআইএস