কবিতা যেভাবে চপলের
এক.
চপল তার বয়সী আর দশটা বালকের মতো নয়। সে যখন যা করে তা বেশ মনোযোগ দিয়েই করে। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, কবিতা আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা, এমন নানা কর্মকাণ্ডে সে নিজেকে ব্যস্ত রাখে। সাধারণ ছাত্রদের মতো ঘণ্টা মেপে রাতদিন পড়াশোনা করার মতো ছাত্র সে না। পড়ে বড়জোর ঘণ্টাতিনেক। ক্লাসে সবসময় প্রথম দু'জনের মধ্যে থাকে বলে বাবা-মা আরও বেশি পড়াশোনার জন্য চপলকে কখনো চাপ দেননি বা দেয়ার প্রয়োজনও হয়নি।
জাকির সাহেবের বিয়ের প্রথম সাত বছর কোনো সন্তান হয়নি। নানা চিকিৎসা শেষে চপল এসেছে মায়ের গর্ভে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান চপল। সবেধন নীলমণি। ওর মাঝেই পিতামাতার সব স্বপ্ন পুঞ্জীভূত। এসএসসি পাস করে উচ্চ মাধ্যমিকে পা দিলেও আজও বাবা-মায়ের সাথেই এক বিছানায় ঘুমায়। মা-বাবা তাকে কখনো বলেনি ভিন্ন রুমে শুতে, সে নিজেও আগ বাড়িয়ে সে কাজটি করার প্রয়োজনবোধ করেনি এযাবৎ।
সরকারের খাদ্য বিভাগে চাকরি করেন চপলের বাবা। ঘুরেফিরে নিজ জেলা কুমিল্লার নানা অফিসেই কেটে গেছে তার চাকরি জীবনের পনেরোটি বছর। সম্প্রতি অডিটের আপত্তি নিয়ে বিপত্তি দেখা দিলো অফিসে। তদন্ত হলো। অবশেষে জাকির সাহেবসহ আরও কয়েকজনকে বদলি করা হলো দেশের বিভিন্ন স্থানে। ছেলের পড়াশোনা বা কলেজের অজুহাত দিয়েও বদলি ঠেকানো গেলো না। তার নতুন কর্মস্থল হয়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের গাছবাড়িয়ায়। আর, চপল ভর্তি হলো গাছবাড়িয়া কলেজে উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বৰ্ষে।
নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ, আর চট্টগ্রামের দুর্বোধ্য আঞ্চলিক ভাষার মুখোমুখি হয়ে প্রথম কিছুদিন বেশ অস্বস্তিতেই কেটেছে চপলদের। তবে, মাস দুয়েক যেতেই চপল নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে বেশ। বন্ধুবান্ধবও হয়েছে কয়েকজন। পড়াশোনার বাইরে কিছু না কিছু সে খুব ছোটবেলা হতেই করে আসছে।
গাছবাড়িয়া কলেজেও সে নিজ উদ্যোগে কয়েক বন্ধুকে নিয়ে দেয়ালিকা প্রকাশ, আবৃত্তি অনুষ্ঠান, নাটক, উপস্থিত বক্তৃতা, ইত্যাদি নানাবিধ শিক্ষাক্রম বহির্ভূত কর্মকাণ্ড চালু করেছে। আগে যেখানে বছরে একটি দেয়ালিকা বের হতো সেখানে তা ত্রৈমাসিক বেরুচ্ছে এখন। স্থানীয় পত্রিকায়ও চপল কবিতা, গল্প লেখালেখি শুরু করেছে। তার সাথে হাত মিলিয়েছে সহপাঠীদের অনেকেই।
মাত্র কয়েকমাসেই চপল বেশ জমিয়ে ফেলেছে কলেজে। তার ক্লাবে যারা নিয়মিত লেখালেখি করে ওদের একজন প্রথম বর্ষ বিজ্ঞানের ছাত্রী, কবিতা। কবিতার বাবা গাছবাড়িয়া কলেজেরই ভাইস প্রিন্সিপাল বা উপাধ্যক্ষ। কবিতা ভীষণ প্রকৃতিপ্রেমী। তার শখ কবিতা লেখা। তার কবিতায় কোনো না কোনোভাবে প্রকৃতি চলে আসে।
পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র, বালুচর, ধানক্ষেত, কাশবন, কোনোকিছুই তার কবিতা হতে বাদ পড়ে না। সেও বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। তার জন্ম আর বেড়ে ওঠা গাছবাড়িয়ায়। বলা চলে, তার পৃথিবী মানেই চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার গাছবাড়িয়া এলাকা। শিক্ষক বাবার বই পড়ার স্বভাবটা কবিতা বেশ পেয়েছে। বহুমাত্রিক বই পাঠের কারণে দেশবিদেশের নানা বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখে কবিতা।
কবিতা মায়ের মতো দেখতে হয়েছে। লম্বা গড়ন, টানা চোখ, প্রলম্বিত ঠোঁট জোড়া, হাসিতে গালে পড়ে টোল। যেকোনো তরুণের নজরকাড়ার ষোলোআনা যোগ্যতা রয়েছে তার। পড়াশোনায়ও যথেষ্ট মনোযোগী সে। মা-বাবার ইচ্ছে ভবিষ্যতে কবিতা ডাক্তার হবে। বাবা তাকে বলেছেন, 'কবিতা, তুই যদি ডাক্তার হতে পারিস আমার কাছ থেকে যা চাস আমি তাই দেবো। মন দিয়ে পড়াশোনা কর। আমি তো ছোটবেলায় বাবা হারিয়েছি বলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ডাক্তারি পড়তে পারিনি। তুই আমার সে স্বপ্ন পূরণ করিস মা।'
কবিতা বাবার উপদেশ মনে রেখেছে। ও জানে তার বাবা ডাক্তারির ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেও কেবল টাকার অভাবে পড়তে পারেনি। পরে ব্যাচেলর আর মাস্টার্স শেষ করে গাছবাড়িয়া কলেজে শিক্ষক হয়েছিলেন। প্রায় দুই দশক পর সেই কলেজেই তিনি এখন উপাধ্যক্ষ। কবিতার মাও তাকে সবসময় বাবার স্বপ্নের কথা মনে করিয়ে দেন। কবিতা সে মতেই পড়াশোনাকে ধ্যানজ্ঞান করে ডাক্তার হওয়ার চেষ্টায় আছে।
দুই.
মাঝে মাঝেই কবিতাকে মনে পড়ে চপলের। তার কথা মনে হতেই আনমনা হয়ে যায় সে। কিছুদিন ধরে তা এতটা প্রবল হয়েছে যে সে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা পর্যন্ত করতে পারছে না। বইয়ের পাতায় পাতায় যেন কবিতার মোলায়েম মুখমণ্ডল আর অমলিন হাসি লেপ্টে থাকে। অস্থিরতা গ্রাস করে চপলকে। নিজেকে শান্ত করতে চপল কবিতার জন্য এক দীর্ঘ চিঠি লিখে ফেলে। লেখালেখিতে সে এমনিতেই ভালো। তিন পৃষ্ঠার চিঠি লিখতে তার বিশ মিনিটও লাগেনি।
ভাবছে চিঠিটা এখন সে কী করবে? এটা কি কবিতাকে আড়ালে ডেকে তার হাতে গুঁজে দেবে ঠিক যেমন কিশোরী মেয়েরা মাথায় ফুল গোঁজে? অথবা কলেজে মেয়েদের কমন রুমের আশপাশে কবিতা দেখে মতো এক জায়গায় চিঠিটা কি ফেলে রাখবে? নাকি, কোনো বন্ধুকে বলে সরাসরি তার কাছে এ চিঠি পৌঁছাবে? নানা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায় চপলের মনে। এলোমেলো ভাবতে ভাবতেই তিন-চারদিন পেরিয়ে যায়, চিঠিটা কবিতাকে দেওয়া হয়ে ওঠে না।
চপল চিঠিটা খুলে আরেকবার পড়ে দেখে। পড়তে পড়তে কিছু কথা পরিবর্তন করে আবার নতুনভাবে লেখে এ চিঠি। তারপরও মন ভরে না। আরও একবার এডিট করে। এবার চিঠির শেষে সে নিজের নাম না দিয়ে লেখে 'আশিক তোমার।' চপল মনে মনে কবিতাকে খুব কাছের করে ভাবতে শুরু করে, যেন দীর্ঘ প্রতীক্ষা আর ভালোবাসার অমূল্য সম্পদ সে।
অবশেষে স্থির করে এ চিঠি কবিতাকে সরাসরি বা কারো মাধ্যমে সে দেবে না। কারণ, কোনো কারণে কবিতা যদি চপলকে মুখের উপর না করে বসে তবে তো তার স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনাশ হবে। চপল তা মেনে নিতে পারবে না। তারচেয়ে বরং চিঠিটি পাঠাবে উড়ো চিঠি হিসেবে।
আরও পড়ুন
উড়ো চিঠি দিয়ে চপল চায় আপাতত কবিতা যেন বুঝতে পারে তাকে নিয়ে কেউ একজন গভীর করে ভাবছে। তার মনে একটা প্রশ্নের উদয় হোক 'কে সেই পুরুষ' তা জানতে। প্রশ্নটা জাগাতে পারলেও কম কী? চপল আপাতত তেমনই ভাবছে। এতে কবিতা অন্য কাউকে তার জীবনে জড়ানোর চিন্তা হয়তো করবে না। উড়ো চিঠিতে চপল আকারে ইঙ্গিতে বুঝাবে চিঠিগুলোর লেখক কে? কিন্তু সরাসরি নিজের নাম সেখানে লিখে দেবে না ঘুণাক্ষরেও। আপাতত চলুক এভাবেই, অদৃশ্য এক অর্গলে বন্দি থাকুক তার সমগ্র হৃদয় জুড়ে থাকা কবিতা।
অবশেষে কবিতার পুরো নাম প্রাপকের ঘরে লিখে তার শিক্ষক-বাবার ঠিকানা দিয়ে প্রেরকের নামহীন প্রথম উড়ো চিঠিটি ডাকে পাঠালো চপল। তারপর গভীর আগ্রহ নিয়ে লক্ষ্য করতে থাকলো তাতে কবিতার প্রতিক্রিয়া কী? প্রায় প্রতিদিনই কলেজে কবিতার সাথে একাধিকবার দেখা হয়। কিন্তু, দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কবিতার ভিন্নরূপ কোন প্রতিক্রিয়া না দেখে অস্থির হয়ে পড়ে চপল। সে ভাবে, তবে কি চিঠিটা কবিতার হাতে পৌঁছেনি? লোকাল পোস্ট অফিস হতে খুব কাছের একটা ঠিকানায় চিঠি যেতে চৌদ্দদিন লাগার কথা কি? এও ভাবে, গ্রামগঞ্জের পোস্ট অফিস বলে কথা, ডাকপিয়ন হয়তো তার ঘরেই ফেলে রেখেছে এ চিঠি।
চিঠির ভাগ্য নিশ্চিত হতে সে পোস্ট অফিসে গিয়ে জানতে চায় লোকাল ঠিকানায় চিঠি যেতে কতদিন লাগে? তারা বলল, তিনচারদিন বা বড়জোর এক সপ্তাহ। পোস্ট অফিসে কোনো চিঠি পড়ে আছে কিনা সে খবরও নিলো চপল। না, কোনো চিঠি অবিলিকৃত পড়ে নেই। তাহলে কবিতা নিশ্চয়ই চিঠিটি পেয়েছে। পড়েছেও হয়তোবা। সে হয়তো ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না কে সেই চিঠির লেখক? চপলকে সে হয়তো সন্দেহের তালিকায় রাখেনি, না হয় কিছু না কিছু প্রতিক্রিয়া তো অবশ্যই দেখাতো। তবে কি কবিতা এমন আরও চিঠি হরহামেশাই পায়?
মাস না পেরোতেই দ্বিতীয় এক চিঠি লিখে চপল একইভাবে পাঠায় কবিতার ঠিকানায়। এবারও সে কবিতার চালচলন বা কথাবার্তায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখে না। এ অবস্থায় চপল ভাবে, এভাবে অহেতুক চিঠি লিখে সময় নষ্ট করে বা কষ্ট পেয়ে কাজ কী? কোনো ফলাফল তো দেখা যাচ্ছে না। তারপরও সে চিঠি লেখা ছাড়ে না।
কবিতার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা না গেলেও প্রতিটা চিঠি পাঠানোর পর বেশ কয়েকদিন চপল সুস্থির থাকে, মন শান্ত হয়, পড়ালেখায় মনোনিবেশ করা তার জন্য অনেক সহজ হয়ে পড়ে। তাই, সে চিঠি লিখেই যায়; আপাতত প্রতিক্রিয়া পাওয়া না পাওয়ার বিষয়টা সে বিধাতার ওপরই ছেড়ে দিয়েছে। নিজেকে প্রবোধ দিতে সে ভাবে, মিরাকলস হ্যাপেন, বিশ্বাসে মিলে স্বর্গ তর্কে বহুদূর!
তিন.
একদিন কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক শিমুল দেখা করলো চপলের সাথে তার ক্লাসরুমে এসে। বলল, 'লাঞ্চ ব্রেকের সময় ক্যান্টিনে এসো চপল, তোমার সাথে কথা আছে।'
- কি কথা ভাই? - চপল জানতে চায়।
- ক্যান্টিনে এসো, চা-সমুচা খাওয়াবো। তখন বলবো।
শিমুল বিএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ছাত্রলীগের রাজনীতি করে। চপল আবার ছাত্ররাজনীতি ভালোবাসে না। তার চেয়ে বরং লেখালেখি, কবিতা আবৃত্তি, বক্তৃতা, ওসবেই তার মন। পুরোপুরি ধরতে না পারলেও সে আঁচ করতে পারে শিমুল তাকে ছাত্রলীগের খাতায় নাম লেখাতে উদ্বুদ্ধ করবে হয়তোবা। মনে মনে ঠিক করে কি উত্তর দেবে সে। সরাসরি না না বলে 'ভেবে দেখবে' উত্তর দেবে ঠিক করে সে; 'না' বললে পাছে তাদের রোষানলে পড়তে হয়।
লাঞ্চ ব্রেক হতেই শিমুল নিজে চলে আসে চপলের ক্লাসরুমে। তারপর তার সাথে কথা বলতে বলতে ক্যান্টিনে যায়। চা সমুচারও ব্যবস্থা করে। রাজনীতির কোনো আলাপ নেই দেখে চপল অবাক হয়। কথার ফাঁকে শিমুল তার নিজের খাতাটা চপলের দিকে এগিয়ে দিয়ে চপলের পুরো নামটা লিখতে বলে তাতে। চপল তাই করে।
অতঃপর প্যান্টের পেছনের পকেট থেকে শিমুল একটা চিঠি বের করে চপলকে দেখিয়ে বলে, 'দেখো চপল, লেখার ধরণ, ভাষা, ইত্যাদি দেখে আমি ধারণা করেছিলাম এ চিঠি তোমার লেখা। তোমার অনেক লেখা দেয়ালিকায় আমি পড়েছি। তোমার হাতের লেখার সাথেও পুরোপুরি মিলে যায় এ চিঠি। আমার অনুমান শতভাগ ঠিক।'
চপল আকাশ থেকে পড়ে, আর ভাবে, এ চিঠি শিমুলের হাতে এলো কী করে? চিঠিটি সে নিজে লেখেনি এমন দাবিও করে না। কেবল অপরাধীর মতো ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে শিমুলের দিকে তাকিয়ে থাকে।
শিমুল বলে, 'তুমি নিশ্চয়ই ভাবছো তোমার চিঠি আমার হাতে এলো কী করে? কবিতা আমার খালাতো বোন। খালাই আমাকে ডেকে চিঠিটি দেখান। উনার ধারণা এমন আরও অনেক চিঠি কেউ একজন কবিতাকে পাঠিয়েছে। চিঠি পড়ে আমি আঁচ করতে পেরেছি এ মানের লেখা কে লিখতে পারে? যাক, যা হওয়ার হয়ে গেছে, তুমি ভিন্ন জেলার ছেলে, বলা চলে বিদেশি; লোকাল কেউ হলে এটা নিয়ে হইচই করতাম। তোমাকে নিয়ে তা করতে চাই না।'
- কবিতা কি জানে আমি তাকে এ চিঠি লিখেছি?
- মনে হয় না। খালা বলেছে ওর সাথে এ বিষয়ে কথা না বলতে; তুমিও বলবে না কিন্তু। তার ঘরেই খালা চিঠিটা পেয়েছেন। আর কখনো এমন চিঠি যেন না দাও। দিলে বিষয়টা তোমার আমার ভেতরে সীমাবদ্ধ থাকবে না, অনেকদূর গড়াবে। বলে রাখলাম।
- ঠিক আছে শিমুল ভাই।
চা-সমুসা খেয়ে যে যার মতো চলে যায়।
বিষণ্ন মনে বাসায় ফিরে সোজা নিজের কক্ষে ঢুকে দরজা লাগিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় চপল; কিছু খায় না। খানিক পর মা এসে জানতে চান তার খারাপ লাগছে কিনা। না বোধক উত্তর দিয়ে সে জানায় পেট ভালো নেই, সে এখন কিছু খাবে না, বরং ঘুমাবে। মাও দরজা ভিজিয়ে দিয়ে ছেলের কক্ষ ত্যাগ করেন।
টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে। আকাশে ঘন মেঘ। বৃষ্টি হবে হবে করেও আর হয় না। বাতাস বইতে শুরু করেছে। জানালা দিয়ে কাছেই যে নিম গাছটা দেখা যায় সেখানে ভীতসন্ত্রস্ত এক দোয়েল পাখির বাচ্চা লুকোবার চেষ্টা করছে। মা পাখি হয়তো খাবারের সন্ধানে বেরিয়েছে। এরই মাঝে অঝোর ধারায় বৃষ্টি শুরু হলো। সীমানা দেয়াল থেকে বৃষ্টির পানি ছিটকে জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকছে। চপলের ইচ্ছে ছিল বাচ্চাটি এ অঝোর বৃষ্টিতে কী করে আরও কিছুক্ষণ দেখবে। তা আর হলো না। জানালা বন্ধ করে এক সময় চোখও বন্ধ করলো সে।
চোখ বন্ধ, তবে ঘুম আসে না। ওদিকে মা বাইরে থেকে ডাকছে তাকে। সাগু রান্না করে এনেছেন চপলের জন্য। মায়ের ধারণা, সাগু খেলে পেট ভালো হয়ে যায়। সত্যি কিনা কী জানি? চপল জানে ওসব সাগু-টাগু এখন তার দরকার নেই। তারপরও দরজা খুলে মায়ের কাছ থেকে সাগুর বাটিটা নিয়ে আবার দরজা বন্ধ করে দেয়। সাগুভর্তি বাটি পড়ার টেবিলে পড়ে আছে। চপল তা ছুঁয়েও দেখে না।
কবিতাকে কি তবে আর কোন চিঠি লেখা হবে না?—চপল নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে। কিন্তু, ওকে চিঠি না লিখলে যে মনটা ছটফট করে! মনের শান্তির জন্য হলেও তো তাকে দু'চারটে লাইন লেখা দরকার। কে লিখেছে তা কবিতা না জানলেও ক্ষতি কী?
পাঁচ-পাঁচটি চিঠি চপল কবিতাকে লিখেছে। আর ওর মা পেয়েছে মাত্র একটি। তার মানে, চারটি চিঠি কবিতা কোথাও লুকিয়ে রেখেছে। চপল মনে মনে ভাবে, সে চিঠিগুলো কেবল পড়েই না, ওগুলো তার ভালো লাগে, যত্ন করে লুকিয়েও রাখে। হয়তোবা কবিতার কাছে নাম না জানা কারও কাছ থেকে অবিরাম আসা চিঠিগুলো মহামূল্যবান সম্পদ।
ও ভেবে মজা পায়, কোনো এক তরুণ তাকে নিয়ে কেবল ভাবেই না, সমুদ্র-মহাসমুদ্রের গভীরতায় তাকে নিয়ে ডুবেও যায়। এমন মূল্যবান চিঠি পাওয়া বন্ধ হলে সে মনে কষ্ট পাবে। ছটফট করবে। চপলের মতোই পোস্ট অফিসে চিঠির খোঁজ নিতে যাবে হয়তোবা। ফুলের মতো নিষ্পাপ ভালোবাসার এ মানুষটিকে এতটা কষ্ট চপল জেনেশুনে দিতে পারে না; তেমন পাষাণ সে নয়।
সবদিক ভেবে চপল কবিতাকে উড়ো চিঠি দিয়েই যাবে স্থির করে। ভাগ্যে যা আছে তা হাসিমুখে বরণ করতে চপল মানসিকভাবে প্রস্তুত। প্রয়োজনে ছাত্রসংসদের শিমুলকে সরাসরি মোকাবিলা করবে সে। প্রতি মাসে একটি করে উড়ো চিঠি কবিতা পেতেই থাকে।
চার.
এর কয়েকদিন পর কলেজের প্রিন্সিপ্যাল সাহেব চপলের বাবাকে অফিসে ডেকেছেন। বলেছেন, ছাত্রসংসদের নেতারা চপলের বিষয়ে কিছু আপত্তি দিয়েছে। এ অবস্থায় সম্ভব হলে চপলকে তার কলেজ হতে অন্য কোথাও সরিয়ে নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন তার বাবাকে। চিঠির বিষয়েও চপলের বাবাকে জানানো হয়েছে। এও জানানো হয়েছে, ছাত্রসংসদ তাকে আর এভাবে চিঠি না লিখতে বলেছিল যা চপল শোনেনি।
একমাত্র সন্তানের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে জাকির সাহেব বিচলিত হয়ে পড়লেন। স্ত্রীর সাথে কথা বলে তিনি মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে তাকে দ্রুত বদলি করার অনুরোধ জানান। একমাসের মধ্যেই ঢাকায় বদলি নিয়ে চলে যান। তবে স্বামী-স্ত্রী এ ব্যাপারে ছেলেকে কিছুই বুঝতে দিলেন না।
চপল সরকারি তিতুমীর কলেজে ভর্তি হয়েছে। পড়াশোনা চলছে, তবে উড়ো চিঠি লেখাও থেমে নেই। এ কাজ সে তার কর্তব্য হিসেবেই ধরে নিয়েছে। কবিতা মনে কষ্ট পাক তা কোনোভাবেই চপল চায় না।
এরই মাঝে এইচএসসি পাস করে চপল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো আইন বিভাগে। কবিতা কোথায়, কী পড়ছে তা তার জানা নেই। তবে, চট্টগ্রাম থেকে আসা কোনো ছেলের সাথে পরিচয় হলেই চেষ্টা করে কবিতার বিষয়ে জানার।
শৈবাল নামের এক বছরের জুনিয়র এক ছাত্রের সাথে চপলের কথা হয়। শৈবালের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার 'আমিন বাড়ি' এলাকায়। গাছবাড়িয়া কলেজের উপাধ্যক্ষ, মানে কবিতার বাবার বাড়িও কাছাকাছি। কথা প্রসঙ্গে তার কাছে কবিতার কথা জানতে চাইলে শৈবাল জানালো কবিতা সিলেট মেডিকেলে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। খবরটা শুনে চপলের চোখেমুখে আনন্দের বিজলি চমকে যায়।
সিলেটে বাড়ি এমন এক সহপাঠীকে নিয়ে পরের সপ্তাহেই চপল সিলেটের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ে। মা-বাবাকে জানায়, সিলেটের বন্ধু তাকে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছে দু-তিনদিনের জন্য।
সিলেট মেডিকেল চষে বেড়াতে লাগলো চপল কবিতার খোঁজে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে ছাত্রী হোস্টেলের সামনে বন্ধুকে নিয়ে কবিতার অপেক্ষায় থাকে। সিলেটের বন্ধু তার সাথে থাকলেও খানিক দূরত্ব বজায় রেখে চলে যাতে কবিতার সাথে দেখা হলে সে চপলকে একাকী দেখতে পায়।
দীর্ঘাঙ্গী কবিতাকে অন্য অনেক মেয়ের মাঝে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। তাকে পেয়েও যায় এক সময়। তবে, খুব তাড়াহুড়ো করে হাঁটছে কবিতা। হয়তো ক্লাসে দেরি হয়ে যাচ্ছে।
কবিতার হাঁটাপথে এসে দাঁড়ায় চপল; তাও তার নজরে পড়ে না। কবিতার চিন্তা সময়মতো ক্লাসে উপস্থিতি নিয়ে। তাছাড়া এক প্রকার ভুলে যাওয়া চপল হঠাৎই এমন করে দেখা দেবে তা তার কল্পনায়ও নেই। চপলের দিকে না তাকিয়েই কবিতা নিজ মনে হেঁটে যায়।
এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না চপল। অগত্যা সে পেছন থেকে ডাক দেয়, 'কবিতা, কবিতা, আমি চপল।'
থমকে দাঁড়ায় কবিতা। চোখে রাজ্যের বিস্ময়। চপলের চোখে তার অপলক চোখ। নিজের অজান্তেই প্রশ্ন করে, 'আপনি এখানে?'
- হ্যাঁ, এক বিশেষ প্রয়োজনে এসেছি।
- বিশেষ প্রয়োজন? - নিজের অজান্তেই জানতে চায় কবিতা।
- আপনার সাথে দেখা করতে এলাম - বিড়বিড় করে চপল জবাব দেয়।
- কেন, কিছু বলবেন?
- কথা আছে। খানিক সময় হবে?
- আমার পরীক্ষা আছে একটু পরেই, চারটার দিকে ফ্রি হবো। আপনি ততক্ষণ থাকবেন?
- কেবল চারটা কেন, রাত দশটা হলেও সমস্যা নেই। আপনার সাথে কথা বলতেই ঢাকা থেকে এসেছি। অন্য কোনো কাজ নেই। আমি ঠিক এইখানে আপনার অপেক্ষায় থাকবো।
কবিতা আর দেরি করে না, আরও দ্রুত হাঁটতে থাকে। পেছন থেকে তাকে দু’চোখ ভরে দেখে চপল। ওড়নার এক প্রান্ত অন্য প্রান্তের চেয়ে ফুটখানেক নিচে। তা দেখে চপল মনে মনে হাসে। ওর ইচ্ছে করে কবিতাকে থামিয়ে বলে, 'কবিতা, ওড়নাটা ঠিকমতো পড়ুন। পেছন থেকে বড্ড বেখাপ্পা লাগছে।'
চপল ভাবে, মেডিকেলের পড়াশোনা এমনই। পড়াশোনার চাপে সদা তটস্থ থাকতে হয়। বেশভূষা দেখার সুযোগ নেই বলা চলে। তারপরও কবিতা যেটুকু হালকা সাজগোজ করেছে তা দেখেই চপল মুগ্ধ হয়। কবিতাকে নিয়ে অনেক নতুন চিন্তা তার মাথায় আসে। কবিতা আজ আর রোগা চেহারার সেই কিশোরী নেই; তার ভরাট বক্ষ, মধুময় কণ্ঠ, মোহনীয় চাহনি, ঘোষণা দেয় সে এক পরিপূর্ণ নারী এখন। হাঁটতে থাকা কবিতা দৃষ্টিসীমা পার হওয়ার আগেই একবার পেছন ফিরে তাকায়। চপল ঠিক নিশ্চিত নয় সে তাকে দেখতেই পেছনে ফিরে তাকাল কিনা। তারপরও সেভাবে ভাবতেই ভালো লাগে চপলের; ভাবেও তাই।
পাঁচ.
কথামতো ঠিক চারটা বাজে কবিতা আসতে পারেনি, এসেছে প্রায় পাঁচটায়। সে দেখে, অদূরেই ভাঙা সীমানা দেয়ালের উপর এক পা রেখে কোমরে হাত দিয়ে একদৃষ্টে পথপানে চেয়ে আছে চপল।
নানা চিন্তা মাথায় আসে কবিতার, আর ভাবে, চপলটা অনেক বদলেছে। বছর তিনেকের ভেতরে তার বেশভূষায় ব্যাপক পরিবর্তন। আগে চপলকে কেমন ভাঙাচোরা চেহারার কিশোরের মতো দেখাতো; মুখমণ্ডলে ছিল খোঁচাখোঁচা দাড়ি। চুলে চিরুনিও ঠিকমতো লাগাতো কিনা সন্দেহ। দেখতে একদমই ইম্প্রেসিভ ছিল না সে।
তবে তার লেখালেখি, উপস্থিত বক্তৃতা, কবিতা আবৃত্তি ছিল নজরকাড়া। কলেজে কত ছেলেই তো পড়তো। কবিতা লেখার অভ্যাস বা আগ্রহ না থাকলে এই চপলের সাথে কবিতার হয়তো পরিচয়ও হতো না। দেয়ালিকায় অনেকবারই দুজনের কবিতা এসেছে পাশাপাশি। একবার চপলের এক কবিতা, 'কোনো এক প্রকৃতিপ্রেমীর উদ্দেশ্যে,' বেশ সাড়া ফেলেছিল কলেজে। কানাঘুষাও শুরু হয়েছিল রীতিমতো।
চপলের কাছাকাছি হতেই কবিতা তার চারপাশ একবার দেখে নেয়। সহপাঠী বা খুব পরিচিত কেউ দেখছে কিনা সেটাই পরখ করে বারবার পাছে তাকে ঘিরে গুঞ্জন না উঠে। একসময় কাছাকাছি বসে তারা।
- কোথায় থাকেন এখন, এখানে কেন এসেছেন? - কবিতা-ই প্রথম কথা শুরু করে।
- আমি ঢাকায় থাকি। ঢাবি'তে আইন বিভাগে পড়ছি। তৃতীয় বর্ষে।
- বাহ্, বেশ তো! তা আমার খবর কীভাবে পেলেন?
- সে অনেক লম্বা কাহিনি, আরেকদিন বলবো।
- আরেকদিন! মানে, আপনি ওটা বলতে এখানে আরেকদিন আসবেন?
দুজনই হাসলো। কবিতার গালে টোল, চোখেমুখে এভারেস্ট জয়ের আনন্দ, যেন এতকাল চপলেরই অপেক্ষায় ছিল সে।
চপল বলল, আপনি যতবার চান ততবার আপনাদের সিলেটে আসবো, শিমুল-টিমুলের সমস্যা তো আর এখানে নেই। আপনাকে কিছু দরকারি কথা বলবো বলে এসেছি।
- কী কথা?
- আমার চিঠিগুলো আপনার কেমন লাগে?
- চিঠি? কোন চিঠি? - কবিতার চোখেমুখে রাজ্যের বিস্ময়!
- ওই যে আপনার মা একটা কপি পেয়েছিলেন, সেই চিঠি।
- ওহ মাই গড! এদ্দিন ধরে আপনিই কি তবে ওসব লিখে গেছেন? মার হাতেও ওই চিঠি গেছে?
গভীর আবেগে চপলের চোখজোড়া জলে ভারি হয়, চুপচাপ কবিতার দিকে তাকিয়ে থাকে।
কবিতা তার ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে একটি টিস্যু পেপার বের করে চপলের হাতে দেয়। গালের ওপর জল গড়িয়ে পড়েছে বুঝতে পেরে চপল খানিক লজ্জা পায়। তারপর চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়।
নীরবতা ভাঙায় কবিতা। বলে, 'এখানে রাস্তার পাশে না বসে চলেন কফিশপে গিয়ে বসি। কফিশপ খুব দূরে নয়। ওই যে মিষ্টির দোকানটা তার ঠিক পেছনেই। ওখানেই কথা হবে।' অতঃপর পাশাপাশি হাঁটতে থাকে দুজন।
- এখানে কোথায় উঠেছেন জানতে পারি?
- বন্ধুর বাসায়; সিলেটের বন্ধু, আমার সহপাঠী।
- আমার চিঠিগুলো পড়তে কেমন লাগে বলবেন? - কৌতূহলী মন চপলের।
- আপনার সব চিঠি আমি সাথে করে সিলেটে নিয়ে এসেছি; মা কোনটা পেলো ভাবছি।
- চিঠিগুলোর জন্য বাবা-মার বকুনি শুনতে হয়েছে নিশ্চয়ই!
- না না, তারা যে বিষয়টা জানতো তা আমি কেবলই বুঝলাম। কেউ আমাকে এতটুকুনও বুঝতে দেয়নি ওসব।
- তাই? চিঠিগুলোতে আমি কি বোঝাতে চেয়েছি বোঝা গেছে কি?
কবিতা নিরুত্তর থাকে। ভাবে, এ বড্ড ছেলেমানুষি প্রশ্ন। এখানে না বোঝার কী আছে? নিজেকে নিজেই মনে মনে প্রশ্ন করে, চপল কি তাকে এখনো কলেজ-ফার্স্ট ইয়ারের সেই কচি খুকিটি মনে করে? সে কি জানে না চিঠির অপেক্ষায় কিভাবে কাটতো কবিতার প্রতিটি ভোর?
কবিতার নীরবতা দেখে চপল অস্থির হয়। বলে, 'একটা কিছু বলুন কবিতা, আমাকে বকা দিলেও কিছু মনে করবো না। আপনি আপনাকে ভালোবাসি কবিতা। আই লাভ ইউ সো মাচ।'
- কবিতা মাথা নিচু করে বাঁ হাতের বৃদ্ধার নখাগ্র দিয়ে অনামিকার নখপালিশ খোঁচাতে থাকে। চপলকে নিয়ে ভাবনার অতল সাগরে ডুব দেয় সেভাবেই।
পিনপতন নীরবতা। খুব কাছ থেকেই চপল উপভোগ করে কবিতার মোহনীয় রূপ। বছর তিনেক আগে যখন সে কবিতাকে দেখেছিলো তখন তার উপরের দাঁতের ফালি কিছুটা উঁচা দেখাতো। এখন আর তেমনটি দেখায় না। মুখমণ্ডল ভরাট আর ঠোঁট যুগল স্ফীত হয়েছে। মুখাবয়বের সাথে মানাসই ভ্রু প্লাক করেছে, তার লম্বা গড়নের সাথে মানিয়ে গেছে হাঁটু ছুঁয়ে যাওয়া ঘন কালো চুল।
কপালের ঠিক উপরে থাকা অবাধ্য চুলগুচ্ছ পেঁচিয়ে টুইস্ট করে ক্লিপ দিয়ে আটকে দিয়েছে বাম দিকে। ঠোঁট যুগলে ওড়নার সাথে ম্যাচিং হালকা গোলাপি রং। উপরের ঠোঁটের বামদিকে ছোট্ট এক কালো তিল যা এর আগে কখনো চপলের চোখে পড়েনি। কবিতাকে দেখতে যে কী সুন্দর লাগছে তার তুলনা খুঁজে পায় না চপল।
চপল অনেক স্মার্ট ছেলে, নীরবতার মানে বুঝে সে। কবিতার মনের ভাব ঠিকই ধরতে পারে।
- আপনি তো আমার সিনিয়র, আমাকে তুমি করে বলা যায় না? - কথাগুলো বলে অর্থপূর্ণ মিষ্টি হাসি হাসে কবিতা।
- জুনিয়র হলেই তুমি বলতে হবে এমন কোন নিয়ম আছে কি? তাও তুমি করে বলতে পারি এক শর্তে। - চপল জবাব দেয়।
- শর্তটা শুনি...
- যদি আমাকেও তুমি করে বলো।
কথায় আর পেরে উঠে না কবিতা। সরবে হেসে বলে, তর্কে তুমি বরাবরই চ্যাম্পিয়ন, তোমাকে হারাতে পারলাম কই?
তারপর হাতে থাকা ব্যাগ খুলে একখণ্ড কাগজ নিয়ে তাতে কিছু একটা লিখে চপলের হাতে দেয় কবিতা।
হোস্টেলের রুম নাম্বারসহ ঠিকানা লেখা হয়েছে তাতে, শেষে একটা হার্ট-ইমোজি। কাগজটা চপলের হাতে গুঁজে দিয়ে মৃদুস্বরে বলে, এখন থেকে চিঠি লিখো এ ঠিকানায়।