বইমেলায় বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট প্রকাশকরা, আশীর্বাদ মেট্রোরেল
একেবারেই শেষ সময়ে চলে এসেছে অমর একুশে বইমেলা। বর্ধিত ২ দিন সময় বাড়ানো না হলেই আজই আনুষ্ঠানিকভাবে পর্দা নামার কথা ছিল বাঙালির প্রাণের এই বই উৎসবের। বৈশ্বিক করোনা মহামারি ও যানজট এবং অর্থনৈতিক মন্দার কারণে গত কয়েক বছর বইমেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের যে ভাটা পড়েছিল এবার মেট্রোরেলের কল্যাণে সেটি লাঘব হয়েছে। শুরু থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জমজমাট উপস্থিতিতে সরগরম ছিল বইমেলার প্রতিটি দিন।
প্রকাশকরা বলছেন, এবারের বইমেলার জন্য বড় আশীর্বাদ হয়ে এসেছে মেট্রোরেল। যার কারণে অন্য বছরের তুলনায় এবার মেলায় বেড়েছে মানুষের সমাগম। কারণ মেট্রারেলের কল্যাণে রাজধানীর উত্তরাসহ নানান জায়গায় থেকে মেলায় মানুষ এসেছে। সেটা অন্য সময় যানজটের ভয়ের কারণে মানুষ মেলায় আসতো না সাধারণত। যার ফলে, এবার মেলায় বিক্রি বেড়েছে অন্যান্য বছরের তুলনায় কয়েকগুণ।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন বইমেলা ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের শেষ দিন মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। স্কুল-কলেজ থেকে কর্মজীবী সবাই বিভিন্ন স্টলে ঘুরে নিজ-নিজ পছন্দের বই কিনছেন ও প্রিয়জনকে উপহার দিচ্ছেন। আর প্রকাশদের মুখে হাসি। আগামী শুক্র-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মানুষের ভিড় ও বিক্রি আরো বাড়বে বলেও প্রত্যাশা প্রকাশকদের।
ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক আদিত্য অন্তর বলেন, বৃহস্পতিবার দিন বইমেলা শেষ হয়েছে এর আগে এমনটা হয়নি। এবছর যেহেতু বৃহস্পতিবার দিন মেলা শেষ হওয়ার তারিখ ছিল, তাই শুরু থেকেই প্রকাশক ও পাঠকদের প্রত্যাশা ছিল যেন সময় দুই দিন বাড়ানো হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সময় বৃদ্ধি করেছে। এটি আমাদের জন্য খুবই ভালো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু শুক্র-শনিবার মেলায় মানুষের সমাগম বেশি হয়, আশা করি আমাদের বিক্রিও ভালো হবে এবং পাঠক যারা রয়েছে, তারাও ছুটির দিন হিসেবে বইমেলায় আসতে পারবে।
এ বছরের বইমেলায় বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবছর বইয়ের বেচাকেনা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। কারণ, গত কয়েক বছর ধরেই অর্থাৎ করোনার পর থেকে বইমেলা ওইভাবে জমে ওঠেনি। সেই বিবেচনায় এবছর শুরু থেকেই বইমেলা জমজমাট। আর বইয়ের প্রতিও মানুষের আগ্রহ রয়েছে। যার কারণে শুরু থেকেই পাঠক ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এখন কেউ যদি বলে থাকেন যে, এই বছর বইমেলায় বিক্রি কম হয়েছে, তাহলে আমি বলব তাদের বিক্রি করার মতো বইয়ের অভাব রয়েছে। খেয়াল করে দেখবেন, অন্যান্য বছর যেখানে মেলা শুরুর এক সপ্তাহ কিংবা দশ দিন পর বিক্রি শুরু হতো সেখানে এ বছর শুরু থেকেই বিক্রি শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন
ভালো বই উপহার দিলে ক্রেতাদের আগ্রহ আরো বাড়বে উল্লেখ করে আদিত্য অন্তর বলেন, আমরা গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করেছিলাম যে, মানুষজন বই থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এবারের বইমেলা দেখে অন্তত সেটি বলা যাবে না। আমি মনে করি প্রকাশকরা যদি ভালো বই উপহার দিতে পারে তাহলে মানুষ বইয়ের পাশে থাকার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় বলতে পারি, বিক্রি নিয়ে আমি অবশ্যই সন্তুষ্ট।
মেলার আয়োজনে বাংলা একাডেমির একক কার্যক্রম নিয়ে তিনি আরো বলেন, বাংলা একাডেমি আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। আমরা যেটি আশা করছিলাম যে, তারা সৃজনশীল কিছু উপহার দেবেন। কিন্তু মেলায় তার প্রতিফলন দেখতে পাইনি। আমাদের প্রত্যাশা ছিল হয়তো মেলার পরিবেশে একটু অন্যরকম হবে। অগোছালো পরিবেশ এবং ডায়াগ্রামটা বিশ্রি হয়েছে। আমরা মনে করি কর্তৃপক্ষ অন্তত একটি সুন্দর মেলার আয়োজন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
শব্দ শৈলীর প্রকাশক ইফতেখার আমিন মতে, মেট্রোরেল বইমেলার জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এর কারণেই শুরু থেকে পাঠক-দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। আর সময় ২দিন বাড়ানোর ফলেও সবার জন্য ভালো হয়েছে। শুক্র এবং শনিবার সরকারি ছুটির কারণে পাঠক দর্শনার্থীর সমাগম বেশি হয়, সেজন্য আমরা চাচ্ছিলাম কর্তৃপক্ষ যেন এই দুই দিন মেলার সময় বাড়িয়ে দেন।
তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি, বইমেলা আয়োজনের দায়িত্ব বাংলা একাডেমির নয়। সারা পৃথিবীতে এসব আয়োজন করে থাকে প্রকাশক সমিতি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বইমেলার আয়োজন করে প্রকাশক গিল্ড। আমার কাছে মনে হয়, বইমেলার আয়োজন করতে গিয়ে বাংলা একাডেমি সচরাচর গবেষণা বা অন্যান্য কাজে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া এবার কোনো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টকে দায়িত্ব না দেওয়ার কারণে অনেক ব্যাপারেই প্রকাশকদের আপত্তি রয়েছে। বইমেলায় প্রচুর ধুলাবালি।
আগে যেমন প্রতিদিন বইমেলায় পানি ছিটানো হতো এবার তেমনটি করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন এই প্রকাশক। বলেন, আবার বড় সমস্যা স্টল বিন্যাসেও। আমার মনে হয় এ বিষয়গুলো নিয়ে আরেকটু চিন্তা করা দরকার। বইমেলা সম্পন্ন করার জন্য আলাদাভাবে যদি আরো একটি কমিটি করা যায় তাহলে মনে হয় আরেকটু সমৃদ্ধ হবে।
করোনার পর এবারের বইমেলা ঘুরে দাঁড়ানোর বইমেলা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, অবশ্যই এটি আমাদের জন্য বড় পাওয়া যে অধিক সংখ্যক পাঠকের উপস্থিতি। এবার মেলাতে প্রথম থেকেই মানুষের উপস্থিতি অনেক বেশি। আমরা আগে প্রতিদিন পাঠক-দর্শনার্থী পেতাম না। এবার পাচ্ছি। তবে এই প্রজন্মকে পাঠক হিসেবে কতটা তৈরি করতে পেরেছি সেটিও ভেবে দেখার সময় এসেছে।
অন্যান্য প্রকাশকদের মতো মেলার স্টল বিন্যাস নিয়ে বাংলা একাডেমির অসন্তুষ্ট প্রজ্বলন প্রকাশের প্রকাশক আল-আমিন। তিনি বলেন, বড় বড় প্রকাশনীগুলোকে মাঝখানে রেখে অন্যান্যদের যদি ছড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে পাঠক শুধু একদিকেই ছুটেন। আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে, বড় প্রকাশনী গুলোর মাঝে মাঝে যেন ছোট প্রকাশনীগুলোও দিয়ে দেওয়া হয়। এতে করে সবাই সমানভাবে পাঠকের দেখা পাবেন।
অন্যান্য বারের তুলনায় এবার মেলায় বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট বলেও জানান আল আমিন।
প্রসঙ্গত, আজ বইমেলা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গত মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সময়সীমা দুই দিন বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী মেলা চলবে আগামী ২ মার্চ (শনিবার) পর্যন্ত।
এএইচআর/এসএম