বইমেলায় অরুণ কুমার বিশ্বাসের বই
অরুণ কুমার বিশ্বাস মূলত গোয়েন্দা লেখক। তিনি সাবেক নটর ডেমিয়ান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স, শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবনের সূচনা। পরে আন্তর্জাতিক মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স করেন লন্ডনে। এখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগে মাস্টার্স করছেন। পেশাগত (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) কাজের পাশাপাশি তিনি নিজেকে নানারকম সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত রেখেছেন।
আবৃত্তি, বিতর্ক, উপস্থাপনা, মোটিভেশনাল স্পিচ ছাপিয়ে তিনি পুরোদস্তুর লেখক। ডিটেকটিভ, অ্যাডভেঞ্চার, রম্য, ভুতুড়ে ও আধিভৌতিক, সবরকম লেখায় তিনি সিদ্ধহস্ত। তিনি মূলত গল্প বলতে ভালোবাসেন। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দেড়শ ছুঁইছুঁই।
এক নজরে বইমেলায় অরুণ কুমার বিশ্বাসের বই
ব্রাউন পেপার
অরুণ কুমার বিশ্বাস
জঁরা- ডিটেকটিভ
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স
প্রচ্ছদ : নিয়াজ চৌধুরী তুলি
মূল্য : ২৫০
একটি খুন এই অর্থে বীভৎস যে, ভিকটিমের গলা কাটা, খোলা দুটো চোখ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে যেন গিলে খাবে! বিছানায় শায়িত লাশ অথচ তার পায়ে জুতো, আর তার রক্তে পাওয়া যায় উঁচু মাত্রার অ্যালকোহল ও সিডেটিভ। আর খুনটা হয়েছে তার নিজে ঘরে, যেখানে একটা মানুষ সবচে বেশি সুরক্ষিত বলে মনে করা হয়। সদ্য খুন হওয়া রশিদ কোরেশির বহুমাত্রিক জীবন, যদিও তিনি মূলত ব্যবসাদার। মাটি কিনে ভরাট করে সেখানে বহুতল ভবন তুলে চড়া দামে বিক্রি করাই তার পেশা। এই কাজ করতে গিয়ে কত লোকের সঙ্গে যে তার শত্রুতা বা সখ্য তৈরি হয়!
এই কেসের আইও ইন্সপেক্টর মামুনের সঙ্গে একসাথে কাজ করেন ডিটেকটিভ অলোকেশ রয় ও তার টিম। কোরেশির খুনের মোটিভ খুঁজতে গিয়ে রীতিমতো চমকে ওঠেন অলোকেশ। তিনি ভেবে পান না, কে তার শত্রু নয়! ইট-বালুর কারবারি নাসির থেকে শুরু করে, টং-নুরু, ভাড়াটে জামান, দারোয়ান বান্টি, বন্ধু-পত্নী জেসিকা, এমন কি তার ড্রাইভারও তাকে মারতে চায়! বুঝতেই পারছেন, কেমন গুণধর লোক এই রশিদ কোরেশি! খুনের ‘মোটিভ ও মোডাস অপারেন্ডি’ ঘেঁটে হতবাক গোয়েন্দা অলোকেশ। সহযোগী উর্বী নানান জায়গায় হানা দিয়ে কিছু সূত্র তুলে আনে, রিপোর্টার শুভ জান-প্রাণ দিয়ে খুনের আলামত খোঁজে, কিন্তু না প্রকৃত খুনির সন্ধান কিছুতেই মেলে না।
অবশেষে এডগার অ্যালান পো’র সূত্র ‘সবচে বিশ্বস্ত যে, তাকেই ধরো’ তাকে খুনিতক পৌঁছে দেয়। ল্যাভেন্ডার ব্রাউন পেপার সুশ্রী সুন্দর মুখের আড়ালে একটি কদর্য চেহারা চোখে পড়ে! সত্যি, বিশ্বাস করতে পারেন না অলোকেশ, এই তাহলে খুনি! এত মিষ্টি দেখতে!
মনে পাপ ছিল
অরুণ কুমার বিশ্বাস
জঁরা- উপন্যাস
অন্যপ্রকাশ
প্রচ্ছদ : আনিসুজ্জামান সোহেল
মূল্য : ৩৫০
রমিজ মিয়া মিডিওকার লোক, সে ছাপোষা মানুষ। কিন্তু তার স্বপ্ন দেখার অবধি নেই। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর জীবনটাকে সে ছেনেকুটে দেখেছে কিন্তু রহস্যের তল খুঁজে পায়নি। চলার পথে চড়াই-উতরাই ছিল, পিচ্ছিল বন্ধুর পথে হেঁটেছে রমিজ, তার মনে পাপও ছিল। স্ত্রী রোকেয়ার সঙ্গে অমসৃণ অসম্পৃক্ত সম্পর্ক তাকে ক্রমশ বিপথে ঠেলে দেয়, যোগ হয় অফিসের বস আজিজ মুঘনির দুর্বিনীত আচরণ। সহকর্মী কাকলি একটু ভরসা দেয় তাকে, ওরা ঘনিষ্ঠ হয়। ওর মাতাল স্বামী কাকলির এই দ্বিচারিতা কি মেনে নেবে! রহস্যজনক ব্যাপার হল, কাকলির স্বামী রহমত সব জেনেবুঝেও বেশ চুপ করে থাকে। সে জেগে ঘুমায়, অথবা কাকলির এই বন্যপ্রেম তার ইচ্ছাতেই বরং প্রশ্রয় পায়।
সময় গড়ায়। এই গল্পের কুশীলব বুঝে যায় এর নাম ভালোবাসা নয়, মন্দবাসা। এই তো জীবন! খুব বেশিকিছু চেয়ে কী লাভ হয় বলুন! খাবেন তো সেই একপ্লেট, বাঁচবেনও একজীবন। মিছে এমন তাড়াহুড়ো কীসের! কেন এই ব্যাকুলতা! কিসের জন্যে!
কর্পোরেট প্রেম
অরুণ কুমার বিশ্বাস
জঁরা- রম্য উপন্যাস
অনিন্দ্য প্রকাশ
প্রচ্ছদ : নিয়াজ চৌধুরী তুলি
মূল্য : ২৫০
শাহেদ ও শাওলির দাম্পত্যের শুরুটাই বেশ গোলমেলে। ওরা ভেবেছিল প্রেম-ভালবাসা আদতে কিছু নয়, টাকা ও ক্ষমতা দুজনের সম্পর্কে জোশ এনে দেবে। ফেসবুকে অঢেল সময় ঢালা শাওলির জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। রাত জেগে মেসেঞ্জারে ‘টুঙ-টুঙ’ শাহেদের সঙ্গে ক্রমশ তার দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়। শাহেদও স্ত্রীর দিকে ফিরে তাকায় না। করপোরেট রাজ্যে সে বরং একাধিপত্য চায়। ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে রাকা-রোহানের কুসুমগরম প্রেম সহসাই টলে যায়। এর পেছনে শাওলির অবদান ছিল। বলতে নেই, ফিনফিনে শিফনে সে দুর্দান্ত। ওই ফিগার দেখে মাথা ঘোরে রোহানের। বুঝতে পারে না যে, মোহ আর প্রেম এক নয়। শাওলি তাকে সাময়িক উত্তেজনা হয়তো দেবে, কিন্তু কখনোই স্বস্তি দেবে না। আবার রাকার সাথে বান্ধবী শিখার সম্বন্ধ নিয়েও গুঞ্জন ওঠে। সোমত্ত দুটো মেয়ের মাঝে এত ঘনিষ্ঠতা কীসের! ওরা নাকি একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কীÑকী সব করেও! এভাবেই ক্রমশ গড়ে ওঠে রম্যধাঁচে লেখা এই উপন্যাসের কোমল শরীর। অবশেষে প্রেম আসে, কোজাগরী পূর্ণিমার স্বচ্ছতোয়া আলোকচ্ছটার মতো।
ভয়াল দ্বীপের রহস্য
অরুণ কুমার বিশ্বাস
জঁরা- কিশোর অ্যাডভেঞ্চার
বাতিঘর
প্রচ্ছদ : নিয়াজ চৌধুরী তুলি
মূল্য : ৩৩০
ওই যে, ওই তো সবুজ ভ্যানিটি! ফলো কর! পালাতে দিস না। চেঁচিয়ে বলল নয়ন। ডানহাতের বুড়োআঙুল নীচে নামিয়ে ধ্রুব ইশারায় জানান দেয়, ওকে বস। গ্রিন লেডিকে আমি দেখছি। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপে এসে ফেঁসে যায় ওরা- কাজল, নয়ন আর ধ্রুব। মাফিয়া গিনির পাল্লায় পড়ে ওদের আনন্দ-আয়োজন সব মাটি। একের পর এক খুন ওদের বুকে ভয় ধরিয়ে দেয়। মাঝপথে যোগ দেন গুপি দারোগা। উসুর খুনি ধরতে গিয়ে দা-য়ের কোপ খায় হারু। ভয়াল মুখোশনাচ আর বিষাক্ত পোড়াগন্ধ ঘটনায় নতুন চমক জুড়ে দেয়। জ্যাকিদাদু তক্ষুণি ওদের দ্বীপ ছাড়তে বলে, কিন্তু ওরা শপথ নেয়- খুনের কিনারা না করে কোথাও যাবে না। শেষতক ওরা পারবে কি গিনিসোনার ভয়ঙ্কর রহস্য উদ্ঘাটন করতে!
স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কী করবেন, কীভাবে করবেন!
ডা. তপতী মল। অরুণ কুমার বিশ্বাস
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স
প্রচ্ছদ : প্রসূন হালদার
মূল্য : ২৩০
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ বেশ পরিচিত একটি শব্দ। সাম্প্রতিক সময়ে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যিনি জীবনের কোনো এক পর্যায়ে মানসিক চাপের শিকার হননি। যার মন আছে তার মনে চোট লাগতেই পারে। শুরুতে টুকটাক মন খারাপ, হতাশা কিংবা অবসাদ, কখনো বা রাগ ও সাময়িক উত্তেজনা এভাবেই স্ট্রেসের শুরু। ‘অ্যাকিউট স্ট্রেস’ মোকাবেলা করতে পারলে তা স্থায়ী হয় না। সামান্য কিছু শারীরিক অসুবিধা বা অস্বস্তির মধ্যেই তা সীমিত থাকে। কিন্তু শুরুটা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা টুকটাক মন খারাপের অনুভূতি উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে, তখন দেখা দেয় ‘এপিসোডিক অ্যাকিউট স্ট্রেস’। স্ট্রেসের এই অভিঘাত কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে না, গভীরভাবে চেপে বসে মনের উপর। হার্টবিট বাড়ে, বাড়ে রক্তচাপ, ইনসমনিয়া বা ঘুমের সমস্যা তৈরি হয়। মনের উপরেও নিয়ন্ত্রণ কমতে থাকে, ফলে মানসিক চাপের যে অধ্যায় সূচিত হয় তার নাম ‘ক্রনিক স্ট্রেস’, যা কিনা স্ট্রেসের থার্ড স্টেজ বা জটিলতর মানসিক চাপ মর্মে বিবেচিত হয়।
আলোচ্য বইটিতে সহজ ভাষায় স্ট্রেস কী এবং কেন, মনকে কীভাবে চাপমুক্ত রাখা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বইটি পড়ে আপনারা মানসিক চাপের কারণ এবং তার রকমসকম বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাবেন। তবে এখানে স্ট্রেস বা মানসিক চাপের কোনো ওষুধ বাতলানো হয়নি। তবে মনের চাপ বাড়াবাড়ি রকম বেড়ে গেলে অতি অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
প্রয়োজনে মনোবিদের সঙ্গেও কনসাল্ট করতে পারেন। তারা হয়তো আপনার পরিস্থিতি বিবেচনায় করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিতে পারবেন। বলে রাখা ভালো, স্ট্রেস কোনো রোগ নয়, তবে স্ট্রেসের কারণে কিন্তু অনেক রকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। মানসিক চাপ সময়ে সামাল দিতে না পারলে তা আপনাকে ধ্বংসের দোরগোড়ায় নিয়ে দাঁড় করাতে পারে। তাই টুকটাক মন খারাপকেও উপেক্ষা করা ঠিক নয়। নিজেকে জানুন, বুঝুন, মনের সঙ্গে একান্তে বসে বোঝাপড়া করুন, ভাল খান, নির্ভেজাল ঘুমান এবং পর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করুন, আর পরম বন্ধু হিসেবে পাঞ্জেরী থেকে প্রকাশিত এই বইটিকে হাতের কাছে রাখুন, দেখবেন মনের চাপ অনেকটাই সেরে গেছে।
এমএসএ