ডায়াবেটিস হলে যেকোনো অসুখ সারানো কঠিন হয় কেন?
গত কয়েক দশকে ডায়াবেটিস একটি পরিচিত রোগ হয়ে ওঠার কারণে আজকাল প্রায় সবাই এটিকে হালকাভাবে নিতে শুরু করেছে। ডায়াবেটিস শুধুমাত্র রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় না, নিয়ন্ত্রণ না করা হলে অন্যান্য অঙ্গেরও ক্ষতি করে। বছরের পর বছর ধরে এটি কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা এবং স্নায়ুর ক্ষতির দীর্ঘস্থায়ী পথ করে দিতে পারে। অনেকেই জানেন না যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে ঠান্ডা, ফ্লু এবং অন্যান্য সাধারণ সংক্রমণের মতো ছোটোখাটো অসুস্থতা থেকে সেরে ওঠাও কঠিন হতে পারে।
ডায়াবেটিস হলে অসুস্থতা থেকে সেরে ওঠা কঠিন হয় কেন?
যেকোনো অসুস্থতার সঙ্গে মোকাবিলা করার সময় আমাদের শরীর আরও বেশি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা তৈরি করে, যা ডায়াবেটিস-সম্পর্কিত জটিলতার কারণ হতে পারে, যেমন ডায়াবেটিক কেটোঅ্যাসিডোসিস (DKA) এবং হাইপারসমোলার হাইপারগ্লাইসেমিক সিন্ড্রোম (HHS)। এটি রোগের সঙ্গে লড়াই করা এবং দ্রুত সুস্থ হওয়ার বিষয়টি কঠিন করে তোলে।
রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় কেন?
ডায়াবেটিসে ভুগলে বিভিন্ন রোগ রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন একজন ডায়াবেটিস রোগী অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন তাদের শরীর চাপের প্রতিক্রিয়ায় কাউন্টার-নিয়ন্ত্রক হরমোন তৈরি করে। অসুস্থ রোগীদের চিকিত্সার সময় স্টেরয়েডের মতো কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এই দুটি জিনিসই রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। এই অবস্থাটি ইনসুলিনের চাহিদাও বাড়িয়ে দেয়, যা পূরণ করা আমাদের শরীরের জন্য কঠিন মনে হয়। ফলস্বরূপ, এটি জ্বালানী হিসাবে চর্বি পোড়ানো শুরু করে এবং কিটোন তৈরি করে, যা রক্তকে উচ্চ পরিমাণে বিষাক্ত করে তুলতে পারে।
রক্তে শর্করার মাত্রা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?
যারা ডায়াবেটিসের প্রাথমিক পর্যায়ে আছেন তারা একটি সুশৃঙ্খল খাদ্যতালিকা মেনে চললে এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। ব্যবস্থাপনার ৪টি স্তম্ভ রয়েছে - খাদ্য, ব্যায়াম, ওষুধ এবং শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা। একটি সুষম খাদ্যতালিকা মেনে চলতে হবে যাতে প্রোটিন এবং ফাইবার বেশি থাকে কিন্তু কার্বোহাইড্রেট এবং চর্বি কম থাকে।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে কী খাওয়া উচিত?
একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাদ্য রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুষম খাদ্য তাদের দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে এবং তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই, ছোটখাটো সর্দি হলে কিংবা যেকোনো ধরনের অসুস্থতায় ভুগলে রক্তে শর্করার মাত্রার বাড়তি যত্ন নিতে হবে।
একটি সুষম খাদ্য ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো কাজ করে এবং এটি দীর্ঘস্থায়ী। বহু বছর ধরে একই রুটিন অনুসরণ করা কঠিন। তাই এ ধরনের খাবারের পরিকল্পনা এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। ডায়াবেটিস রোগীকে চিনি, গুড়, মধু এবং মিহি আটা থেকে তৈরি খাবার যেমন পাউরুটি এবং অন্যান্য বেকারি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এমনকি তৈলাক্ত খাবার খাওয়াও কমাতে হবে কারণ এগুলো শরীরের চর্বি বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।
সামগ্রিক ক্যালোরি গ্রহণের ওপর ফোকাস করা অত্যাবশ্যক, যা একজন রোগীর শরীরের ওজন এবং কার্যকলাপের স্তর অনুসারে আলাদা হয়ে থাকে। সাধারণভাবে রোগীদের শক্তি-ঘন খাবার, ভাজা আইটেম, ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলতে হবে। এর বদলে উচ্চ ফাইবার এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত।
কখন চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস রোগীর সাধারণভাবে প্রতি ৩-৬ মাস পরপর বা তাদের সামগ্রিক ক্লিনিকাল প্রোফাইলের উপর ভিত্তি করে নিজ নিজ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অনুসরণ করা উচিত। এছাড়া গর্ভাবস্থার পরিকল্পনা করার আগে, গর্ভাবস্থায়, কোনো পরিকল্পিত অস্ত্রোপচারের আগে বা অন্যান্য ওষুধ গ্রহণ যা তাদের গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করতে পারে- এমন ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে