পেটের অসুখ ভালো করার ঘরোয়া উপায়
আলাদা করে যত্ন না নেওয়া হলেও পেটের কাজ কিন্তু কম নয়। আবার একটি অসচেতন হলেই পেটের অসুখ হতে পারে। বিশেষ করে এমন কোনো খাবার খেলেন যা আপনার জন্য সহায়ক নয়, তারপর দেখা দিতে পারে পেটের সমস্যা। পেটের অসুখ বলতে সাধারণত পাতলা পায়খানার সমস্যাকে বোঝানো হয়। এসময় স্বাভাবিক পায়খানা না হলে পানির মতো তরল পায়খানা হয়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বারবার মলত্যাগ করতে হয়।
পেটের অসুখকে লুজ মোশন বা ডায়রিয়াও বলা হয়ে থাকে। এর কারণে শরীর থেকে সমস্ত পানি বের হয়ে যেতে থাকে। ফলে রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পেটের অসুখ দুই-এক দিন স্থায়ী হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। এই অসুখ থেকে মুক্তি পেতে কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চলতে পারেন। সমস্যা যদি গুরুতর মনে হয় তবে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে সামাল দেওয়ার জন্য ঘরোয়া উপায়গুলো জেনে রাখা জরুরি।
পেটের অসুখ কেন হয়?
স্ট্যাফিলোকক্কাস ও এসচেরিচিয়া কোলি ব্যাক্টেরিয়া এবং ভাইরাসের সংস্পর্শে এলে পেটের অসুখের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও দূষিত এবং অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার, জাঙ্কফুড ও অ্যালকোহল গ্রহণের কারণে হতে পারে। ফ্লু, নরোভাইরাস বা রোটাভাইরাসের মতো ভাইরাসের কারণেও পেট খারাপ হতে পারে। শিশুর ক্ষেত্রে পেট খারাপের প্রধাণ কারণ হিসেবে রোটাভাইরাসকেই দায়ী করা হয়। অনেক সময় পানিতে থাকা পরজীবীর সংক্রমণে হতে পারে। যেসব ওষুধে ম্যাগনেসিয়াম থাকে সেগুলো সেবনের কারণেও হতে পারে। যেসব খাবার খেলে হজমে সমস্যা হয় সেগুলো খেলেও হতে পারে পেটের অসুখ।
পেটের অসুখের লক্ষণ
পেটের অসুখের লক্ষণ হলো পেটে খিঁচুনিসহ ব্যথা, বারবার মলত্যাগ করা, অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যপ্রক্রিয়া দূর্বল হয়ে যাওয়া। ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার কারণে হলে জ্বর, সর্দি, রক্তাক্ত মলও নির্গত হতে পারে।
ঘরোয়া উপায়ে পেট খারাপ সারাবেন যেভাবে
পেট খারাপের সমস্যায় শুরু থেকে প্রতিকারের চেষ্টা করলে বেশিরভাগ সময় দ্রুতই সেরে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওষুধ খেলে পেটের সমস্যা ভালো হয়ে যায়। তবে সেক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। সেসব সমস্যা এড়াতে ঘরোয়া উপায় বেছে নেওয়াই উত্তম। জেনে নিন কোন ঘরোয়া উপায়গুলো এক্ষেত্রে কার্যকরী-
ডাবের পানি পান করুন
পেটের অসুখ সারাতে দিনে ১-২ গ্লাস ডাবের পানি পান করুন। এক সপ্তাহ ধরে এভাবে পান করতে হবে। ঘরোয়া উপায়ে পেটের অসুখ কমাতে দারুণভাবে সাহায্য করে ডাবের পানি। পেটের অসুখ দেখা দিলে শরীরে শর্করার ঘাটতি তৈরি হয়। সেই ঘাটতি পূরণে কাজ করে ডাবের পানি। ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, ডাবের পানি গ্লুকোজ ইলেক্ট্রোলাইট দ্রবণ আকারে পেটের অসুখ নিরাময় করে থাকে। তবে পেটের অসুখের পাশাপাশি কিডনির সমস্যা থাকলে সেক্ষেত্রে ডাবের পানি পান করতে নিষেধ করা হয়।
পেটের অসুখ সারাবে দই
খাবার খাওয়ার পর একবাটি দই খেতে পারেন। প্রতিদিন দুইবার একবাটি করে দই খাবেন। পেটের অসুখ সারাতে এটি বেশ কার্যকরী। দইয়ে থাকা ব্যাক্টেরিয়া অন্ত্র সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে থাকে। এনসিবিআই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গবেষণা সূত্রে জানা যায়, দইয়ে আছে প্রোবায়োটিক ল্যাক্টিক অ্যাসিড ব্যাক্টেরিয়া (ল্যাক্টোবাসিলি)। উপকারী এই ব্যাক্টেরিয়া পেটের অসুখ সৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়া নির্মূল করে।
জিরা ভেজানো পানি পান করুন
একগ্লাস পানিতে এক চা চামচ জিরা ভিজিয়ে দশ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এরপর পানিটুকু ছেঁকে নিয়ে তা ঠান্ডা করে পান করতে হবে। এই পানীয় অল্প অল্প করে দিনে তিন-চারবার পান করুন। পেটের অসুখ নিরাময়ে জিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও হজমশক্তি উন্নত করে। নিয়মিত জিরা ভেজানো পানি খেলে তা পেটের অসুখ পুরোপুরি দূর করতে সাহায্য করে। তবে পরিমাণে খুব বেশি খাওয়া যাবে না।
লেবুর রসও কার্যকরী
একগ্লাস পানিতে অর্ধেকটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। প্রয়োজনে সামান্য চিনি মেশাতে পারেন। দুই ঘণ্টা পরপর এই পানীয় তৈরি করে পান করে নিন। পেটের অসুখ প্রতিরোধে লেবুর রস বেশ কার্যকরী ও জনপ্রিয় উপায়। লেবুর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যালকেমিক বৈশিষ্ট্য পেটে অসুখ সৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়া নির্মূলে সাহায্য করে।
আদা খাবেন যে কারণে
আধা চামচ আদার রস ও আধা চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। দিনে দুই-তিনবার এটি পান করতে হবে। পেটের অসুখ সারাতে আদা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। উপকারী এই ভেষজ ব্যাক্টেরিয়া নাশক এবং অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যযুক্ত। আদা পরিপাকতন্ত্র এবং অন্ত্রের সংক্রমণ কমিয়ে দিতে পারে সহজেই। পাশাপাশি এটি হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও সারিয়ে তোলে।