আপনি কি পরনির্ভরশীল? মিলিয়ে নিন
সম্পর্ক মানেই একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকা। ভালো সময়ের পাশাপাশি মন্দ সময়েও পাশে থাকা। যেকোনো কথা নির্ভয়ে বলতে পারা, যেকোনো আবদার করতে পারার নামই সম্পর্ক। কিন্তু সবকিছু সীমার মধ্যে থাকাই সুন্দর। এমন যদি হয় যে আপনি তাকে ছাড়া কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারছেন না, আপনার প্রতিটি পদক্ষেপে তাকেই প্রয়োজন হলে বুঝবেন আপনি একজন পরনির্ভরশীল মানুষ হতে শুরু করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একে-অপরের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীল হলে তাতে সম্পর্কের আসল আনন্দটাই নষ্ট হয়ে যায়। কারণ আপনার কাছে যা নির্ভরশীলতা, অপরজনের কাছে তা-ই বাড়তি দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে একটা সময় আপনাকে তার বোঝা মনে হতে পারে। জন্ম নিতে পারে বিরক্তি। ফলে অশান্তি বাড়ে, শুরু হয় ঝগড়াঝাটি। সম্পর্কে শুরু হয় টানাপোড়েন। তাই সঙ্গীকে ভালোবেসে তার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হওয়া চলবে না। কীভাবে বুঝবেন যে আপনি পরনির্ভরশীল হতে শুরু করেছেন? চলুন জেনে নেওয়া যাক-
সে যেমন থাকে, আপনিও তেমন থাকেন
আপনার যেকোনো অনুভূতি নির্ভর করে সঙ্গীর মুডের ওপর। সে খুশি থাকলে আপনিও খুশি, সে যদি মুখ গোমড়া করে বসে থাকে তবে আপনারও মুখ গোমড়া হয়ে যায়। এসব লক্ষণ মোটেই স্বাভাবিক নয়।
দুজন মানুষের সমস্ত ভালোলাগা-মন্দলাগা মিলবে না। কোনো বিষয়ে মন খারাপ হলে তা সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ করবেন। সঙ্গীর মুডের ওপর ভরসা করে থাকব্নে না। সব মানুষের মতো আপনারও নিজস্বতা রয়েছে। আর সেই অস্তিত্ব কোনোভাবেই হারাতে দেবেন না। নিজের মতো করে বাঁচতে শিখতে হবে।
তার মুখ গোমড়া দেখলেই আপনারও মুখ গোমড়া করে বসে থাকার দরকার নেই। এর বদলে তাকে এই পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার উপায় বলুন। তার জন্য এমনকিছু করতে পারেন যাতে তার মুখে হাসি ফোটে। এতে দুজনেই নিজস্বতা নিয়ে বাঁচতে পারবেন। সম্পর্কও পাবে ভিন্ন মাত্রা।
আর্থিকভাবে সাবলম্বী হতে চান না
এই স্বভাব বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েদের দেখা যায়। স্বামী যদি মোটা অংকের টাকা উপার্জন করে তখন আর স্ত্রী কোনো কাজ করতে চায় না। স্বামীর ভালো আয় আছে বলেই নিজে অকর্মণ্য থাকাটাও বেমানান। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজের আর্থিক স্বাধীনতার কথাটাও ভাবতে হবে।
আপনার যদি যোগ্যতা থাকে তবে নিজেই কিছু একটা করার চেষ্টা করুন। তাতে নিজের একটি পরিচয় তৈরি হবে। সুযোগ থাকতেও পরনির্ভরশীল হয়ে থাকা নিশ্চয়ই কাজের কথা নয়। বরং আর্থিকভাবে দুজনেই স্বচ্ছল থাকলে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটাও সহজ ও সুন্দর হবে।
একা কোনো কাজই করতে না পারলে
ব্যাংকের কাজ হোক কিংবা বাজার করা, সবকিছুতেই তার সঙ্গে জুড়ে থাকেন? এমনটা হলে দুজনেরই সময় নষ্ট হবে। বরং কিছু কাজ ছাড়া অন্য সব কাজ দুজনে ভাগ করে নিন। তাতে দুজনেরই সময়টা কাজে লাগবে, বাঁচবেও অনেকটা সময়। সবকিছুতেই এভাবে লেপ্টে থাকাটা পরনির্ভরশীলতার অন্যতম উদাহরণ।
আপনি যদি অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তবে তা একটা সময় আপনার আত্মবিশ্বাস একেবারে ভেঙে ফেলবে। তাই নিজস্বতা বজায় রাখতে বলুন কিংবা আত্মবিশ্বাস বজায় রাখতে, পরনির্ভরশীলতা থেকে দূরে থাকুন। নয়তো ভবিষ্যতে সমস্যা বাড়তেই থাকবে।
ছোটখাটো কোনো সিদ্ধান্তও নিজে নিতে পারেন না
এটি ঠিক যে দুজন মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে সেই সংসার বেশি সুখের হয়। তার মানে কিন্তু এই নয় যে, প্রত্যেক ছোটখাট সিদ্ধান্তও তাকে জানিয়ে তারপর নিতে হবে। বরং আপনার কাছে যেটি ভালো এবং ঠিক মনে হয়, সেটি করতে পারেন। সবকিছুতে তার মতামত নিতে শুরু করলে সম্পর্কে এক ধরনের দূরত্ব সৃষ্টি হতে থাকবে।
নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে না পারার মানে হলো আপনার বয়স বাড়লেও মানসিক পরিপক্কতা আসেনি। আপনি যদি নিজেই নিজের ওপর আস্থা রাখতে না পারেন তবে আপনার সঙ্গী কী করে আপনার ওপর আস্থা রাখবে? তাই নিজের ও সম্পর্কের ভালো চাইলে পরনির্ভরশীলতার স্বভাব কমিয়ে আনুন।