বাবার জন্য ভালোবাসা
বাবাকে ভালোবাসতে আবার দিবস লাগে না-কি! বাবা দিবস এলেই অনেকে এভাবে তাদের মত ব্যক্ত করেন। বাবা কিংবা মাকে ভালোবাসতে আলাদা কোনো দিবসের প্রয়োজন হয় না, একথা শতভাগ সত্যি। কিন্তু তাদের মনে করিয়ে দেওয়া যে- ‘তোমরা আমাদের জন্য বিশেষ’, এমন একটি দিন হলে মন্দ কী! এমনিতেও আমরা বন্ধু-আড্ডা-ঘুরে বেড়ানোতে যতখানি সময় দিই, মা কিংবা বাবার জন্য ঠিক ততখানি রাখি না। তারা তো রয়েছেনই, ভালোবাসার কথা মুখে কেন বলতে হবে- এমন অনেক দ্বিধা কিংবা বাধা আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। আজ হলো সেই দিন, যেদিন বাবাকে নিঃসংকোচে বলা যায়- ‘বাবা তোমাকে ভালোবাসি’।
যখন আপনি ছোট্টটি, আপনাকে কাঁধে করে পৃথিবী দেখা শিখিয়েছেন যে মানুষ, তিনি বাবা। বাবা আপনাকে শূন্যে ছুঁড়ে দিলেও আপনি নির্ভয়ে হেসেছেন। কারণ আপনি জানেন, আপনি পড়ে যাবেন না। আপনাকে আগলে রাখার জন্য রয়েছেন বাবা নামক আশ্রয়স্থল। আমাদের ভালো এবং মন্দের সমস্ত দায়িত্ব যিনি আজীবন নিজে বুক পেতে নিয়েছেন, তার ঋণের সিঁকিভাগও কখনো শোধ করা সম্ভব নয়। এ এক অদ্ভুত ঋণের বোঝা আমরা ঘাড়ে করে ঘুরে বেড়াই আজীবন। জন্ম নেয়ার ঋণ, বেড়ে ওঠার ঋণ, ভালোবাসার ঋণ। যে ঋণ কখনো শোধ হওয়ার নয়, তা শোধ করার চেষ্টা না করাই উত্তম। কিন্তু ভালোবাসার বদলে ভালোবাসা তো দেওয়া যায়। যদিও বাবাকে আমরা বাবার মতো আগলে রাখতে পারি না, কিন্তু তাকে যে ভালোবাসি সেকথা তো মুখ ফুটে জানান দেওয়া যায়!
একটু খেয়াল করে দেখুন, পৃথিবীতে কোন কোন মানুষ সারাদিন খেটেখুঁটে আপনার জন্য খাবার জোগার করে আনেন। কোন মানুষটি আপনার একটু ভালো থাকার জন্য দিন-রাত এক করে পরিশ্রম করেন। কোন মানুষটি নিজে পুরোনো পোশাকে উৎসবের দিনটি কাটিয়ে আপনাকে দু’টি ভালো পোশাক কিনে দেন। এর উত্তরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও বাবা ছাড়া আর কারও নাম আপনি পাবেন না সম্ভবত। মা এখানে আরেকটি উত্তর হতে পারে তবে তিনি বাবার প্রতিদ্বন্দ্বী নন। বরং দু’জনের সম্মিলিত ভালোবাসার ফলেই আপনি ধীরে ধীরে মানুষ হয়ে ওঠেন।
পৃথিবীর আলো-বাতাসে হেসে-খেলে বেড়ানোর অধিকার যারা এনে দিয়েছেন, আমাদের পৃথিবীর বিরাট অংশজুড়ে তারাই থাকুক না! অনেক সময় বড় হতে হতে বাবা কিংবা মায়ের সঙ্গে আমাদের বন্ধন আলগা হতে থাকে যেন। এই উদাসীনতা অবশ্য এক পাক্ষিক। এবং বলা বাহুল্য, এই দায়িত্বহীনতা কেবল সন্তানের পক্ষ থেকেই দেখা যায়। যে কারণে বৃদ্ধ বয়সটা নিঃসঙ্গ কাটে বাবা নামের মানুষটার। তার সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলেন তো? গল্প করেন তো? তিনি কী বলতে চান, তার মন কী চায় তা জানছেন তো? না-কি পুরোনো সব আসবাবের মতোই ঘরের এককোণে ফেলে রাখেন তাকে?
এটি ঠিক যে, পারিপার্শ্বিক নানা ব্যস্ততায় আমরা অনেকখানি সময় বাবার জন্য রাখতে পারি না। কিন্তু রাখার চেষ্টা তো করা যায়। কাজের ফাঁকে ফোন করে তার খোঁজ নেওয়া, অবসর সময়টা তার সঙ্গে কাটানো, দূরে থাকলে ভিডিও কলে একটু হলেও কথা বলা এসব অভ্যাস ধরে রাখছেন তো? না-কি ফেলে রাখছেন অবহেলায়? আপনার দ্রুততম সময় চলছে আপন গতিতে, অপরদিকে বাবার সময় কাটছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে পারছেন তো? আপনি সন্তান। বাবার রক্ত-ঘাম-পরিশ্রমের ফল ভোগ করে চলেছেন, কিন্তু তার প্রতি উদাসীন থেকে যাচ্ছেন, এর অর্থ দাঁড়ায় আপনি দায়িত্বহীন। নিজ দায়িত্বটুকু পালন করে মানুষ পরিচয়ে পরিচিত হোন। বাবাকে ভালোবাসি বলতে না পারলেও তাকে ভালো রাখার দায়িত্বটুকু নিন।
আপনি বাবা দিবস পালন করুন আর না-ই করুন, তার প্রতি ভালোবাসায় ঘাটতি তৈরি না হোক। তার প্রিয় খাবারটি তার সামনে থাকুক, প্রিয় কাজটি করার সুযোগ তাকে দিন, প্রিয় মানুষগুলোর মুখ দেখার সৌভাগ্য তার হোক। বড় হতে হতে আপনিও একজন বাবা হয়ে উঠুন আর বাবা হোক আপনার আরেক সন্তান। তাকে অভয় দিন। নির্ভরতা ও ভালোবাসার নিশ্চয়তা দিন। আপনার প্রতি প্রার্থনায় তিনি থাকুন। তাকে একা না রাখুন। আপনি তার সন্তান থেকে সম্পদ হয়ে উঠুন। যেন তিনি আর কোনোদিন ভালোবাসাহীনতায় না ভোগেন। বাবার কাঁধে হাত রেখে বলুন- ‘আমি আছি’। বিনিময়ে তার হাসি আপনাকে বিশ্বজয়ের নিশানা দেখাবে!
এইচএন/এএ