ধূমপান ছাড়তে চাইলে যা করবেন
ধূমপান ক্ষতিকর সেকথা সবারই জানা। তবু মানুষ জেনেশুনেই বিষপান করে। ধূমপান হতে পারে মৃত্যুর কারণ। এর কারণে এমন অনেক অসুখ দেখা দেয় যা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা জানাচ্ছে হৃদরোগের জন্য ৫৪ ভাগ ক্ষেত্রেই দায়ী হলো ধূমপান। গবেষনায় দেখা গেছে, সাধারণের তুলনায় ধূমপায়ীদের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে ছয় গুণ বেশি। হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে সিগারেট খেতে গিয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনাও কম নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও জানিয়েছে, অন্যদের তুলনায় ধূমপায়ীদের করোনায় সংক্রমণের পর মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ধূমপায়ী কেউ করোনায় সংক্রমিত হলে তার মৃত্যু ঝুঁকিও ১৪ গুণ বেশি।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হলো, ধূমপান ছেড়ে দিন। কারণ সুস্থ থাকতে চাইলে ধূমপান বর্জন করা জরুরি। অনেকেই ধূমপান ছাড়তে চেয়েও পারেন না। কারণ তাদের এই অভ্যাস ত্যাগের প্রক্রিয়া অনেক সময় সঠিক থাকে না। ধূমপানের মতো অভ্যাস চাইলেই একদিনে ছাড়া সম্ভব হয় না। কিছুটা সময় নিতে হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ধূমপান ছাড়ার কার্যকরী পদ্ধতি-
ধূমপান ছাড়ার জন্য সবার আগে প্রয়োজন নিজের ইচ্ছাশক্তি। আপনি যদি একবার সিদ্ধান্ত নেন যে ধূমপান ছেড়ে দেবেন, তাহলে সেই সিদ্ধান্তে অটল থাকুন। কারও কাছে দৃঢ় প্রতীজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার দরকার নেই। বরং নিজের সিদ্ধান্তকেই সম্মান জানান।
অনেকেই সিগারেট পকেটে রাখা বন্ধ করে দেন। তারা ভাবেন চোখের সামনে না থাকলে খাওয়ার ইচ্ছা চলে যাবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটে উল্টোটা। চোখের সামনে না থাকলে সিগারেটের তৃষ্ণা আরও বেশি বোধ হতে থাকে। তখন দেখা যায় অন্যের কাছ থেকে চেয়ে খাচ্ছেন। এর বদলে নিজের পকেটেই সিগারেট রাখুন। কিন্তু সিগারেট খাওয়া থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন।
সব সময় যে সিগারেট খেতে ইচ্ছা করে তা কিন্তু নয়। তাই খেয়াল করুন, কোন সময়টাতে আপনার সিগারেট খেতে বেশি ইচ্ছা করে? হতে পারে তা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়ে, ফোনে কথা বলার সময়, টিভি দেখার সময়, খাবারের পর কিংবা চায়ের সঙ্গে। যে সময়েই হোক, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন।
কাজ করতে করতে সিগারেট ধরানোর অভ্যাস? আজ থেকে এই অভ্যাস বাদ দিন। যদি সিগারেট ধরানোর পর মনে পড়ে যে আপনি সিগারেট ছাড়তে চাচ্ছেন, তখন নিজেকে আরেকবার প্রশ্ন করুন, সত্যি আপনি কী চান?
যদি আপনার সত্যিই সিগারেট খেতে খুব ইচ্ছা হয় তাহলে মনের সঙ্গে জোর না করে চুপচাপ বসে আরাম করে সিগারেট খান। খাওয়ার সময় শরীরের প্রতি মনোযোগ দিন। এবার চোখ বন্ধ করে চিন্তা করুন, সিগারেটের ধোঁয়া নাক দিয়ে যাচ্ছে। যেতে যেতে তা একটা বিষাক্ত সাপের আকার ধারণ করছে। ফুসফুসে পৌঁছে ফণা তুলে ছোঁবল মারছে আর ঢেলে দিচ্ছে নিকোটিন নামক বিষ। বিষাক্ত কোনো সাপ ছোঁবল মারলে আপনার শরীর ও মনে যে অনুভূতি হতো সেরকম অনুভব করুন। এমন অবস্থায় নাক, মুখ, গলা, হৃত্পিণ্ড ও পাকস্থলীর প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করুন।
এই পর্যায়ে আরেকবার সিগারেটে টান দিন। চিন্তা করুন, আরেকটি বিষাক্ত সাপ ফুসফুসের দিকে যাচ্ছে। এবারও আগের মতো একইভাবে অনুভব করার চেষ্টা করুন।
এভাবে পুরো সিগারেট শেষ করুন। পুরো প্রক্রিয়ায় আপনার অনুভূতিগুলো একটি ডায়েরিতে লিখে রাখুন। অন্যের সামনে বা কোনো কাজ করার সময় সিগারেট খাবেন না। পুরো প্রক্রিয়াটি কয়েকদিন অনুসরণ করুন। এতে সিগারেট সম্পর্কে আপনার মনে এক ধরনের তিক্ত অনুভূতি জন্ম নেবে। এতে সিগারেট ছেড়ে দেওয়ার কাজটি আপনার জন্য বেশ সহজ হয়ে যাবে।
এইচএন/এএ