প্রকৃতির ক্যালেন্ডারে বসন্তের বার্তা
ফাল্গুন প্রকৃতির ক্যালেন্ডারে বসন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে, এ যেন নতুন জীবনের সূচনা। এই মাসে প্রকৃতি শিমুল, কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, গাঁদা, ডালিয়াসহ নানা রঙের ফুলে প্রকৃতি হয়ে ওঠে রঙিন। বাহারি ফুলের পাশাপাশি কোকিলের কুহু কুহু ডাক যেন মনে প্রশান্তি এনে দেয়। বসন্ত আমাদের মাঝে আসে প্রকৃতিকে নতুন রূপে সাজাতে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ছোট্ট একটি গ্রাম শিমুলতলা বালুরচর বসন্তের আগমনে হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। এই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মহানন্দা নদী, যার কলতান প্রকৃতির সুরকে আরও মধুর করে তোলে। বসন্তের সকালে শিমুল ফুলের গাছগুলো তাদের লাল রঙে প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তোলে। গ্রামের শিশুরা শিমুল ফুল সংগ্রহ করে খেলায় মেতে ওঠে।
বসন্তে মহানন্দা নদীর পানি আরও স্বচ্ছ হয়ে ওঠে, যেন প্রকৃতির আয়নায় গ্রামের রূপ প্রতিবিম্বিত হয়। নদীর পাড়ে গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাঁটলে দেখা যায় কৃষাণ-কৃষাণীদের মিষ্টি হাসি। আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ সময় বসন্তের স্নিগ্ধ বাতাসে আমের মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ ভেসে আসে। বসন্ত আর আমের মুকুল যেন একই সুতোয় গাঁথা।
শিমুলতলা বালুরচরের মানুষজন খুবই সহজ-সরল। তাদের জীবনযাত্রা প্রকৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বসন্তের উৎসব, পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতি, আর নবান্নের আনন্দে গ্রামের প্রতিটি প্রাণ হয়ে ওঠে উচ্ছ্বসিত। মহানন্দা নদীর তীরে বসে গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরা গল্প করেন, আর শিশুরা খেলাধুলায় মেতে ওঠে।
প্রকৃতির স্নিগ্ধতা, মানুষের সরলতা, আর নদীর কলতান মিলে এই গ্রামকে করে তোলে অনন্য। বসন্তের সৌন্দর্য যেন এই গ্রামের প্রতিটি প্রাণে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। শিমুলতলা বালুরচর প্রকৃতির কোলে লুকিয়ে থাকা এক অপরূপ গ্রাম, যেখানে বসন্তের রূপ যেন আরও বেশি মোহনীয় হয়ে ধরা দেয়।
বসন্ত যেমন আমাদের খুশির ঋতু; তেমন বেদনারও বটে। বসন্তে শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙ মনে করিয়ে দেয় খুনি হাসিনার পতনে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের কথা। তাদের অবদার আমরা কখনও ভুলতে পারবো না।
সম্রাট আকবর ১৫৮৫ সালে মোগল প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। বসন্ত উৎসব শুধু একটা উৎসব নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুসলমানদের গৌরবময় ঐতিহ্য।
এইচএন