বাঙ্গি খাবেন কেন?
ফুটি নামে ডাকেন কেউ, কেউবা ডাকেন বাঙ্গি নামে। বাংলায় এর আরও কিছু নাম রয়েছে যেমন- কাঁকুড়, খরমুজ, বানি ইত্যাদি। ইংরেজিতে বলা হয় মাস্কমেলন। গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে পরিচিত বাঙ্গি আমাদের দেশীয় ফল। কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে হালকা হলুদ রঙের হয়ে থাকে। দেখতে সুন্দর এবং সুগন্ধযুক্ত এই ফল খেতেও মিষ্টি। এতে রয়েছে প্রচুর আঁশ এবং পর্যাপ্ত ফলিক এসিড। যা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ প্রয়োজনীয়।
বাঙ্গির পুষ্টিগুণ
বাঙ্গিতে আছে কয়েক রকম ভিটামিন, ফলিক এসিড ও প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ। পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন, প্রতি ১০০ গ্রাম বাঙ্গিতে থাকে ৭৩.২ গ্রাম পানি, ২৩.৮ গ্রাম শর্করা, ৮৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন এ, ৫১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ১১.০৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২, ৭.০২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১, ২.৯ আমিষ, ১১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১.৮ মিলিগ্রাম আয়রন, ১০৪ কিলোক্যালরি ও ১ গ্রাম খনিজ পদার্থ। এই ফলে থাকা সব উপাদানই আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। জেনে নিন বাঙ্গি খেলে কী উপকার মিলবে-
ত্বক সুন্দর রাখে
আমাদের ত্বক ভেতর থেকে সুন্দর রাখতে ও ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে বাঙ্গি। বাঙ্গির প্রায় ৭৫ শতাংশই পানি। আপনি যদি গরমে নিয়মিত বাঙ্গি খান তবে শরীরে পানির ঘাটতিও পূরণ হবে। এতে আরও আছে বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি। এই দুই উপদান শরীরের যেকোনো রকম ঘাঁ বা কাটাছেঁড়া দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। খাওয়ার পাশাপাশি এটি ব্যবহার করা যায় রূপচর্চার কাজেও। বাঙ্গির রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে প্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বকের দাগ-ছোপ দূর হয়ে উজ্জ্বলতা বাড়বে।
দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়
বর্তমানে অল্প বয়সেই দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে অনেকের। আমাদের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে যেসব খাবার তার মধ্যে একটি হলো বাঙ্গি। এই ফলে আছে প্রচুর ভিটামিন এ, বি এবং সি। এসব উপাদান দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। যে কারণে বাঙ্গি খেলে দূরে থাকা যায় বিভিন্ন ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে। নিয়মিত বাঙ্গি খেলে তা চুল পড়ার সমস্যা অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য আদর্শ খাবার হতে পারে বাঙ্গি। কারণ এতে কোনো রকম কোলেস্টরল বা চর্বি নেই। তাই এটি বেশি খেলেও নেই ওজন বৃদ্ধির ভয়। উল্টো ওজন কমানো এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এই ফল। এটি মিষ্টি হলেও ডায়াবেটিস রোগীর খেতে নিষেধ নেই। এর কারণ হলো এতে চিনির পরিমাণ বেশ কম। বাঙ্গিতে থাকা ডায়াটারি ফাইবার ভালো রাখে আমাদের হজমশক্তিকেও।
গর্ভবতী মায়ের জন্য উপকারী
বাঙ্গিতে থাকা ফলিক এসিড গর্ভবতী মা ও গর্ভস্থ শিশুর জন্য উপকারী। গর্ভধারণকালীন নিয়মিত বাঙ্গি খেলে শিশুর বিকাশ ভালো হবে। সেইসঙ্গে গর্ভবতী মায়ের বিষণ্নতা কাটাতেও এটি কার্যকরী। নারীকে হাড়ের ক্ষয় রোগ থেকে দূরে রাখে এই উপকারী ফল। বাঙ্গির তৈরি জুস, শরবত কিংবা স্মুদি খেতে পারেন। খেতে পারেন ফ্রুটস সালাদ তৈরি করেও। যেভাবেই খান না কেন, এটি উপকারী।
ইফতারে বাঙ্গি
সারাদিন রোজা রাখার কারণে খুব স্বাভাবিকভাবেই আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। এই ক্লান্তি কাটিয়ে শক্তি জোগাতে কাজ করে বাঙ্গি। এতে আছে পর্যাপ্ত ক্যালরি। সেইসঙ্গে রয়েছে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। এটি প্রতিদিনের ইফতারে রাখতে পারেন। এতে আপনি সতেজ অনুভব করবেন।
এইচএন/এএ