হাসির উপকারিতা জেনে নিন
হাসি হলো এমন একটি ভাষা যা সবাই বুঝতে পারে। একটি হাসিমুখ আপনার দিনকে সুন্দর করে দিতে পারে। কিন্তু সবসময় হাসিখুশি থাকার মানে এই না যে আপনি ভালো সময় কাটাচ্ছেন। অনেক সময় মানুষ অনেক রকম কষ্ট বুকে চেপেও মুখে হাসি ধরে রাখে। তবে হাসির রয়েছে অনেক উপকারিতা। বিজ্ঞানীদের মতে, হাসি মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর নানা ধরনের প্রভাব ফেলে।
আমরা কেন হাসি
হাসিঠাট্টা জীবনের একটি গুরুত্তপূর্ণ অংশ। আমরা হাসিঠাট্টার মাধ্যমে জীবনের গল্প বলে থাকি। যার ফলে জীবন চলার পথে অনেকের সঙ্গেই পরিচয় হয়ে থাকে। জীবনের মুহূর্ত সুন্দর করতে হাসিময় মুখই যথেষ্ট। এই অনুভূতি জীবনের যেকোনো মুহূর্তকে সুন্দর করে তোলে। সবার জীবনেই হাসির কিছু মুহূর্ত থাকে যা মনে করে আনমনেই হাসেন। আসুন জেনে নেই হাসির সেই সুফল সম্পর্কে যা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন-
১. মন ভালো রাখে
মানবজীবনে হাসির গুরুত্ব অপরিসীম। হাসিখুশি থাকলে মনও ভালো থাকে। এন্ডোরফিন হলো এমন একটি হরমোন যা সব বোধ- ভালো, মন্দ, সুখ, দুঃখ এবং হতাশার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। আপনার মস্তিষ্কের রিসেপ্টরগুলোর সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে এই হরমোন কাজ করে, মরফিনের মতো একটি ইতিবাচক অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। যা স্বাভাবিকভাবেই ভালো থাকতে সাহায্য করে। আপনার চ্যালেঞ্জিং দিন হোক বা বিষণ্ণতাময়, যতই জীবনের উত্থান-পতনের মুখোমুখি হন, তখন আপনার হাসি মুখ মানসিক উৎসাহ দিতে পারে। এটি আপনার মন মেজাজ উন্নত করার পাশাপাশি আপনার জীবনের ভালো দিকগুলো মেনে নেয়ার একটি সহজ কিন্তু শক্তিশালী উপায়।
২. স্বাস্থ্য উপকারিতা
হাসলে আপনার মস্তিষ্ক, শরীর সমানভাবেই উপকৃত হয়। যখন হাসবেন, আপনার মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নামক হরমোন নিঃসরণ হয়, এর নাম নিউরোট্রান্সমিটার যা আপনাকে উৎফুল্ল থাকতে সাহায্য করে। ডোপামিন হলো এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার এবং হরমোন। এটি স্মৃতি, আনন্দ এবং অনুপ্রেরণাসহ শরীর ও মনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। ডোপামিন আপনার সৃজনশীল চিন্তা, সমস্যা সমাধান এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার ক্ষমতা বাড়ায়। হাসি আপনার মানসিক, আত্মিক সমতা বজায় রাখে।
আরও পড়ুন
৩. হাসি এক ধরনের ইয়োগা
উচ্চ রক্তচাপকে একটি নীরব ঘাতক বলা হয়, অনেকেরই এই স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে। উচ্চ রক্তচাপের বিরুদ্ধে হাসি শক্তিশালী নিরাময় হিসেবে কাজ করে। আপনি যখন মন খুলে হাসবেন তখন রক্তনালীগুলো শিথিল হয়, যা রক্ত প্রবাহিত করতে সাহায্য করে। রক্তনালীর শিথিলতা আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং আপনার কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের চাপ কমায়। হাসি কোনো মেডিসিন বা চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োজন ছাড়াই স্বাভাবিক রক্তচাপের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। রক্তচাপের ওপর হাসির বিরল প্রভাব রয়েছে। যা বিজ্ঞানিদের গবেষণায়ও সমর্থিত। গবেষণায় দেখা গেছে, যে মানুষ নিয়মিত হাসে তার হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। সেইসঙ্গে এটি রক্তচাপের মাত্রাও কমাতে পারে।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে হাসি একটি শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে কাজ করে। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে যে, হাসি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ায়। হাসলে আপনার শরীর আরও বেশি ইমিউনিটি এবং অ্যান্টিবডি তৈরি করে, যা ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। যা আপনাকে সুস্থ রাখে। আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভালো রাখার জন্য হাসি একটি প্রাকৃতিক বুস্টার হিসাবে কাজ করে। যা আপনার শরীরকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৫. মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে
স্ট্রেস আমাদের জীবনে একটি সাধারণ ব্যাপার, এটি মুখের হাসি কেড়ে নেয়। আপনি যখন হাসবেন, তখন আপনার শরীর এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ করবে যা স্ট্রেসের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এন্ডোরফিন নিঃসরণের ফলে আপনার মন মেজাজ ভালো থাকবে, যা রক্তচাপ কমাতে কাজ করে। এছাড়াও হাসি অন্যান্য উপকারী হরমোনকে উদ্দীপিত করে, যেমন ডোপামিন এবং সেরোটোনিন, যা মেজাজ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এটি কোনো প্রতিক্রিয়া ছাড়াই মানসিক চাপ কমায় প্রাকৃতিকভাবে। একটি সুন্দর হাসি আপনাকে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে এবং আপনার আত্মিক শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৬. চাপ ও ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে
হাসি সব রোগের ওষুধ। এটি ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। হাসলে শরীরের প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হরমোন এন্ডোরফিন নিঃসরণ হয়। এন্ডোরফিন আপনার শরীরে আন্টিবডির মতো কাজ করে। শরীরের রিসেপ্টরগুলোর সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে হরমোনগুলো নিঃসরণ হয়, যা আপনার ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। যদিও হাসি ব্যথার জন্য কোন স্থায়ী সমাধান নয়। এটি সাময়িক সমাধান দিতে পারে কিন্তু পুরো সুস্থতার কোনো উন্নতি করতে পারে না।
৭. হৃদযন্ত্র ভালো রাখে
আপনি যখন হাসেন তখন আপনার শরীর রক্ত প্রবাহিত হয় এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। রক্ত সঞ্চালনের বৃদ্ধির জন্য রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমে এবং কার্ডিওভাসকুলারের উন্নতিতে এটি হৃদপিণ্ডকে সাহায্য করে। হাসি ধমনীর ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে কাজ করে। হৃদরোগের সমস্যা কমায়, রক্তনালীর নমনীয়তা এবং ধমনীর সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। যে কারণে আপনার হৃদযন্ত্র সক্ষমতার সঙ্গে রক্ত পাম্প করতে পারে।