অতিরিক্ত চিনি খেলে কী হয়?
চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার অতিরিক্ত খেলে অন্ত্রে তৈরি হয় খারাপ ব্যাকটেরিয়া। সম্প্রতি জর্জিয়া ইউনিভার্সিটি ও দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এমন তথ্য জানিয়েছেন। গবেষকরা বলেছেন, চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার কারণে শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হয়। মস্তিষ্কের কিছু অংশের গঠন সম্পূর্ণ হয় না বা নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। স্নায়বিক জটিল রোগও দেখা দেয়। অ্যালঝেইমারের শঙ্কাও বহুগুণে বেড়ে যায়। তারা আরও বলেন, বেশি মিষ্টি খেলে ওবেসিটি বা স্থুলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। হাইপারগ্লাইসেমিয়ার কারণে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। হৃদরোগ, ডায়েবেটিস এবং স্মৃতিনাশ বা ডাইমেনশিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
জর্জিয়া ইউনিভার্সিটি ও দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকরা সম্প্রতি চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবারের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে গবেষণা করেন। জর্জিয়া ইউনিভার্সিটির ল্যাবরেটরিতে ইঁদুর বা রডেন্ট জাতীয় প্রাণীদের অতিরিক্ত চিনি খাইয়ে তার ফলাফল পর্যবেক্ষণ করেছেন। এসব খাবার থেকে শরীরে কী এমন পরিবর্তন হয় যা মস্তিষ্কের রোগের কারণ হতে পারে- সেটিই ছিল তাদের গবেষণার মূল বিষয়। মস্তিষ্ক বা ব্রেনে দুই ধরনের প্রভাব ফেলছে চিনি বা অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার-
এক. মস্তিষ্কে এক বিশেষ ধরনের প্রোটিনের কার্যকারিতা বন্ধ করে দিচ্ছে। যেটি মস্তিষ্কে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং স্মৃতিনাশের ঝুঁকি কমায়। রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে গেলে প্রোটিন গ্লাইকেশন বাধা পায়। এছাড়া মস্তিষ্কে অ্যাবনর্মাল প্রোটিন তৈরি হওয়া অ্যালঝেইমার্সের কারণ।
দুই. অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকলে অন্ত্রে খারাপ ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হয়। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো অনেক সময় মস্তিষ্কের প্রদাহ বা রোগের কারণ হয়। গবেষকরা বলেছেন, মানুষের অন্ত্রে ভালো ও খারাপ উভয় ব্যাকটেরিয়াই থাকে। ভালো ব্যাকটেরিয়ার কাজ হলো খাবার পরিপাকে সহায়তা করা। বাইরের খাবার, তেল বা মসলাদার খাবার, চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে অন্ত্রে খারাপ ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হয়। এগুলো খাদ্যনালীতে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে প্যারাব্যাকটেরয়েডের জন্ম হয়। এরা ধীরে ধীরে সংখ্যায় বাড়তে থাকে। আর যেগুলো আগে থেকে অন্ত্রে অবস্থান করে সেগুলো চরিত্রে পরিবর্তন আনে। ফলে জটিল রোগের সৃষ্টি হয়।
সাধারণত মানুষের চিন্তাভাবনা ও স্মৃতি ধরে রাখার জন্য মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশের নাম হিপ্পোক্যাম্পাস। এটি স্মৃতি ধরে রাখতে সহায়তা করে। ‘এনটোরিনাল কর্টেক্স’ নামে আরেকটি অংশ হিপ্পোক্যাম্পাসের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এটি স্মৃতির জাল তৈরি করে। স্নায়ুর মাধ্যমে বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে মানুষ সংকেত পেয়ে থাকে।
গবেষকরা বলেছেন, প্যারাব্যাকটেরয়েড হিপ্পোক্যাম্পাসে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। অন্ত্র ও মস্তিষ্কের মধ্যে যে সংযোগ রয়েছে সেটি নষ্ট করার চেষ্টা করে। স্নায়ুর ওপর এর প্রভাব পড়ে সবচেয়ে বেশি। সে কারণে স্মৃতিশক্তি ও চিন্তাভাবনার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। অ্যালঝেইমার বা ডাইমেনশিয়ার ঝুঁকিও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। সে কারণে শিশুরা চাইলেই চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার দেওয়া চলবে না।
এইচএকে/এইচএন/এএ