লকডাউনে রোজার প্রস্তুতি
শুরু হয়েছে লকডাউন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ। করোনাভাইরাস মহামারি ঠেকাতে নেওয়া হয়েছে এই পদক্ষেপ। এদিকে কিছুদিন পরেই শুরু হবে পবিত্র রমজান মাস। বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় এই মাস ব্যতিক্রম। এদেশের মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা এই এক মাস রোজা পালন করে থাকেন। ফলে বদলে যায় পুরো মাসের জীবনযাপনের চিত্র। ভোর রাতে সাহরি খেয়ে রোজার শুরু এবং মাগরিবের আজান শুনে ইফতারের মাধ্যমে শেষ হয়। খাবারের রুটিন পরিবর্তিত হয়, বদলে যায় বাজার-ঘাটের চিত্রও। রোজার কাজ আগেভাগে গুছিয়ে রাখতে চান অনেকেই। লকডাউনের কারণে এখন অনেক সীমাবদ্ধতা চলে এসেছে। বিকেল চারটার পরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দোকানপাট। তাই আগেভাগে রোজার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাইলে জেনে নিন কিছু করণীয়-
তালিকা তৈরি করুন
কোনোরকম তালিকা তৈরি না করে বাজারে গেলে অনেক সময় প্রয়োজনীয় জিনিস বাদ পড়ে যায়, কেনা হয় অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস। তাই সবার আগে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের একটি তালিকা তৈরি করুন। যেসব জিনিস না কিনলেই নয় সেগুলো কিনুন। আপাতত শখের জিনিস কেনা বন্ধ রাখুন। তালিকা থেকে প্রয়োজনীয় কোনো জিনিস যেন বাদ না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন। কারণ এসময় বারবার বাজারে যাওয়া অনেকটাই কষ্টসাধ্য। সব সময় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না-ও মিলতে পারে।
কেনাকাটা
কেনাকাটা বলতে শুধু খাবার নয় বরং আরও অনেক প্রয়োজনীয় পণ্য বোঝায়। যেমন ধরুন, রোজায় আপনার একটি ফ্রিজ দরকার বা ভ্যাকুয়াম ক্লিনিয়ার, সেটিও কিনে ফেলুন। এখন এসব পণ্যের দোকান বা শো-রুম বন্ধ থাকার কারণে সেখানে গিয়ে কিনে আনা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আপনি সাহায্য নিতে পারেন অনলাইনের। প্রয়োজনীয় পণ্যের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট বা পেইজে গিয়ে অর্ডার করতে পারেন প্রয়োজনীয় পণ্যের। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা নির্দিষ্ট পণ্য পৌঁছে দেবে। এভাবে ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে বাজারও করতে পারবেন। বাজার করার জন্য ঘরের বাইরে বের হলে অবশ্যই সবরকম স্বাস্থ্যবিধি মেনে বের হবেন। ফিরে এসে একইভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হবেন।
গুছিয়ে রাখা
এই গুছিয়ে রাখার অর্থ হলো সবকিছু এমনভাবে রাখা যেন রোজায় আপনাকে খাবার তৈরি ও অন্যান্য কাজে বেগ পেতে না হয়। চাইলেই হাতের কাছে পাওয়া যায়- এমনভাবে সবকিছু রাখুন। প্রতিদিনের রান্নার মাছ-মাংস ও অন্যান্য সবজি কেটে-ধুয়ে রাখতে পারেন। যেন রান্নার সময় খুব একটা ঝামেলা না হয়। ইফতার তৈরিতে এমনিতেই সময় কম পাওয়া যায়। তাই ইফতারের আইটেমগুলো ফ্রোজেন করে রাখতে পারেন। এতে সময় বাঁচবে অনেকটাই। ইফতারের সময় তাড়াহুড়ো লাগবে না।
পরিচ্ছন্নতা
গরম পড়তে শুরু করেছে। এসময় গরম ও ধুলোবালির কারণে অস্বস্তিতে ভোগেন অনেকেই। বাড়িতে ধুলোবালি থাকলে তার মাধ্যমে ছড়াতে পারে নানা সংক্রমণ। তাই বাড়িঘর আগেভাগেই পরিচ্ছন্ন করুন। রোজা রেখে অনেক সময় ভারী কাজ করা সম্ভব হয় না। তাই বিছানার চাদর, পর্দা এসব আগেভাগে ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখুন। আসবাবপত্রের আনাচে-কানাচে অনেক ময়লা লুকিয়ে থাকে, সেসব স্থান পরিষ্কার করুন। রান্নাঘর পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। কারণ সেখানে বাড়ির সবার জন্য খাবার তৈরি করা হয়। তাই রান্নাঘরও পরিষ্কার করে রাখুন। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই।
মশলাপাতি
রোজায় মশলাপাতির প্রয়োজন বেশি হয়। এসময় নানা ধরনের খাবার তৈরির জন্য প্রয়োজন হয় বিভিন্ন রকম মশলার। কিছু মশলা পেস্ট করে এবং কিছু মশলা গুঁড়া করে রাখার প্রয়োজন হয়। সেসব মশলা তৈরি করে রাখুন। এতে রান্না করতে গিয়ে আলাদা সময় নষ্ট হবে না। মশলার কৌটো এমনভাবে সাজিয়ে রাখুন যেন প্রয়োজনীয় মশলা সবার আগে হাতের কাছে পাওয়া যায়।
রোজার আগে এই কাজগুলো এগিয়ে রাখলে আপনি থাকবেন অনেকটাই নিশ্চিন্ত। লকডাউনের কারণে বিভিন্ন জিনিসের দুষ্প্রাপ্যতা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। তবে খেয়াল রাখবেন, আতঙ্কে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কিনে রাখবেন না। মহামারির এই সময়ে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। নিজের পাশাপাশি খেয়াল রাখুন প্রিয়জন ও সুবিধাবঞ্চিতদেরও।
এইচএন/এএ