গল্পটা শুধুই বন্ধুত্বের
পরিবারের বাইরে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হচ্ছে বন্ধুরা। জীবনের না বলা অনেক কথা থাকে, যা কখনোই পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া হয় না, তবে সেসব কথা বন্ধুকে বলা যায় অনায়াসেই। অনেকের মতো আমার জীবনেও বন্ধুদের অবদান বেশ বড়সড়।
জীবনে প্রথম বন্ধুর নাম নিতে গেলে সবার আগে আসে সোহানের নাম, এছাড়া মুরাদ-রাসেলরা তো রয়েছেই। প্রাইমারি স্কুলের চৌকাঠ আর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে ১৮ বছর ধরেই আমাদের উষ্ণ সম্পর্ক চলমান রয়েছে।
অবশ্য কালের পরিক্রমায় কত বন্ধু এলো আর গেলো তার হিসেব বের করাও মুশকিল। তবে কিছু বন্ধু তো ঠিকই মনের গহীনে জায়গা করে রয়েছে এখনও, যা থাকবে আজীবন। যশোরের কেশবপুর পাইলট স্কুলে যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হই, তখন হাতে গোনা কয়েকজন বন্ধু ছিল আমার। এরপর স্কুল জীবন শেষ করার সময় অন্তত একশ বন্ধুর স্মৃতি নিয়ে বের হতে পেরেছি, এটাই এখনও মনে প্রশান্তি দেয়।
দিপু, বিবেক, রাসেল, মুরাদ, রহিম, অনিন্দ্য থেকে শুরু করে মেহেদী, আফ্রিদি, সেলিম, ফয়সাল, আজমল এরা সবাই ছিল সেই তালিকায়। ছোট বেলায় ‘বরফ-পানি’ খেলায় ঝগড়া বাধানো সেই মামুনও আমার বন্ধু হয়ে যায় পরবর্তীতে। এরপর ইমনের সাইকেল ভাঙার পর সেও আমার বন্ধু হয়ে গিয়েছিল। ক্রিকেট মাঠে হাসিব খানের সঙ্গে তুমুল কথা কাটাকাটির পরেও সে আমার বন্ধু হয়ে যায়। এরকম নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে অনেকে বন্ধুর খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলে।
আরেকজন আছে, নাম তার লাদেন। যার সঙ্গে আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি ঝগড়া হয়েছে কোনো কারণ ছাড়াই। তবে মাঠের ক্রিকেটে যখন আমরা ব্যাচ ফিফটিন হয়ে খেলেছি, তখন কোনো ভেদাভেদ ছাড়াই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলেছি। সবাই যেন একে অন্যের পরিপূরক। কেউ কাউকে ছাড়া চলেই না। গালিব, বাবু, রুমি থেকে প্রণয়, সোহেল, তন্ময়, সৌরভ, রিফাত, অনুপ, তোফায়েল, ইকরামুল সবাই সবার কাছের বন্ধু, অতি আপনজন।
এতসব বলার কারণ আজ ‘বন্ধু দিবস’। অবশ্য এমন মধুর সম্পর্ক উদযাপনে কোনো দিবস লাগে না! আমার কাছে মনে হয় বন্ধুত্বের কোনো দিবস লাগে না। প্রতিদিনই বন্ধু দিবস। তবে যেহেতু ঘটা করে বিশ্বে একটি দিন পালিত হয় সে কারণেই কিছু কথা স্মৃতির মালা থেকে মুক্তার মতো ঝরে। তাতে সেসব সুখ-স্মৃতি হয়ে ওঠে আরও তাজা।
কলেজ জীবনের কয়েকজন বন্ধুর কথাও আলাদা করে বলতে হয়। সাব্বির, শামীম, নাইম যাদের সঙ্গে জীবনের অনেক আনন্দ-বেদনা ভাগ করে নিয়েছি। মেস জীবনের প্রায় ৬ বছর একসঙ্গে থেকেছি, খেয়েছিও। কত অশ্রুকে আনন্দে রূপান্তরিত করেছি। সময়ের পালাবদলে ব্যস্ত এই নগরীতে সবাই ব্যস্ত হয়ে ওঠে, তবে সুযোগ পেলেই আমরা নিদিষ্ট সময়ে দেখা করার ছুঁতো খুঁজি। অল্প সময়ের কথা বলাও মানস জগতে অন্যরকম ভালো লাগার যোগান দেয়।
আমার জীবনের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে এই বন্ধুরা। অবশ্য ছোট্ট জীবনের সেরা বন্ধুই যে এখন আমার সহধর্মিণী। জীবনের চরম খারাপ সময়ে বন্ধুদের সব সময় পাশে পেয়েছি। কিছু বোঝাপড়ার ভুল বা মন কষাকষিতে গুটিকয়েক বন্ধুও অবশ্য হারিয়ে গেছে। তবে একটা কথা আমি সবসময় বিশ্বাস করি, সবাই ছেড়ে গেলেও বন্ধুরা ছেড়ে যায় না। একদিন না একদিন ঠিকই ফিরে আসে। গলা ছেড়ে হয়তো বলবে, বন্ধু তোকে খুব মিস করছি!
সঙ্গীতশিল্পী তপুর গানের কয়েকটি লাইন অবশ্য এখন খুব করে মনে পড়ছে, ‘রক্ত সম্পর্কে কেউ বা দ্বিতীয়, সৎ অসৎ, সব দূরের কাছের’, ‘বৈধ অবৈধ, হাজারও এসব সম্পর্ক ভাঙ্গে, থাকে বন্ধুত্ব। তোরা ছিলি, তোরা আছিস, জানি তোরাই থাকবি, বন্ধু বোঝে আমাকে, বন্ধু আছে আর কী লাগে?’