ডেঙ্গু - যা জানা প্রয়োজন
ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জনিত রোগ। সাধারণত বর্ষার শেষ দিকে এই রোগে প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। কিন্তু এবছর আমাদের দেশে এবার রোগটি বর্ষার পূর্বেই দেখা যাচ্ছে। এ রোগে আক্রান্তের হারও বেশি। মৃত্যুর হারও কম নয়। অনেক রোগী বেশ দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। রোগটির লক্ষণ গুলোতে অন্য বছরের তুলনায় বেশ ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। তাই মানুষের মধ্যেও বেশ আতঙ্ক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকটা কোভিড-১৯ প্যান্ডামিকের সময়ের মতো।
ঢাকার হাসপাতালগুলোও রোগীদের বাড়তি চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই মানুষের মধ্যে এর চিকিৎসা সম্পর্কে কিছুটা সচেতনতা প্রয়োজন।
এখান সব রোগীর যেমন হাসপাতালে ভর্তির দরকার হয় না আবার দেরিতে হাসপাতালে নেওয়ার কারণে অনেক রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে যায়। তখন চিকিৎসকদের তেমন কিছু করার থাকে না।
রোগের তীব্রতা অনুযায়ী ডেঙ্গু রোগীগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।
১. যাদের উপসর্গ দেখা যায় না এ ক্ষেত্রে ভাইরাস সুপ্ত অবস্থায় থাকে অথবা আক্রান্ত হলেও রোগের তীব্রতা খুব কম থাকে। এদের কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না।
২. এদের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই গ্রুপের রোগীদের আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি।
ক. রোগের তীব্রতা অল্প - এই গ্রুপে রোগীদের সাধারণত জ্বর থাকে। সাথে শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা ইত্যাদি থাকতে পারে। কিন্তু কোন ধরনের রক্তক্ষরণ, রক্তচাপ কমে যাওয়া, শরীরের কোন অঙ্গ বিকল হওয়া, রক্তের প্লাজমা বা জলীয় অংশ রক্তনালির বাইরে চলে যাওয়ার লক্ষণ থাকে না। এ ধরনের রোগীকে বাসায় চিকিৎসা দেওয়া যায়। যেমন- জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল, বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়া, বিশ্রামে থাকা।
খ. রোগের তীব্রতা মাঝামাঝি - এই গ্রুপের রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এদের আমরা আবার দুই ভাগে ভাগ করতে পারি।
(১) যাদের ডেঙ্গু রোগের পাশাপাশি অন্য কোন ডিজিজ বা ঝুঁকি আছে। যেমন- শিশু (এক বছরের কম), বৃদ্ধ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভাবস্থা, হৃদরোগ, রক্তরোগ (যেমন- থ্যালাসেমিয়া), যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম (ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী), যারা অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খায়।
(২) এদের জ্বরের সাথে বিশেষ কিছু লক্ষণ থাকে। যেগুলো দেখে মনে করা হয় রোগ তীব্রতা ধারণ করতে পারে। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলেই রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। সাথে রক্তক্ষরণ থাকুক বা না থাকুক। (যেমন- বারবার বমি হওয়া, পেট ব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা, অল্প রক্তক্ষরণ, বুকে বা পেটে পানি আসা, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, রক্তের পিভিসি বা এইচটিসি বেড়ে যাওয়া, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (যেখানে রক্তক্ষরণের সাথে রক্তে প্লাটিলেট কমে যায়)।
গ. রোগের তীব্রতা খুব বেশি - এ ধরনের রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে এইচডিইউ বা আইসিইউ-তে রেখে নিবিড় পর্যবেক্ষণ বা বিশেষ যত্ন নিতে হয়। এই ধরনের রোগীরা হচ্ছেন- যাদের ডেঙ্গু জ্বরের পাশাপাশি খুব বেশি রক্তক্ষরণ থাকে; যে সকল রোগী শক (রক্তচাপ থাকে না, নাড়ির স্পন্দন পাওয়া যায় না) এ আসে; ডেঙ্গুর সাথে যাদের অঙ্গ বিকল হয়ে যায় (যেমন- লিভার ফেইলর এর রোগী)। এ ধরনের রোগীকে তাই হাসপাতাল রেফার করা হয়।
তবে সব ডেঙ্গু রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হয় না। তাই আমাদের অযথা আতঙ্কিত না হয়ে সময়মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলে রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা পাবে এবং সুস্থ হয়ে উঠবে।
সহায়ক উৎস- ন্যাশনাল গাইডলাইন অব ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট ২০২২
লেখক - সহকারী অধ্যাপক (সার্জারি), শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, জামালপুর।