বাবার কাছে চিঠি
শ্রদ্ধেয় আব্বা,
আসসালামু আলাইকুম। আশা করি ভালো আছেন। প্রতিটি মোনাজাতে যার সার্বিক ভালো থাকা কামনা করি আল্লাহ তাকে ভালোই রাখবেন- এই ভরসা রাখি। জানি আপনার শরীর ভালো নেই, বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগ বাসা বেধেছে শরীরে। উচিত ছিল আপনার পাশে থেকে সেবা-যত্ন করা, কাজেকর্মে সাহায্য করা। কিন্তু বিধিবাম! কর্মজীবনের ব্যস্ততা বুনো লতাপাতার মতো আঁকড়ে ধরেছে। এমতাবস্থায় আপনার পাশে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।
এইতো মাত্র কয়েকমাস আগে আপনাকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়িতে রেখে এলাম। এরপর নতুন কর্মস্থলে যুক্ত হলাম। সকাল-সন্ধ্যা অফিস। মোটামুটি ব্যস্ত সময় কাটছে। প্রতিদিনই অফিস শেষে বাসায় ফিরতে ফিরতে ভাবি আজ আপনি কল দেয়ার আগেই আমি আপনাকে কল দিবো। কিন্তু হায়! ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরে বেমালুম ভুলে যাই!
তবে আপনার কল দেওয়া কখনো মিস হয় না। অসুস্থতা কিংবা ব্যস্ততা কোনোকিছুই আমাকে কল দেওয়া থেকে ভুলিয়ে রাখতে পারে না। বাবারা বুঝি এমনই হয়! প্রায়ই এমন হয়, আপনি কল দিলে ইচ্ছে করেই রিসিভ করিনা। কেন জানেন? তখন দুপুরের খাবারের সময় পার হয়ে গেলেও খাওয়া হয়নি। কল ধরলেই আপনি জিজ্ঞাসা করতেন কী খেলাম। খাইনি শুনলে হয়তো মন খারাপ হতো আপনার। কিংবা কেন খাইনি, খাওয়াদাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে কি-না- নানারকম টেনশনে হতো। তাই ফোন ধরিনি।
এভাবে কতকিছু লুকিয়ে রাখি আপনার মন রক্ষার্থে আপনি জানেন না। আপনার মতো বাবারা ছেলেমেয়ের ব্যাপারে যারা অল্পতেই টেনশনে পড়ে তাদের সবকিছু জানাতে নেই!
কয়েকবছর আগের ঘটনা মনে পড়ল। তখন আমি হিফজখানায় পড়ি। সপ্তাহের শেষে আপনি নানারকম খাবারদাবার নিয়ে আমাকে দেখতে যেতেন। জ্যাম থেকে বাঁচতে গুলিস্তান থেকে খিলগাঁও পর্যন্ত হেঁটে যেতেন আপনি। অসুস্থ শরীর, হাতে খাবারদাবারের ব্যাগ। তবুও কষ্ট করে আমাকে দেখতে যেতেন আপনি। অথচ আপনার খেদমতে আমি অধম অল্পতেই হাঁপিয়ে যাই। আল্লাহ আমাকে মাফ করবেন তো!
আপনার ঋণ আমি কীভাবে শোধ করবো? আপনি অনেকসময় রাগারাগি করেন, ধমক দেন। সাময়িক মন খারাপ হলেও এর পেছনে তুমুল ভালোবাসা অনুভব করি। এইতো মাসখানেক আগে, আপনি অসুস্থ হলেন, হসপিটালে দৌড়াদৌড়ি করলাম। আপনার ঘুম হয় না, খেতে পারেন না। এসব কোনোভাবেই মানতে পারছিলাম না। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠলেন। যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। কখনো বলা হয়নি হৃদয়ের গভীরে আপনার জন্য কতটা ভালোবাসা পুষে রাখি।
আব্বা, আমাকে আপনার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে দোয়া দিবেন। আমাদের উপর আপনার ছায়া দীর্ঘ হোক। এই কামনা করি।
ইতি,
আপনার স্নেহের
রায়হান আহমেদ তামীম।