বাবা হারানোর কষ্ট
৩ বছর বয়সেই মাকে হারাতে হয়েছিলো। এরপর থেকে বাবার কোলে-পিঠে মানুষ হয়েছি। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাবাই ছিলেন আমার সব থেকে আপন। বাবা ছিলেন নৌ-কমান্ডো ১০ নংসেক্টর-এর কমান্ড। বাবা অনেক ভালো সাতারু ছিলেন। আমাকে সাতার শিখিয়েছেন তিনি।
বাবার সঙ্গে আমার চমৎকার একটা মিলো হলো আমার আর বাবার জন্মদিন একদিনেই। আমি শাড়ি পরা শিখেছি বাবার কাছ থেকে। আমার সব থেকে বেশি আড্ডা হতো বাবার সঙ্গে। আমি সব চেয়ে বেশি মজা করতাম বাবার সাথে ঘুরতে গেলে। আব্বুর টাকা গুনে দেওয়া ছিলো আমার সবথেকে প্রিয় কাজ।
আব্বুর গায়ের পারফিউমের গন্ধ আমার সবথেকে প্রিয় ছিলো।আব্বু অফিসে গেলে আমি আব্বুর শার্ট পরে সারা বাড়ী ঘুরে বেড়াতাম। আব্বু অফিস থেকে ফিরে এসে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে খাওয়াতেন। আব্বুর অফিস থেকে ফেরার সময় হলেই আমি ঘুমের ভান ধরে থাকতাম। আব্বু বাসায় ফিরলেই তাকিয়ে থাকতাম, আব্বু পকেট থেকে কি বার করবেন তা দেখার জন্য।
বাবা আমাকে কোনোকিছুতে নিষেধ করতেন না। একবার তাকে জানালাম, আমি মঞ্চায়ন করতে চাই, শিখতে চাই। বাবা ছায়ানটে নিয়ে যেতে লাগলেন। আমার মঞ্চায়ন নাকি তার খুব ভালো লাগতো।
অসুস্থতার কারণে আব্বুকে নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে সময় কাটাতে হয়েছে আমাকে। দীর্ঘ দিন চিকিৎসা চলার পর বাবাকে বাসায় আনা হলো। এক রাতে বাবা আমাকে তার বুকের কাছে টেনে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললেন, ‘তুমি আমার অনেক ভালো মেয়ে, এতোদিন যেভাবে তুমি তোমার নিজের খেয়াল রেখে এসেছো সেভাবে সামনের দিন গুলোতেও নিজের খেয়াল রেখো’।
পরদিন সকালে বাবা আমার সামনে চোখ বন্ধ করলেন। যেন শান্তির ঘুম নেমে এলো তার চোখে। বাবাকে শহীদ বুদ্ধিজিবী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় দাফন করা হলো। বাবা নেই আজ ৭ মাস। এখন আমি একা, এতীম। আমি ইঞ্জিনিয়ার হয়েছি, বিয়ে হয়েছে আমার, ক্যালিফোর্নিয়াতে জব হয়েছে, কিন্তু বাবা তুমি কিছুই দেখে যেতে পারলে না। এই কষ্ট সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে আমাকে।
প্রতিদিন বাবা আমায় ১০ বার ফোন করতেন। সকালের প্রথম ফোনটাই ছিলো বাবার। বাবা নেই, তাই এখন প্রতি রাতে নিয়ম করে বাবা কল রেকর্ডগুলো শুনি। এখন নিরুপায়, অসহায় আমি নামাজের জায়নামাজে শুধু দোয়া করতে পারি, রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।