বাবাই আমার পরম বন্ধু, অভিমান ভাঙানোর সঙ্গী
বাসায় আমি সব থেকে বেশি মনে হয় বাবার সঙ্গেই অভিমান করি। কিন্তু বাবা কখনো আমাকে রাগ-অভিমান নিয়ে বসে থাকতে দেননি। আমার অভিমানি চেহারা বুঝতে পেরেই স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেন তিনি সবসময়। ছোটবেলায় আমি বাবার ভালোবাসটা বুঝতামইনা, এখন বাবাকে, বাবার ভালোবাসকে খুব অনুভব করতে পারি। বাবাকেই আমার সব থেকে আপন আর পরম বন্ধু মনে হয়।
আমি যখনই একটু অভিমান করি বা একটু মুখ গোমড়া করি, বাবা আমার মন ভালো করিয়ে দেন মুর্হুতেই। কখনো খোশগল্প করে, কখনোবা অন্য কোনোভাবে। এই তো কিছুদিন আগের কথা।
বাবা আমাকে বকা দিয়েছিলেন, মন খারাপ করার মতোই বকাবকি করলেন সেদিন বাবা। এখন তো আর ছোটবেলার মতো মুখ ফুলিয়ে কাঁদতে পারি না। তাই অভিমানে চোখ-মুখ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বসে থাকলাম সারাদিন। কিছু খাইনি সেদিন, কথাও বলিনি বাবার সঙ্গে। বাবা আমার মন খারাপের কারণ বুঝলেন। সবসময়ের মতো অভিমান ভাঙালেন আমার।
না খেয়ে না দেয়ে যখন মুখ ফুলিয়ে বসে আছি, হঠাৎ দেখি রাতে আমার পছন্দের সব খাবার টেবিলে সাজিয়ে রেখে গেছেন বাবা। আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম খাবারগুলোর দিকে। সবগুলোতে মিশে আছে আমার বাবার ভালোবাসা। বাবার ভালোবাসা যেন আরও কাছে থেকে অনুভব করলাম।
বাবা আসলে কখনো আমাকে মুখ ফুটে বলেন না, আম্মু! তুমি আমার রাজকন্যা, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তবে বাবার ভালোবাসাগুলো স্নেহের মাধ্যমে প্রকাশ করেন।
বাবা মাঝে মাঝে কোনও কাজে গ্রামের বাড়িতে গেলে আমি খুব করে অপেক্ষা করি বাবার জন্য। বাবা কখন আসবেন, আমি বাবার পাশে বসে একটু গল্প করবো, বাবার কাছ থেকে বাবা আসা যাওয়ার পথের গল্প শুনবো- এই অপেক্ষায় সময় কাটে আমার। অপেক্ষার শেষে বাবা বাসায় এলেই শান্তি লাগে, খুশি হই অনেক।
বাবা আমার খারাপ সময়ের সব থেকে ভালো বন্ধু, ভরসাস্থল। এইতো কিছুদিন আগে এসএসসি পরীক্ষায় আমার কেমিস্ট্রি সাবজেক্টটা খারাপ হয়েছিলো। বাসায় এসে আমার মন অনেক খারাপ হলো। আব্বু বুঝতে পেরে বললেন, আম্মু! মন খারাপ করো না, তুমি তোমার চেষ্টা করেছো, সবকিছুই আল্লাহর হাতে। খারাপ সময়ে বাবা আমাকে হতাশ না হয়ে বরং আল্লাহর ওপর ভরসা করতে শিখিয়েছেন।
এদিক থেকেও আমি অনেক ভাগ্যবান। কারণ, পরীক্ষার খারাপ রেজাল্ট নিয়ে অন্যরা যখন চিন্তা-টেনশনে ভোগে, আমার বাবা তখন আমাকে বকাবকি না করে, রাগ না দেখিয়ে শান্ত্বনার পরশ বুলিয়ে দেন। তবে পড়াশোনায় একেবারে যেন বখে না যাই, তাই সবসময় শাসনটা ঠিক রেখে বলেন, চেষ্টা করো, তুমি অব্যশই পারবে।
ছোটবেলায় ফুপিরা আমার সঙ্গে দুষ্টুমি করে আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে বাবাকে মিছেমিছি বকার ভান করতেন। তখন আমি এসব দুষ্টুমি না বুঝে রেগে আগুন হয়ে যেতাম। আমার রাগের ভঙ্গি দেখে ফুপি-আব্বু, আম্মু সবাই হেসে দিতেন।
আমার কেয়ারিং বাবাটাকে কখনো আয়োজন করে বলা হয়নি, ‘বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসি’। আজ বাবা দিবসে বলছি, আব্বু! শুধু দিবসের জন্য নয়, আমি আজীবন, সবসময় তোমাকে ভালোবাসি, অনেক ভালোবাসি।
শিক্ষার্থী, কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, তেঁতুলিয়া।