বাবা আছেন, হৃদয়ে
বাবা। শব্দটি বাংলা ডিকশনারির সেরা শব্দের একটি। এর ব্যাপ্তি ঠিকঠাক বুঝেছি যখনই বাবাকে হারিয়ে ফেলেছি। দিনটির কথা ভুলবো না। ২০১৫ সালের আগস্ট মাস। তখন আমি দৈনিক মানবজমিনের বিনোদন বিভাগে কাজ করি। একদিন মা ফোন করে জানালেন, তোর বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে দিনাজপুর জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আমি তাড়াহুড়ো করে আসতে চাইলাম, বাবা ফোনে বললেন, এখন আসতে হবে না, আমার তেমন কিছু হয়নি।
বাবা খুবই গম্ভীর স্বভাবের ছিলেন, হিসেব কষে কথা বলতেন। তার প্রতিটি কথা মানেই যেন এক একটা আদেশ। ছোটবেলা থেকে বাবা নিষেধ করেছেন, এমন কোনো কাজ আমি কখনো করিনি। তাই বাবার কথা মেনে ঢাকায় থাকলাম। এর কয়েকদিন পরই বাবার শরীরের অবস্থা খারাপ হলে ডাক্তার ঢাকায় চিকিৎসার কথা বলার পর আমি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে যোগাযোগ করে সবকিছু ঠিক করে রাখি। বাবা অ্যাম্বুলেন্সে দিনাজপুর থেকে ঢাকা আসার পথে মারা যান। বাবাকে ঢাকায় এনে উন্নত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়নি।
আমার বাবা মো: সোলায়মান আলী মন্ডল (প্রয়াত), পেশায় চেয়ারম্যান ছিলেন। এলাকায় টানা কয়েকবার চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন এবং এলাকার সবাই তাকে খুব মান্য করতেন। যখন রাজনীতি থেকে দূরে চলে যান তারপরই বাবা ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবার মৃত্যুটা আমি কখনই মেনে নিতে পারিনি, পারবোও না। বাবার সঙ্গে আমার অনেক মধুর স্মৃতি। যা বলে শেষ করা যাবে না। আমি স্কুলে যখন ভালো রেজাল্ট করতাম বাবা খুশি হয়ে বলতেন, চল বাজারের সবচেয়ে বড় মিষ্টিটা আজ তোর। বাবার হাত ধরে চলে যেতাম মিষ্টির দোকানে।
বাবার সঙ্গে এলাকার মেলাতে ঘুরতে যাওয়া, বাজারে গিয়ে হাতে ধরে বাজার করা, মানুষের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয়, কীভাবে সম্মান করতে হয় সবই যে তোমার কাছে শেখা বাবা। বাবাই মূলত আমার প্রধান শিক্ষক। যেমন আদর করতেন, ঠিক তেমনি কড়া শাসনে রাখতেন। যখন ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখলাম তখন অনেকে জানতে চাইতেন, তোমার বাবা কী করেন? জবাব দেওয়ার পর অনেকে প্রতিউত্তরে বলতেন, আমার বাবা তো শিল্পপতি। আবার এক বন্ধু নরম স্বরে বলতেন, আমার বাবা তো লবণ ব্যবসায়ী। তখন আমি এসব শুনে বলতাম, বাবাতো কখন ধনী বা গরিব হয় না, বাবা তো বাবা-ই হয় ।
তাই তো বার বার আজ বলতে ইচ্ছে করছে, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। যা কখনই হয়ত বলতে পারিনি তোমায়। বাবা তুমি মানে আমার মাথার ওপর তোমার শীতল হাত ছিল, লুকিয়ে ছিল আদর এবং মায়া। যার বাবা আছে সে জানে তার কী আছে। আর যার বাবা নেই সে জানে তার কী নেই। তাই সবাই বলে আমার বাবা নেই, তবে সবাইকে আমি বলি, বাবা আছেন, আমার হৃদয়ে।