তারুণ্যের ভাবনায় স্বাধীনতা
শহীদদের স্মরণে আমরা যত আয়োজনই করি না কেন, যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের জীবন বাজি রেখে লড়াই করার ঋণ শোধ হবে না কিছুতেই। আজ আমাদের এই স্বাধীন চলন-বলন যাদের অবদানে, তাদের পথটা কিন্তু মোটেই সুগম ছিল না। ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পরে যে বিজয় এসেছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, তার শুরুটা হয়েছিল এই দিনেই। একটি জাতির স্বাধীনভাবে নিঃশ্বাস নেওয়ার গোড়াপত্তন হয়েছিল এই দিনে। তাই প্রতি বছর মার্চ মাসের ২৬ তারিখ আমাদের জন্য স্মরণীয় দিন। সে সময় দেশকে রক্ষা করতে সবার আগে তরুণরা এগিয়ে এসেছিল। আজ সেই রক্তের বিনিময়ে পাওয়া দেশ হাঁটি হাঁটি পা পা করে পঞ্চাশ বছর পূর্তি করেছে। এই সময়ের কয়েকজন তরুণ বলেছেন স্বাধীনতা নিয়ে তাদের ভাবনার কথা-
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হাসান রিফাত বলেন, সেই ১৯৭১ সালে দেশকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে তরুণ ছাত্রদের ভূমিকা অসামান্য। ১৯৪৮ সাল থেকে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, সব সফল আন্দোলনে তরুণ ছাত্রদের ভূমিকা অবিশ্বাস্য। একটি দেশকে রক্ষা করতে তরুণদের এগিয়ে আশা জরুরি। তাই এই মহান স্বাধীনতা দিবসে আমার আহ্বান দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে তরুণ ছাত্রদের ভূমিকা আগামীর ইতিহাস হয়ে থাকে। দেশকে এগিয়ে নিতে আমাদের অবদান যেন ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকে। এই শপথ বুকে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান নাঈম বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর সূর্য আজ নবরূপে উদিত হয়েছে বাংলার আকাশে। সম্প্রতি আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ অভিন্ন এক লক্ষ্য নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এক হয়েছিল। পঞ্চাশ বছর পরে এসে কি সেই ঐক্য ধরে রাখতে পেরেছি আমরা? এই যে দুর্নীতি, অন্যায়, অবিচার, গুম-খুন, রাস্তায় বের হলেই ট্রাফিক জ্যাম, বেকারত্ব- এসব নেতিবাচক দিক উন্নয়নের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এগুলো সরকারের একার পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অদম্য চেষ্টা আমাদের মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের সারথি হয়ে থাকবে। দল-মত নির্বিশেষে আমাদের সবার উচিত নিজ নিজ জায়গা থেকে সহযোগিতা করা, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষ জনশক্তি হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলা। তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে সমৃদ্ধির পথে।
ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী ফারজানা তাজনিন বলেন, ২৬ মার্চ বাঙালির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এই দিনকে আমরা স্মরণ করি আত্মশক্তির প্রতীক রূপে। সর্বস্তরের মানুষ দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিল। আমরা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছি, একটি চির স্বাধীন পতাকা পেয়েছি। দেখতে দেখতে ৫০টি বছর পেরিয়ে গেছে। আমরা আমাদের এই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছি। এই দিন আজীবন একটি স্মরণীয় ও মর্যাদাপূর্ণ দিন হিসেবে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে থাকবে।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সৌরভ খান বলেন, স্বাধীনতার মাস মার্চ এলেই মনে প্রশ্ন জাগে, তরুণদের মন ও মগজে কতটা প্রোথিত হয়েছে স্বাধীনতার মর্মবাণী? এই স্বাধীনতা অর্জন করার মধ্য দিয়ে তারুণ্যের স্ফুলিঙ্গ প্রজ্বলিত হয়েছিল সেদিন। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে দেশ অনেক এগিয়েছে। আর এই এগিয়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম প্রধান শক্তি হলো তরুণ সমাজ। তরুণদের উজ্জীবিত করার মাধ্যমে ঈর্ষণীয় এই অগ্রগতির মূলমন্ত্র শিখিয়ে গেছেন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার এই সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব না কষে তারুণ্যের উচিত সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত দেশ গড়ার প্রতিজ্ঞা করা। বাংলাদেশ সরকার, প্রশাসন ও জনগণের শুধু সচেতনতা দিয়েই হবে না, সবাই সবার জায়গা থেকে দায়িত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসলে অবৈধ কাজ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান শাওন বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমাদের উচ্চ প্রবৃদ্ধি, জিডিপি, শিল্পায়ন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য তৈরি করেছে। তবু বিগত কয়েক বছর ধরে দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আমাদের ভোগাচ্ছে। স্বাধীনতা পরবর্তী এই সময়ে দেশের সার্বিক অর্জনে তরুণরা বরাবরই সম্মুখ সারির যোদ্ধা। রাষ্ট্রবিরোধী যেকোনো শক্তির বিরুদ্ধে তরুণদের সবার আগে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ার নজির অহরহ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিপূর্ণ এই তারুণ্য অগ্রযাত্রার দিনগুলোতেও তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায়। কিন্তু আমাদের বড় একটি অংশ আজও বেকারত্বের বোঝা বয়ে চলছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এই সামগ্রিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে সরকারকে তারুণ্যমুখী হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেজওয়ান সীমান্ত বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে রয়েছে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা। আর এই ত্যাগে আমাদের উজ্জীবিত করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমেই আমরা আজ স্বাধীন, সেই স্বাধীন দেশ আজ তার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পা রেখছে। এই বাংলাদেশ গড়তে সম্মুখ ভূমিকা রাখবে তারুণ্য। তরুণদের জাতির পিতার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দেশকে গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই পূর্ণতা পাবে আমাদের এই সোনার বাংলা।
এইচএন/এএ/এমএমজে