সুস্থতার জন্য ঘুম কতটা জরুরি?
আগেভাগে ঘুমাতে যাওয়া এবং খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠার উপকারিতা সম্পর্কে সবার জানা থাকলেও এই নিয়ম মানা হয় না অনেকেরই। এর পেছনে অবশ্য যুক্তিও রয়েছে অনেক। সারাদিন অফিসে কাজ করে বাসায় ফিরতেই রাত হয়ে যায়। এরপর পরিবারকে সময় দেওয়া, গল্প করা, দূরে থাকা প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ আর সেইসঙ্গে ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢু মারা তো রয়েছেই। ফলস্বরূপ ঘুমাতে যেতে দেরি, উঠতেও দেরি। ঘুম থেকে উঠেই কোনোরকম সকালের খাবার খেয়ে অফিসে ছুট। এতে ঘুম পরিপূর্ণ হয় না বেশিরভাগেরই। এই হলো বেশিরভাগ নগরবাসীর প্রতিদিনের চিত্র। এদিকে ঘুমের নানা সমস্যায় ভুগছেন বিশ্বের প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ, এমনটাই বলছে গবেষণা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুম কম হলে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কিডনির দীর্ঘমেয়াদি অসুখের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ব্যস্ততা ও জীবনযাপনের নানা দিক সামলাতে গিয়ে ঘুম থেকে যে দূরে সরে যাচ্ছেন, এতে আপনার লাভ কতটুকু হচ্ছে? ঘুম বাদ দিয়ে বাকি কাজ করা জরুরি, নাকি সুস্থতার জন্য ভালো ঘুম জরুরি, সেই তথ্যও জানা থাকা চাই। ঘুম কমে যাওয়ার কারণে অল্প বয়সেই নানা রোগ বাসা বাঁধছে অনেকের শরীরে। সুস্থতা ও অসুস্থতার সঙ্গে ঘুমের সরাসরি যোগ রয়েছে। বয়স অনুযায়ী ঘুমের সময় বেশি-কমও হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা সাধারণত দিনে আট ঘণ্টা ঘুমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে অনেক সময় শারীরিক অবস্থা, কাজ, বয়স, ওজন ইত্যাদির কারণে ঘুম বেশি-কম হতে পারে। স্লিপ ফাউন্ডেশনের দেওয়া সময়সূচি অনুযায়ী সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুম প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য যথেষ্ট। কম ঘুমকে অনেকে হালের ট্রেন্ড মনে করেন। উঠতি বয়সীরা দিনে ঘুমিয়ে রাতে জেগে থাকার মতো অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলে, যা পরবর্তী সময়ে তাদের মারাত্মক সব অসুখের দিকে ঠেলে দেয়। ঘুমে অনিয়ম হলে দেখা দিতে পারে ডিপ্রেশনের মতো মানসিক অসুস্থতা। তাই শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি।
ঘুম কম হলে যেসব সমস্যা হতে পারে
* বাড়তে পারে অবসাদ। কাজের ক্ষেত্রে কমে মনঃসংযোগ।
* অনেকক্ষেত্রে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, ধৈর্যও কমতে থাকে। ফলে অনেকের সঙ্গে মনোমালিন্য হতে পারে।
* গ্রোথ হরমোন ঘুমের মধ্যে বেশি নিঃসৃত হয়। তাই ঘুম কম হলে শিশুর বৃদ্ধি কম হয়।
* ঘুম কম হলে বাড়ে রক্তচাপের সমস্যা। সেইসঙ্গে দেখা দিতে পারে হৃদরোগ ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ।
ভালো ঘুমের জন্য যা করবেন
* ঘুমের একটি রুটিন তৈরি করুন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার ও ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে।
* দিনের বেলা ঘুমানোর অভ্যাস থাকে অনেকের। তবে এই ঘুম যেন কোনোভাবেই ৪৫ মিনিটের বেশি না হয়।
* ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে বাদ দিন। কারণ এগুলোও ঘুম কমিয়ে দেয়।
* শরীরচর্চা করা ভালো। তবে ঘুমের আগে শরীরচর্চার অভ্যাস মোটেই ভালো নয়। ঘুমের আগে কোনোরকম শরীরচর্চা করবেন না। রাতের খাবারে তেল-ঝোল ও মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন।
* বিছানা যেন আরামদায়ক ও পরিচ্ছন্ন হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। বিছানায় হালকা রঙের চাদর ও বালিশের কভার ব্যবহার করুন। এতে ঘুম প্রশান্তিদায়ক মনে হবে।
এইচএন/এএ/এমএমজে