একজন সুখী মানুষের গল্প
গত বছর আমরা দেখেছি প্রকৃতি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। বিশ্বব্যাপী মানুষ একসঙ্গে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ায় সব ধরনের গতিশীল কাজে বিঘ্ন ঘটেছে। অর্থ ও ক্ষমতা কখনোই মানসিক কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে পারে না। যদিও অনেক মানুষ মনে করেন, সুখ কেবল ধনাঢ্য ও ক্ষমতাবান মানুষ করায়ত্ত করে রেখেছে। অনেক সময় একজন দরিদ্র মানুষ অনায়াসে সুখী জীবনযাপন করতে পারে এবং ধনাঢ্য ব্যক্তির অনেক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও সুখ লাভ করতে পারে না।
সুখ বিষয়টি আপেক্ষিক। অনেকে অন্য মানুষকে সহায়তার মাধ্যমে নিজে সুখ পেতে চায়। কিন্তু অন্যকে সুখী করার পূর্বশর্ত নিজে সুখী হওয়া। দিনের শুরুতে ও শেষে এমন কোনো কাজ করা জরুরি যা আপনাকে সুখের অনুভূতি এনে দেয়। সকালে ঘুম থেকে জাগার পর আমাদের কারও এ প্রশ্ন মাথায় আসে না যে রাতে ঘুমানোর সময়েও আমরা সুখী থাকবো কি না।
সফলতা ও ব্যর্থতা উভয়ের মিশ্রণেই জীবন। প্রেমের সম্পর্ক, কর্মজীবন, স্বাস্থ্য এবং জীবনের আরও অনেক ক্ষেত্রে সফলতা ও ব্যর্থতা দুটোই আসতে পারে। কিন্তু জীবনের গভীরতম বাস্তবতা হলো চ্যালেঞ্জ। ক’জন মানুষ চ্যালেঞ্জ নিতে পারেন? ব্যক্তিগতভাবে আমি জীবনের ইতিবাচক দিককেই বেছে নিয়েছি ও জীবনের গভীরতম উপলব্ধিতে বিশ্বাস করি। যেমন শৈশবে আমি মিষ্টি খেতে খুব পছন্দ করতাম। আবার ওজন কমাতেও চাইতাম। এমনকি আমি অ্যালেক্সাকেও ব্যায়ামের ব্যাপারে বলেছি। কিন্তু চকোলেট ও কেকজাতীয় খাবার খাওয়ার ব্যাপারে কোনো কিছু বলিনি। কিন্তু এর মাধ্যমে নিজের ওজন কমানোর ব্যাপারে আমি কীভাবে আশা করতে পারি? তাই হাঁটার বদলে আমি ব্যায়াম করা শুরু করি এবং মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া একেবারেই কমিয়ে দিই। হাঁটার অভ্যাসের মাধ্যমে আমার স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় এবং ওজন কমাতে সমর্থ হই। ব্যায়াম আমাকে স্বাস্থ্যবান বানিয়েছে এবং পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস আমার ওজন কমাতে সহায়ক হয়েছে।
একসময় আমি নিজেকে খুব একা ভাবতাম এবং ভয় পেতাম। তখন আমি অন্য মানুষের সঙ্গে মেলামেশার প্রয়োজন অনুভব করতাম এবং সব কথা বলা যায় এমন কোনো মানুষকে খুঁজে বেড়াতাম। সোশ্যাল মিডিয়াতে ভিডিও কলের মাধ্যমে একে অন্যের সঙ্গে অনেকেই যোগাযোগ করেন। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, আমাদের অনেকেই অন্য মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।
সমাজের অংশ হিসেবে আমাদের সবারই দায়িত্ব রয়েছে অন্যকে সুখী রাখা এবং পৃথিবীকে ভালো একটি জায়গা হিসেবে রেখে যাওয়া। কথা শোনার মানসিকতাও আমাদের অনেককে সুখ দেয়। এর জন্য সময় বা অর্থ ব্যয় করতে হয় না। মনে রাখতে হবে, নিজের ও অন্যের ভালো থাকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার ও সমাজকে ভালো রাখার মাধ্যমে নিজে সুখী থাকা যায়।
আজ আমি বিশ্বের সবচেয়ে সফল উদ্যোক্তাদের অংশ নই- এ কথা আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি। সকালবেলায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নাশতা খাওয়ার পর গাছে পানি দিই। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে বেশি করে গাছে পানি দিই এবং পাখিদেরকেও পানি খাওয়াই। গরম বা বৃষ্টির সময় রাস্তায় হাঁটার সময়ে অপরিচিত মানুষের সঙ্গে আমি আমার ছাতা শেয়ার করি। মাঝেমধ্যে অন্যদের সঙ্গে স্যানিটাইটাইজারও শেয়ার করি। মানুষের প্রতি যত্নশীল আচরণ, ভাগাভাগি ও মানুষের কথা শোনার মনোভাব এবং ভালোভাবে কথা বলার অভ্যাস থাকলে দৈনন্দিন জীবনে সুখী হওয়া যায়।
পরিশেষে আমি একটি কথা বলতে চাই, নারীর প্রতি আমাদের যত্নবান হওয়া উচিত। এমন অনেক নারী রয়েছেন যারা নিজের কথা ভাবার সময় পান না। এসব নারীকে সময় দিলে তারা অনেক খুশি হন। তাদেরকে খুশি করার মাধ্যমে নিজেকেও সুখী রাখা যায়।
আমাদের সবাইকেই অন্যদের সুখী রাখার জন্য অনেক কিছু করা উচিত। আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে ও অন্য মানুষকে সুখী রাখতে যথাসম্ভব চেষ্টা করে যেতে হবে। তাই আপনাদের সহযোগিতার কথা শুনতে আমি আমার কান দু’টি খোলা রেখেছি এবং জীবনে সফলতা অর্জন করার জন্য অনেক মানুষের কাছ থেকে শিক্ষা অর্জন করেছি। বিশ্ব সুখ দিবসে আমার আহবান, নিজে সুখী হোন, অন্যকে সুখী রাখুন এবং পৃথিবীতে মানুষের বেঁচে থাকার পরিবেশ নিশ্চিত করুন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এনকেএইচ ফাউন্ডেশন প্রাইভেট লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ সার্চ সার্ভিস বিভাগের পরিচালক নাভিন খাজাঞ্চির লেখা অবলম্বনে এইচএকে/এইচএন/এএ