ভালোবাসার মাতৃভাষা
যত ভাষাই আপনি শিখুন না কেন, মাতৃভাষায় কথা বলার আনন্দ পৃথিবীর আর কোথাও পাবেন না। মায়ের মুখ থেকে প্রথম শোনা হয় বলেই কি এই ভাষাকে মাতৃভাষা বলা হয়? সেই যে একটি, দু’টি করে শব্দ বলতে শেখা; হঠাৎ একদিন মায়ের ভাষায়ই ‘মা’ বলে ডেকে ওঠা! তারপর কত-শত শব্দ, কত কী যে তার অর্থ। কত মন খারাপ, বিষণ্ণ ভাবনা, কত আনন্দের স্মৃতির অনুবাদ হয় এই বাংলা ভাষায়। যেখানে এবং যতদূর যান, আপনার অংশ হয়ে আপনার সঙ্গেই থেকে যাবে মাতৃভাষা।
ভাষার জন্য প্রাণ
মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে পরিচিত আমরা। ১৫৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলা হোক এই দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছিল তারুণ্যে ভরা সব প্রাণ। এরপর বুকের রক্তে রাজপথ ভিজিয়ে, নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে আমাদের জন্য রেখে গেছে মাতৃভাষা, আমাদের বাংলা ভাষা। এর প্রতিদান আমরা পেয়ে এসেছি নানাভাবে। জাতিসংঘ ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। বিশ্বের মানুষ আমাদের চেনেন ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া জাতি হিসেবে, এটুকুও তো কম গৌরবের নয়!
আমরা কতটা ভালোবাসি?
মাতৃভাষা আমাদের অঢেল দিয়েছে, দিয়েছে প্রাণ খুলে কথা বলা, হাসি-কান্নার সুযোগ মেলে এই মাতৃভাষায়ই। আমাদের সবটা জুড়ে থাকার পরও মাতৃভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা আসলে কতটুকু? বিভিন্ন ভাষার ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ঢুকে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আমাদের মাতৃভাষাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছি না তো? অনেক মা-বাবাকে খুশি হতে দেখা যায় কারণ তাদের শিশু সন্তান কার্টুন দেখে দেখে ভিনদেশি ভাষা শিখছে এবং দৈনন্দিন জীবনে তার প্রয়োগও ঘটাচ্ছে। নিজ ভাষা ছাড়াও অন্য আরও ভাষা শেখা দোষের কিছু নয়, বরং দক্ষতারই পরিচয়। কিন্তু যদি এমন হয় যে অন্য ভাষা শিখতে গিয়ে নিজের ভাষা ভুলে যাচ্ছে, তখন সেটি অবশ্যই দুশ্চিন্তার বিষয়। তাই নিজেরা সচেতন হওয়ার পাশাপাশি শিশুদেরও এর অংশ করে নিতে হবে। ভাষার জন্য ভালোবাসা তাদের হৃদয়ে যেন জন্মে এবং থেকে যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
ভালোবাসা বেঁচে থাকুক
ভাষার জন্য ভালোবাসা ছড়িয়ে যাক হৃদয় থেকে হৃদয়ে। ভাষার জন্য আমাদের পূর্বপুরুষের অবদান যেন আমরা ভুলে না যাই। তাই নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের মাতৃভাষা গৌরবভরা ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। মাতৃভাষাকে ধারণ করতে হবে হৃদয়ে। আমাদের চলন-বলন, প্রতিদিনের সব কাজে মাতৃভাষা মিশে থাকুক। শুধু বছরের একটি দিন নয়, মাতৃভাষাকে ধারণ করুন জীবনজুড়ে।