শিগগিরই আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ, আলোচনায় যারা
দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে প্রধান বিচারপতিসহ চারজন বিচারপতি রয়েছেন আপিল বিভাগে। এরমধ্যে জ্যেষ্ঠতার নিরিখে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ-বঞ্চিত বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী দীর্ঘ ছুটিতে গেছেন।
সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছে, আপিল বিভাগে এই বিচারপতি সংকট কাটাতে ৫ থেকে ৬ জন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এ সপ্তাহের শেষে অথবা আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। তবে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ শেষ হবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
একসঙ্গে ৫ থেকে ৬ জন বিচারপতি নিয়োগের কারণ প্রসঙ্গে সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন আপিল বিভাগে দুটি বেঞ্চে বিচারকার্য চলতো। বিচারপতি স্বল্পতার কারণে বর্তমানে আপিল বিভাগে একটি বেঞ্চে তিনজন বিচারপতি বিচারকার্য পরিচালনা করছেন। এর মধ্যে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর, বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ২০২৩ সালের ৩০ জুন এবং বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ২০২৬ সালের ১০ জানুয়ারি অবসরে যাবেন। আগামী দুই-তিন বছর যেন আপিল বিভাগে বিচারক সংকট না হয় সে বিষয়টি মাথায় রেখে ৫ থেকে ৬ জন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। আপিল বিভাগে নতুন নিয়োগ দেওয়ার পর মামলাজট নিরসন করতে আগের মত দুটি বেঞ্চে বিচারকার্য পরিচালনা করা হবে।
সংবিধান অনুযায়ী, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের মধ্যে থেকে আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন।’
হাইকোর্ট থেকে কারা আপিল বিভাগের বিচারপতি হচ্ছেন, এ বিষয়ে আইনাঙ্গনে জোরালো আলোচনা চলছে। এরমধ্যে বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি মামনুন রহমান, বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান, বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ, বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম, বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের নাম ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এটা তো মহামান্য রাষ্ট্রপতির ব্যাপার। যতটুকু আমি জানি খুব শিগগিরই আপিল বিভাগে তিনি বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। আপিল বিভাগে বিচারপতি পদের সংখ্যা বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, কতজন বিচারপতি আপিল বিভাগে থাকবেন সে বিষয়ে সংবিধানে কিছু লেখা নেই। অনেক সাংবাদিক লেখেন আপিল বিভাগে বিচারপতির পদের সংখ্যা ১১টি। এটা সঠিক নয়। সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নেই। এক সময় ১১ জন বিচারপতিকে আপিল বিভাগে নেওয়া হয়েছিল। তার কারণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা করার জন্য যারা ছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় দিয়েছেন এবং কিছু বিচারপতি বিব্রতবোধ করেছিলেন। সেজন্য ১১ জন বিচারপতি নেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ৫ জন বিচারপতি রাখার জন্য।’
সংবিধানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতির কোনো সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। সংবিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির পরামর্শ ও প্রয়োজন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন সময়ে বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে সংবিধানের ৯৪ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ ও নিয়োগ করে থাকেন। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “প্রধান বিচারপতি (যিনি ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ নামে অভিহিত হইবেন) এবং প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি যেরূপ সংখ্যক বিচারক নিয়োগের প্রয়োজনবোধ করিবেন, সেইরূপ সংখ্যক অন্যান্য বিচারক লইয়া সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হইবে।" সংবিধান অনুযায়ী ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত বিচারপতি পদে থাকা যায়।
জানা গেছে, আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের পরই হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেবে সরকার।
এমএইচডি/এসএম