ভালোবাসার জয় : সেই তুষার দাসকে খালাস দিলেন হাইকোর্ট
স্ত্রীকে অপহরণের অভিযোগে শাশুড়ির দায়ের করা মামলায় নিম্ন আদালতে ১৪ বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত শরীয়তপুরের তুষার দাস ওরফে রাজকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। রোববার (১২ ডিসেম্বর) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে তুষার দাসের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
হরিজন সম্প্রদায়ের ছেলে হয়ে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের মেয়ে সুস্মিতাকে ভালোবেসে বিয়ে করার পর নাবালিকা মেয়েকে অপহরণের অভিযোগে তুষারের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন তার শাশুড়ি। ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট হাইকোর্টের আদেশে মুক্তি পান কারাগারে থাকা তুষার দাস। ২০১৯ সালের ১ আগস্ট শাশুড়ির দায়ের করা অপহরণ মামলায় কারাগারে থাকা তুষার দাসকে জামিন দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে নিম্ন আদালতের দেওয়া অর্থদণ্ড স্থগিত করেন আদালত।
ওইদিন আদালত বলেছিলেন, আমাদের সমাজে এ রকম অসম বিয়ে হলে সমাজচ্যুত আশঙ্কা থাকে। কিন্তু আইন তো ভিন্ন। একদিকে আইন একদিকে বাস্তবতা। আমাদের সমাজে উঁচু-নিচু জাতের একটা সমস্যা রয়েছে। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। স্বামী দলিত সম্প্রদায়ের হলে মেয়ের বাবা যদি মেনে নেয় তবে তার পরিবারিকভাবে সমাজচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ বাস্তবতাও ভাবতে হবে।
তুষার দাসকে নিম্ন আদালতের দেওয়া ১৪ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।
তুষার ও সুস্মিতা ভালবেসে বিয়ে করেন প্রায় চার বছর আগে। তাদের সংসারে আছে এক কন্যা সন্তান। কিন্তু তুষার দাস নিম্ন বর্ণের হওয়ার কারণে শুরুতেই এই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি সুস্মিতার বাবা-মা। মেয়ে নাবালিকা এই অভিযোগ তুলে সুস্মিতার মা তুষারের বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা করেন। মামলায় অপহরণের দায়ে তুষারকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন শরীয়তপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা জজ আ. ছালাম খান। সুস্মিতা দেবনাথ স্বেচ্ছায় তুষার দাসকে বিয়ে করার কথা বললেও তার কথা আমলে না নিয়ে এই আদেশ দেন আদালত।
২০১৯ সালের ২৩ জুলাই আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তুষার। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তিনি আপিল করেন। স্বামীকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড থেকে মুক্ত করতে উচ্চ আদালতে আপিল করেন স্ত্রী সুস্মিতা দেবনাথ।
সুস্মিতা দেবনাথ ওই সময় বলেছিলেন, আমার একটাই অপরাধ, আমি ব্রাক্ষণ বর্ণের মেয়ে হয়ে হরিজন বর্ণের ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। আইনের মারপ্যাঁচে আমাদের জীবন আজ বিপন্ন।
আজ রোববার হাইকোর্টের খালাসের রায়ের পর সুস্মিতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ে আমার স্বামীকে খালাস দেওয়ায় খুব খুশি হয়েছি। এখন আমরা নিশ্চিতে সংসার করতে পারব। আশা করি আজকের রায়ের পর আমার বাবা আমাদের ভালোবাসার বিয়েকে মেনে নেবে।
এমএইচডি/আইএসএইচ