পুলিশের বোঝা উচিত মানুষের জীবন অত্যন্ত মূল্যবান : হাইকোর্ট

পুলিশ বিভাগের বোঝা উচিত মানুষের জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। আইনি ভিত্তি ছাড়া পুলিশ রিমান্ড চাইতে পারে না। এমন মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।  

মাদক মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমণিকে দফায় দফায় রিমান্ডে নেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার দেওয়া লিখিত আদেশে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

পাঁচ পৃষ্ঠার লিখিত আদেশে হাইকোর্ট বলেছেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ভঙ্গ করে তদন্তকারী কর্মকর্তা পরীমণিকে তিনবার রিমান্ডে নিয়েছেন, যেখানে প্রথমবারই রিমান্ডে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার যথেষ্ট সময় পেয়েছেন। 

হাইকোর্ট আরও বলেন, পুলিশ ডিপার্টমেন্টের বোঝা উচিত, মানুষের জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। আইনি ভিত্তি ছাড়া পুলিশ রিমান্ড চাইতে পারে না। অথচ এ মামলায় পুলিশ তাকে তিনবার রিমান্ডে নিয়েছে, যা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

গত ২৯ আগস্ট উচ্চ আদালতের রায় না মেনে চিত্রনায়িকা পরীমণির বারবার রিমান্ডকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র। আবেদনে পরীমণিকে রিমান্ডে নেওয়ার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের রায় না মানার অভিযোগ আনা হয়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে অ্যাডভোকেট সৈয়দা নাসরিন এ আবেদন দায়ের করেন।

এরপর গত ২ সেপ্টেম্বর চিত্রনায়িকা পরীমণিকে দফায় দফায় রিমান্ড মঞ্জুরের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিচারকদের কাছে ব্যাখ্যা চান হাইকোর্ট। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া, পরীমণির মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকেও তলব করেন হাইকোর্ট। ১০ দিন পর তাদের আদালতে হাজির হতে বলা হয়। এছাড়া পরীমণির বিরুদ্ধে বনানী থানায় দায়ের করা মাদক মামলার সব নথি ও মামলার কেস ডকেটও তলব করা হয়।

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও সৈয়দা নাসরিন।

গত ১৯ আগস্ট রাজধানীর বনানী থানায় দায়ের করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় পরীমণির তৃতীয় দফায় এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর আগেও পরীমণিকে প্রথম দফায় চার দিন ও দ্বিতীয় দফায় দুদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি।

এদিকে, গত ২৬ আগস্ট হাইকোর্ট পরীমণিকে ‘জামিন না দিয়ে তার আবেদন শুনানির তারিখ দেরিতে ঠিক করা’ প্রশ্নে রুল জারি করেন। রুলে পরীমণির জামিন আবেদন আদেশ পাওয়ার দুই দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এ ছাড়া জামিন আবেদন শুনানির জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর তারিখ নির্ধারণ করে নিম্ন আদালতের দেওয়া আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়।

হাইকোর্টের এই রুলের পর গত ৩১ আগস্ট জামিন আবেদনের শুনানি করে পরীমণিকে জামিন দেন বিচারিক আদালত। ১ সেপ্টেম্বর পরীমণি কারাগার থেকে মুক্তি পান।

গত ৪ আগস্ট পরীমণিকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন র‍্যাব ১-এর কর্মকর্তা মো. মজিবর রহমান।

এমএইচডি/আরএইচ/জেএস