মতপ্রকাশ ও স্বাধীন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে জুলহাজ-তনয়কে হত্যা
আসামিরা সব নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য। সমকামীদের নিয়ে র্যালি করাসহ তাদের সমাজে প্রতিষ্ঠার দায়ে ভিকটিম জুলহাজ ও তনয়কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মূলত এই মামলার অভিযুক্ত আসামিদের অভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল জননিরাপত্তা বিপন্ন করার জন্য আতঙ্ক সৃষ্টি করার মাধ্যমে মতপ্রকাশ ও স্বাধীন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করা।
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) জুলহাজ-তনয় হত্যা মামলায় রায়ের পর্যবেক্ষণে এ কথা বলেন বিচারক।
বিচারক বলেন, এক্ষেত্রে অভিযুক্ত আসামিদের কারো ভূমিকা ছোট বড় করে দেখার সুযোগ নেই। তাই এ রায়ে ছয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। এতে করে একদিকে নিহতদের আত্মীয়রা শান্তি পাবেন এবং অন্যদিকে ভবিষ্যতে এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করতে ভয় পাবেন।
আসামিরা আদালতে পুলিশের সঙ্গে কেন বিতর্কে জড়িয়েছে, রায়ের পরে জানতে চাইলে আদালত প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির সাংবাদিকদের বলেন, আমি আরও লক্ষ্য করেছি রায় ঘোষণার পর তাদের মধ্যে কোনোরকম অনুশোচনা নেই। তারা তখন হাসছিল। এতে বোঝা যায় তারা কতটুকু ভয়ঙ্কর। তারা পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা করবে মানুষের সঙ্গেও করবে। তাদের কাজই জঙ্গি তৎপরতা।
যেসব দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের গ্রেফতার করা যায়নি তাদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মেজর (অব.) জিয়াসহ যেসব আসামিরা দণ্ডপ্রাপ্ত রয়েছেন তাদের গ্রেফতার করতে পুলিশ চেষ্টা করছে। যখনই গ্রেফতার করা হবে তখনই তাদের দণ্ড কার্যকর করা হবে।
গ্রেফতারের বিষয়ে পুলিশের গাফিলতি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মনে করি না পুলিশের গাফিলতি রয়েছে, এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট তৎপর। পলাতক আসামিরা কে কোথায় আছে তারা অবশ্যই খুঁজে বের করবে। পুলিশ ঠিকই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
হত্যাকাণ্ডে কে কে অংশগ্রহণ করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ আদালতে যেসব আসামি উপস্থিত ছিলেন তারা সবাই হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছে। তারা ভিকটিমদের বাসায় গিয়ে ডেলিভারি এসেছে বলে ভেতরে প্রবেশ করে। বাসায় প্রবেশ করে সবাই একসঙ্গে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ভিকটিমদের হত্যা করে।
রাজধানীর কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়কে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আট আসামির মধ্যে ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বাকি দুই জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল জিয়া, আকরাম হোসেন, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, আরাফাত রহমান, শেখ আব্দুল্লাহ ও আসাদুল্লাহ। একইসঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়ে খালাস পাওয়া দুই জন হলেন- সাব্বিরুল হক চৌধুরী ও মওলানা জুনায়েদ আহম্মেদ।
রায় পড়া শুরুর আগে আসামি মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, আরাফাত রহমান, শেখ আব্দুল্লাহ ও আসাদুল্লাহকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। পলাতক রয়েছেন মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল জিয়া, আকরাম হোসেন, সাব্বিরুল হক চৌধুরী ও মওলানা জুনায়েদ আহম্মেদ।
এমএসি/টিএইচ/জেডএস