পার্থ গোপাল বণিকের জামিন : হাইকোর্টে বিচারকের ক্ষমা প্রার্থনা
দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের করা মামলায় ডিআইজি প্রিজনস পার্থ গোপাল বণিককে অস্বাভাবিকভাবে জামিন দেওয়ার ঘটনায় হাইকোর্টে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত–৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেন।
গত বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা ব্যাখ্যায় তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। বিচারকের লিখিত ব্যাখ্যার একটি কপি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে।
লিখিত ব্যাখ্যায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার শেষ না করে বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি প্রিজনস পার্থ গোপাল বণিককে জামিন দেওয়ার ভুলের জন্য হাইকোর্টে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাকে অব্যাহতি দিতেও আবেদন করেছেন ওই বিচারক।
হাইকোর্টের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে লিখিত ব্যাখ্যা দেন জজ ইকবাল হোসেন।
ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, ফৌজদারি আপিল নং (১০৫৩৪/১৯) মামলায় গত বছরের ২ নভেম্বর হাইকোর্ট এক আদেশে পার্থ গোপাল বণিকের মামলার বিচার ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্নের জন্য জজ ইকবাল হোসেনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই আদেশ যথা সময়ে না পৌঁছায় ছয় মাসের সময়সীমা অতিক্রম হয়েছে বলে আসামির আইনজীবী বিশেষ আদালতকে জানায়। এছাড়া ফৌজদারি রিভিশন মামলা নং (১৪৫/২১) মামলায় গত ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্ট অপর এক আদেশে মামলাটির বিচার এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন করতে বলা হয়। গত ১০ মার্চ এই আদেশের অনুলিপি পান। এই আদেশে উল্লিখিত সময়সীমার মেয়াদ এখনো রয়েছে। বিশেষ আদালতের বিচারক ইকবাল হোসেন ব্যাখ্যায় বলেছেন, তিনি হাইকোর্টের আদেশ প্রতিপালনে সদা সচেষ্ট রয়েছেন।
এর আগে গত ২৮ জুন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার শেষ না করে পার্থ গোপাল বণিককে অস্বাভাবিকভাবে জামিন দেওয়ার ঘটনায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত–৫–এর বিচারক ইকবাল হোসেনের কাছে ব্যাখ্যা চান হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পার্থ গোপাল বণিক অস্বাভাবিকভাবে জামিন দেওয়ার বিষয় নিয়ে চ্যানেল ২৪-এ প্রচারিত প্রতিবেদনের ভিডিও ক্লিপ আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া পার্থ গোপাল বণিকের জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন আদালত।
৮০ লাখ টাকাসহ হাতে নাতে গ্রেফতার বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি প্রিজনস পার্থ গোপাল বণিককে অস্বাভাবিকভাবে জামিন দেওয়ার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন। এছাড়া তার জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে দুদক।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিক গত ১৯ জুন জামিন পান। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত–৫–এর বিচারক ইকবাল হোসেন ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন। জামিন আদেশ নিয়ে তার পরদিনই তিনি জেল থেকে বের হন। অনেকটা গোপনে ও তড়িঘড়ি করে জামিন পেয়ে কারামুক্ত হন তিনি।
এই মামলায় গত বছরের ৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
২০১৯ সালের ২৭ জুলাই ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিক চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তখন তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৮০ লাখ টাকা অর্জন করেন। সেই টাকা পার্থ গোপাল বণিক তার নিজ বাসার ক্যাবিনেটে লুকিয়ে রাখেন। অভিযান পরিচালনা করে তার বাসা থেকে ওই টাকা জব্দ করা হয়।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি পার্থ গোপাল বণিক গত বছরের ২৮ জুলাই দুদকে হাজির হয়ে অনুসন্ধান টিমের কাছে বক্তব্য দেন। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে পার্থ গোপাল বণিক জানান, তার বাসায় ৩০ লাখ টাকা নগদ আছে। তবে ওই টাকার বৈধ উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। পরে অভিযান চালিয়ে তাঁর বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। এই মামলায় হাইকোর্টে একাধিকবার জামিন আবেদন করেও তিনি জামিন পাননি।
এমএইচডি/এমএইচএস