বিনা পয়সায় আইনি লড়াই : ফাঁসির আসামির দণ্ড কমলো
নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রথম স্ত্রী হত্যার অভিযোগে স্বপন কুমার বিশ্বাসের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এই আসামিকে কনডেম সেল থেকে সাধারণ সেলে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১২ জুলাই) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই রায় দেন।
আদালতে বিনা ফিতে আসামি স্বপন কুমার বিশ্বাসের পক্ষে মামলা পরিচালনা করায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান আপিল বিভাগ। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিনা ফিতে তিনি মামলা পরিচালনা করেছেন উল্লেখ থাকবে বলে আপিল বিভাগ জানান।
এর আগে গত ৮ জুলাই শুনানিতে প্রখ্যাত ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, স্ত্রী স্বপ্না ঘোষকে পূর্বপরিকল্পনা করে হত্যা করা হয়নি। পারিবারিক ঝগড়ার এক পর্যায়ে উত্তেজিত অবস্থায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে আসামি স্বপন কুমার বিশ্বাসকে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন দণ্ড কোনটাই দেওয়া সমীচীন হবে না। এ মামলায় প্যানেল কোডের ৩০৪/২ ধারা অনুযায়ী আসামির সর্বোচ্চ সাজা ১০ বছরের বেশি হতে পারে না।
খন্দকার মাহবুব হোসেনকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরসেদ।
বিনা পয়সায় মামলা করার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, কারাগার থেকে স্বপন কুমার বিশ্বাস নামে ওই ফাঁসির আসামি অনেক কাকুতি-মিনতি জানিয়ে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে লিখেছেন, তিনি দরিদ্র মানুষ। আইনজীবী রেখে মামলা পরিচালনা করার সামর্থ্য তার নেই। এ কারণে তার মামলাটি ফ্রি পরিচালনা করেছি।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালের ১৬ অক্টোবর নীলফামারীর সৈয়দপুর থানার নয়াটোল গ্রামে প্রথম স্ত্রী স্বপ্না ঘোষকে (৩৫) হত্যা করেন তার স্বামী স্বপন কুমার বিশ্বাস। স্বপ্নাকে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করার ঘটনায় ঝগড়ার এক পর্যায়ে স্ত্রীকে মাথায় আঘাত করে খুন করা হয়। পরে তার গলায় দড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়। একই বছরের ২৮ অক্টোবর সৈয়দ থানার পুলিশের এসআই শফিউল হক স্বপন কুমার বিশ্বাসের নামে মামলা করেন। ওইদিনই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
১৩ জনের সাক্ষী গ্রহণ করে ২০০৮ সালের ১৮ নভেম্বর নীলফামারীর দায়রা জজ আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল বিচারপতি সাহিদুল ইসলাম ও বিচারপতি আব্দুর রবের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এর বিরুদ্ধে আসামি স্বপন কুমার বিশ্বাস আপিল করেন।
এমএইচডি/এইচকে