প্রকৌশলী মোজাম্মেলকে ডিমোশন : ওয়াসার সিদ্ধান্ত হাইকোর্টে স্থগিত
সাংবাদিকদের তথ্য সরবরাহ করার অভিযোগে ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হককে যে পদাবনতীর (ডিমোশন) সিদ্ধান্ত দিয়েছিল ওয়াসা, তা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এক মাসের জন্য এই স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে।
এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (১১ জুলাই) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের বিশেষ হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এস এস আরেফিন জুননুন।
আইনজীবী এস এস আরেফিন জুননুন জানান, গত ৪ জুলাই ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের স্বাক্ষরিত চিঠিতে ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হককে পদাবনতীর সিদ্ধান্ত জানানো হয়। অথচ ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান ছুটিতে দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি কোনো চিঠিতে স্বাক্ষর করতে পারেন না। এ কারণে রিট দায়ের করা হয়।
জানা যায়, ২০১৭ সালের জুলাই ও আগস্টে তিনটি জাতীয় দৈনিকে ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খাল ও জলাবদ্ধতা বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই পত্রিকাগুলোর প্রকাশিত প্রতিবেদনে ঢাকা ওয়াসার তৎকালীন ড্রেনেজ সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হকের মতামত উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওয়াসার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। সংস্থার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিনকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি গত বছরের ২১ ডিসেম্বর প্রকৌশলী মোজাম্মেল হককে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন জমা দেন।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযোগের বিষয় উদ্ঘাটনের জন্য সংশ্লিষ্ট পত্রিকার প্রতিবেদকদের বরাবর ৫ বার চিঠি দেওয়া হলেও কোনো সাড়া আসেনি। পরে প্রতিবেদকদের সঙ্গে সশরীরে দেখা করেন তিনি (রুহুল আমিন)। সে সময় তারা (প্রতিবেদকরা) এ বিষয়ে লিখিত বক্তব্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে তারা জানান, প্রতিবেদনে প্রকাশিত মতামত প্রকৌশলী মোজাম্মেল হকের সঙ্গে কথা বলে তুলে ধরা হয়েছে। আর মোবাইল ফোনে তারা (প্রতিবেদকরা) এ মতামত নিয়েছেন তার (প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক) কাছ থেকে।
তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ চাকরি প্রবিধানমালা-২০১০ এর ৩৭(৬) উপধারা মতে, কর্তৃপক্ষের বিষয়াদি সম্পর্কে সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ স্থাপন করে বিবৃতি প্রদান করা আইনত নিষিদ্ধ বিধায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যুক্তিযুক্ত। ৮ জানুয়ারি ঢাকা ওয়াসার সচিব দ্বিতীয় দফায় প্রকৌশলী মোজাম্মেল হককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।
সেখানে বলা হয়েছে, ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন প্রবিধানমালা ২০১০-এর ৩৭-এর ৬ প্রবিধি মতে, ‘কোনো কর্মচারী কর্তৃপক্ষের বিষয়াদি সম্পর্কে সংবাদপত্র বা অন্য কোনো গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন না’ মর্মে উল্লেখ রয়েছে। এ বিধান থাকা সত্ত্বেও আপনি সংস্থার একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা হয়েও সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন। এতে কর্তৃপক্ষের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এছাড়া এরূপ কার্যকলাপ ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি প্রবিধানমালা-২০১০ এর ৩৮(খ) প্রবিধিমতে অসদাচরণ বলে গণ্য। আপনার এরূপ কার্যকলাপ অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধের শামিল। তার প্রেক্ষিতে আপনি কারণ দর্শানোর জবাব দিয়েছেন, যেটা কর্তৃপক্ষের কাছে সন্তোষজনক না হওয়ায় আপনার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়েছে।
২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর রুজু করা ওই বিভাগীয় মামলা নম্বর ১২/১৭। নোটিশে আরও বলা হয়, যেহেতু আপনি জবাব দাখিল করেন এবং সেখানে আপনি ব্যক্তিগত শুনানির ইচ্ছা প্রকাশ করায়, শুনানি গ্রহণ করা হয়েছে। দাখিলকৃত জবাব ও শুনানিকালে প্রদত্ত বক্তব্য সন্তোষজনক না হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তার দাখিলকৃত বক্তব্য হতে দেখা যায়, আপনার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগে আপনি দোষী প্রমাণিত হয়েছেন। আর এ কারণে আপনার বিরুদ্ধে সংস্থার প্রবিধান মালার ৩৯(১) খ-এর (ঈ) ধারামতে সংস্থার চাকরি হতে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় এক সপ্তাহের মধ্যে তাকে কারণ দর্শানোর জবাব দিতে বলা হয়েছে।
প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ দর্শানোর জবাব দিয়েছেন। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, তিনটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত মতামতে তারা নাম উল্লেখ থাকলেও প্রতিবেদকরা কোনো লিখিত বক্তব্য, অডিও ক্লিপ বা অন্য কোনো প্রকার প্রমাণপত্র তদন্ত কর্মকর্তার নিকট পেশ করেননি। তদন্ত কর্মকর্তার এমন স্বীকারোক্তিতে আনিত অভিযোগের কার্যকারিতা থাকে না। এছাড়া ওই প্রতিবেদকদের সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তার কী কথা হয়েছে তার কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই।
এমএইচডি/এইচকে