পিপলস লিজিং পুর্নগঠন করে দিলেন হাইকোর্ট
পিকে হালদার কাণ্ডে আলোচনায় আসা আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডকে পুর্নগঠন বা পুনরুজ্জীবিত করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য একটি বোর্ডও গঠন করে দিয়েছেন আদালত। তবে বোর্ডে কারা থাকছেন তা লিখিত আদেশে জানা যাবে।
২০১ জন আমানতকারীর শুনানি নিয়ে সোমবার (২৮ জুন) বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজীব-উল আলম। পিএলএফএসএলের সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামানের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মেজবাহুর রহমান।
গত সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটির পুনর্গঠন বা পুনরুজ্জীবিত করার নির্দেশনা চেয়ে ২০১ জন আমানতকারী হাইকোর্টে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, আইন অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের কোনো বিধান নেই। তবে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একীভূত করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের একটি পরিকল্পনা বাংলাদেশ ব্যাংক নিতে পারে। পিএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হলে আমানতকারীদের ক্ষতির বোঝা আরও বাড়বে।
পরে আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, আদালত পিপলস লিজিংকে অবসায়ন না করার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। একে পুনরুজ্জীবিত করতে একটি বোর্ড গঠন করে দিবেন। সে বোর্ড কার নেতৃত্বে হবে, কে কে থাকবেন তা পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন আদালত।
গত ২১ জানুয়ারি পিএলএফএসএল থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন, এমন ২৮৬ জন ঋণ গ্রহীতাকে তলব করেন হাইকোর্ট। সাময়িক অবসায়ক আসাদুজ্জামান খানের দেওয়া তালিকা দেখার পর সেদিন এ আদেশ দেন উচ্চ আদালত।
ওই দিনের আদেশে আদালত ২৮৬ জনকে দুই ভাগে হাজির হতে দিন নির্ধারণ করে দেন। তাদের মধ্যে ১২২ ঋণ খেলাপি নির্ধারিত তারিখে আদালতে হাজির হননি।
এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধে সমন্বিতভাবে কীভাবে কাজ করা যায়, সে বিষয়ে গত ৯ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের বক্তব্য শোনেন আদালত। তাদের বক্তব্য শোনার পর তলবে হাজির না হওয়া ১২২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
ওই আদেশে বলা হয়, পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত তারা যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেজন্য সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সতর্ক এবং সজাগ থাকতে নির্দেশ দেওয়া হলো।
এদিকে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডের (পিএলএফএসএল) সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামানকে ওই ১২২ ব্যক্তি বা সত্তার বর্তমান ঠিকানা সরবরাহ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিতে বলা হয় তাকে।
১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস লিজিংকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে মেয়াদি আমানত ও বিভিন্ন ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির আমানত ছিল ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। আর ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপিই ৭৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হার ৬৬ শতাংশ।
২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে লোকসান দেয় ওই কোম্পানি। খেলাপি প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করতে না পারায় আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারেনি তারা। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিনই মামলার শুনানি শেষে অবসায়নের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন আদালত।
এছাড়া অবসায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার একজনকে অবসায়ক নিয়োগ দিতে বলা হয়।
পরে সাময়িক অবসায়ক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান খানকে নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এমএইচডি/জেডএস