আপিল শুনানির অপেক্ষায় আলোচিত চার মামলা
দেশজুড়ে আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলা, রিফাত হত্যা মামলা, অভিজিৎ হত্যা মামলা ও দীপন হত্যা মামলা এখন হাইকোর্টে। নিহতদের স্বজন ও দেশবাসী এসব চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার চূড়ান্ত বিচারের অপেক্ষায়। কিন্তু করোনার কারণে উচ্চ আদালতে অগ্রগতি নেই আপিল শুনানির। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার কারণে উচ্চ আদালতে চাঞ্চল্যকর এসব মামলার শুনানি আটকে আছে।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলছেন, হাইকোর্টের নিয়মিত বেঞ্চ বসলেই আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাইকোর্টে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নুসরাত হত্যা মামলার পেপারবুক প্রস্তুতের পর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আলোচিত অন্য মামলাগুলোরও পেপারবুক প্রস্তুতের পর প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেবেন। উপযুক্ত সময়ে এসব মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হবে।
জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শারীরিক উপস্থিতিতে নিয়মিত আদালত শুরু হলেই সব হত্যা মামলার শুনানির উদ্যোগ নেব। আলোচিতসহ সব হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল দ্রুত শুনানির জন্য বেঞ্চ বৃদ্ধি করতে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করব।
নুসরাত হত্যা মামলা : করোনাভাইরাসের কারণে বহুল আলোচিত ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিল শুনানি আটকে আছে। উচ্চ আদালতের নিয়মিত বেঞ্চ শুরু হলেই আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হবে। শুনানির জন্য বেঞ্চও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
গতবছরের মার্চ মাস থেকে নুসরাত হত্যা মামলা হাইকোর্টের কার্যতালিকায় রয়েছে। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এই মামলার শুনানি আটকে আছে।
নুসরাত হত্যা মামলায় ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর রায় দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাতকে হত্যার দায়ে বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর ২৯ অক্টোবর ডেথ রেফারেন্সের জন্য নুসরাত হত্যা মামলার রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আসে। নুসরাত হত্যা মামলায় দণ্ডিত সব আসামি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।
রিফাত হত্যা মামলা : বরগুনার বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলা হাইকোর্টে আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির অপেক্ষায় আছে। এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেওয়া প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, পেপারবুক প্রস্তুত হলেই রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও দ্রুত শুনানি হয় সে বিষয়ে আমরা উদ্যোগ নেব।
গতবছরের ৪ অক্টোবর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মিন্নিসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামির ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। ২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনের সড়কে রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ডের গড়া কিশোর গ্যাং ‘বন্ড গ্রুপ’। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ২ জুলাই মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
অভিজিৎ হত্যা মামলা : বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায় হত্যার মামলা এখন হাইকোর্টে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি লেখক অভিজিৎ রায় হত্যার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক ওরফে জিয়াসহ পাঁচ জঙ্গির ডেথ রেফারেন্স ও মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। এখন এ মামলার পেপারবুক প্রস্তুত হলেই আপিল শুনানির উদ্যোগ নিতে পারবে রাষ্ট্রপক্ষ।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যার মামলায় সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক ওরফে জিয়াসহ পাঁচ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড এবং উগ্রপন্থি ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান সাড়া ফেলা এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
এ মামলায় সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক ওরফে জিয়া, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ ওরফে শামস, আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। অপর আসামি উগ্রপন্থি ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবীকে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে জিয়া, সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব, আকরাম হোসেন ওরফে হাসিবকে প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলার রায়েও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
দীপন হত্যা মামলা : জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যার মামলা এখন উচ্চ আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দীপনকে কুপিয়ে হত্যার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকসহ আট জঙ্গির ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। এখন আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত করবে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যার মামলায় সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকসহ আট জঙ্গির ফাঁসির রায় দেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান।
রায়ে আট আসামির সবাইকে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে জিয়াসহ দুজন পলাতক রয়েছেন।
বাংলাদেশে লেখক-প্রকাশক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ওপর ধারাবাহিক হামলার মধ্যে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর আজিজ সুপার মার্কেটে নিজের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জাগৃতির কার্যালয়ে আক্রান্ত হন দীপন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের ছেলে দীপনকে গলাকেটে হত্যা করা হয়।
এমএইচডি/এসএসএইচ