ব্লগার নাজিম হত্যা মামলা : ৯ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদ। আজ থেকে ৯ বছর আগে ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল রাতে ক্লাস শেষে মেসে ফেরার পথে লক্ষ্মীবাজারের একরামপুর মোড়ে জঙ্গিরা হত্যা করে তাকে।
সেই ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার ৯ বছরেও শেষ হয়নি। কবে নাগাদ শেষ হবে সেটাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে, দ্রুতই মামলার বিচার শেষ হবে। আসামিপক্ষের আইনজীবী বলছেন, দোষীদের সাজা হোক। নির্দোষরা বের হয়ে আসুক। তবে নাজিমুদ্দিনের পরিবারের মামলা নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই।
নাজিমুদ্দিনকে হত্যার পরদিন সূত্রাপুর থানার উপ-পরিদর্শক মো. নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। চার বছর তদন্ত শেষে সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়াসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট।
মামলাটি বর্তমানে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আবদুল হালিমের আদালতে বিচারাধীন। মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। সর্বশেষ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মামলার বাদী নুরুল ইসলাম সাক্ষ্য দেন। আগামী ১৯ মে সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে।
মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ চলমান। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষী হাজির করে মামলার অভিযোগ প্রমাণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। ভুক্তভোগী পরিবার যেন ন্যায়বিচার পায়। বিচার দ্রুত শেষ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তিতে কাজ করছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে দ্রুত বিচার শেষ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রত্যাশা করছি, দ্রুত এ মামলার বিচার কাজ শেষ হবে এবং ভিকটিমের পরিবার ন্যায়বিচার পাবে।
এদিকে মামলা নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ নেই নাজিমের পরিবারের সদস্যদের। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় নাজিমুদ্দিনের ভাতিজা মো. রিমনের সাথে। তিনি জানান, নাজিমুদ্দিনের মা-বাবা মারা গেছেন। অন্যরা দেশের বাইরে আছেন। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বিরক্তি প্রকাশ করে ফোন কল কেটে দেন তিনি।
২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শেষে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার মেসে ফেরার পথে লক্ষ্মীবাজারের একরামপুর মোড়ে জঙ্গিরা কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করে ব্লগার নাজিমুদ্দিনকে। ঘটনার পরদিন সূত্রাপুর থানার উপ-পরিদর্শক মো. নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। ২০২০ সালের ২০ আগস্ট বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক জিয়াসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম।
পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ২৪ জুন জিয়াউল হক জিয়াসহ ৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। বিচার শুরু হওয়া অপর আসামিরা হলেন— আকরাম হোসেন, রশিদুন নবী ভূইয়া ওরফে টিপু ওরফে রাসেল ওরফে রফিক ওরফে রায়হান ও মো. শেখ আব্দুল্লাহ।
তবে অভিযোগ গঠন করার উপাদান না পাওয়ায় চার্জশিটভুক্ত ৫ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তারা হলেন— মো. ওয়ালিউল্লাহ ওরফে ওলি ওরফে তাহের ওরফে তাহসিন, সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে আকাশ ওরফে কনিক, মাওলানা জুনেদ আহাম্মেদ ওরফে সাব্বির ওরফে জুনায়েদ ওরফে তাহের, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ও মো. আরাফাত রহমান। এদিকে অভিযোগ গঠনের পর গত ১০ মাসে মাত্র একজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত।
আরও পড়ুন
মামলা সূত্রে জানা যায়, ব্লগে লেখালেখি করার কারণে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা নাজিম উদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ নেতা ও সামরিক শাখার প্রধান সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর জিয়ার পরিকল্পনায় নাজিম উদ্দিনকে হত্যা করা হয়। আসামি মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মনের নেতৃত্বে একটি টিম নাজিম উদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার অবস্থান রেকি করে। মো. শেখ আব্দুল্লাহ এ হত্যার ভিডিও ধারনের জন্য এবং হত্যাকারীদের হত্যাকাণ্ড সংঘটনের পর পালাতে সহযোগিতার জন্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকেন। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর জিয়াকে জানানো হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ সময় পর মামলার বিচার শুরু হয়েছে। এর মধ্যে বাদীর সাক্ষ্য হয়েছে। বাদী আদালতে বলেছেন, আসামিদের কাউকে তিনি চেনেন না। আমরা তাকে জেরা করেছি। তিনি বলেন, একটা ছেলেকে খুন করা হয়েছে। কিছু লোকের ওপর দায়ভার চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারতকে খুশি করতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশকে দিয়ে জঙ্গি নাটক সাজিয়েছে। এটাও ওই সময়কার একটা ঘটনা। আমরাও চাই দোষীদের সাজা হোক, নির্দোষরা বের হয়ে আসুক। আদালতের উচিত মামলাটি ত্বরান্বিত করা। অনেক দিন তো হয়ে গেছে। আসামিরাও হয়রানির শিকার হচ্ছে। বাদীপক্ষও বিচার দেখার অপেক্ষায় আছে।
এনআর/এনএফ