আমির হামজার বয়ান যুব সমাজকে উগ্রবাদের ইন্ধন দেয়
‘আমির হামজা জিহাদের নামে পবিত্র কোরআন শরীফ ও হাদিসের অপব্যাখ্যা করে উগ্রবাদী বয়ানে যুব সমাজকে উগ্রবাদে ইন্ধন দেয় ও উদ্বুদ্ধ করে। এছাড়াও তার এই বয়ানের ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে উগ্রবাদের প্রচার ও প্রসারে লিপ্ত হয়েছে।’
মঙ্গলবার (২৫ মে) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক কাজী মিজানুর রহমান রিমান্ডের আবেদন এসব কথা উল্লেখ করেন।
রিমান্ডের আবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘মামলার এজাহারনামীয় আসামি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল আল ইসলামের সংগঠনের সদস্য সাকিবসহ অন্যান্য কর্মীদের আমির হামজার বক্তৃতার মাধ্যমে উগ্রবাদ উদ্বুদ্ধ করেছে। ওই হামলার পেছনে তার বক্তব্য ইন্ধন প্রদর্শন করেছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। আমির হামজা কথিত উগ্রবাদী বক্তব্য ইউটিউবে দেখে পূর্বে গ্রেফতার হওয়া আসামি সাকিব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করে। পুলিশের গুলিতে শহীদ হবে মর্মে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, যা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে উঠে এসেছে। সে তথাকথিত জিহাদের নামে পবিত্র কোরআন শরীফ ও হাদিসের অপব্যাখ্যা করে উগ্রবাদী বয়ান যুব সমাজকে উগ্রবাদে ইন্ধন দেয় ও উদ্ধুদ্ধ করে। এছাড়াও তার এই উগ্রবাদী বয়ানের ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে উগ্রবাদের প্রচার ও প্রসারে লিপ্ত হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য পলাতক আসামিদের খুঁজে বের করতে এ আসামিকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।’
এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাকে আদালতে হাজতখানা রাখা হয়। সংশ্লিষ্ট আদালতের হাজতখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সোমবার (২৪ মে) দুপুরে কুষ্টিয়ায় অভিযান চালিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, মুফতি আমির হামজার বিরুদ্ধে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটে তদন্তাধীন একটি মামলা রয়েছে। সেই মামলায় তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে আজ কুষ্টিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। তাকে সিটিটিসি কার্যালয়ে আনা হচ্ছে। ধর্মের অপব্যাখ্যা ও উগ্রবাদ ছড়ানোর বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সূত্রে জানা যায়, মুফতি আমির হামজা ওয়াজ-মাহফিলে ইসলামের নামে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছেন। ইউটিউবে প্রকাশিত তার বেশকিছু বক্তব্য উগ্রবাদ ছড়াচ্ছে। যা শুনে কোমলমতি কিশোর-তরুণরা জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হচ্ছে। সম্প্রতি হেফাজতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অভিযানের কারণে আত্মগোপনে ছিলেন আমির হামজা।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ৫ মে সংসদ ভবন এলাকা থেকে তলোয়ার নিয়ে সংসদ ভবনে হামলা চালানোর চেষ্টায় সাকিব নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। সাকিবকে গ্রেফতারের পর শেরেবাংলা নগর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা হয়। ওই মামলায় আসামি করা হয় সাকিবসহ আলী হাসান ও মাওলানা মাহমুদুল হাসান গুনবীকে।
এছাড়া সাকিবের কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সাকিবের মোবাইল ফোনে আলী হাসান উসামা, মাহমুদুল হাসান গুনবী, আমির হামজা, হারুন ইজহার প্রমুখ ব্যক্তির উগ্রবাদের বার্তা সম্বলিত ভিডিও পাওয়া যায়। যা দেখে সে উগ্রবাদে আসক্ত হয়। গত ১৫ মে সাকিবকে আটক করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই যুবক জানায়, এক ইসলামী বক্তার নির্দেশে সে এই পরিকল্পনা করেছিল। কয়েকজনের ওয়াজ ও বক্তব্য শুনে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হয় বলে জানায় সে।
যা বলছে আমির হামজার পরিবার
আমির হামজার পরিবারের দাবি, কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ী ইউনিয়নের বাড়ি থেকে বিকেলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ৬/৭ জন মুফতি আমির হামজাকে তুলে নিয়ে যায়। প্রথমদিকে জেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
আমির হামজার দাদা জান মোহাম্মদ বলেন, মুফতি আমির হামজাকে সাদা পোশাকে আসা কিছু মানুষ প্রশাসনের পরিচয়ে নিজ বাড়ি থেকে নিয়ে গেছে। আমির হামজা আজকেই বাড়িতে তার মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল।
আমির হামজার স্ত্রী তামান্না সুলতানা জানান, বিকেল ৫টার দিকে আমার শ্বশুর বাড়িতে ৬/৭ জন সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা ব্যক্তি প্রবেশ করেন। কোনো কিছু বলার আগেই তাকে হাতে হ্যান্ডক্যাপ পরিয়ে কালো একটি হাইচ গাড়িতে তোলেন। পরে ওই পোশাকধারীরা গাড়িতে উঠে তাদের কালো পোশাক গায়ে দিয়ে গাড়ি টান দেন। তাদের কাছে রাইফেলসহ অস্ত্রও রয়েছে।
অল্প বয়সেই কোরআনের হাফেজ হন মুফতি আমির হামজা। এরপর তিনি কওমি মাদরাসা থেকে মুফতি হন। পাশাপাশি আলিয়া মাদরাসা থেকে দাখিল ও আলিমে অত্যন্ত ভালো ফলাফল অর্জন করেন। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া থেকে আল-কুরআনের ওপর অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেন।
টিএইচ/এসএম