ওসি নাজিমের বিরুদ্ধে মামলা, পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ
পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজিম উদ্দিন মজুমদর ও একই থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল আজিজের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটকে তদন্তের আদেশ দেন।
এর আগে, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল। কিন্তু বাদীপক্ষ প্রতিবেদনের ওপর নারাজি দেন। ২৯ আগস্ট চট্টগ্রামের দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আমিরুল ইসলামের আদালতে মামলাটির সবশেষ শুনানি হয়েছিল। এতে বাদীপক্ষের নারাজি আবেদন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শুনানির জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন
অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, ২৯ আগস্ট আদালত মৌখিকভাবে পিবিআইকে তদন্তের জন্য দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে লিখিত আদেশে আমরা দেখি, মামলাটির প্রতিবেদনের ওপর নারাজির আবেদন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শুনানি করতে বলা হয়। এরপর আজ (মঙ্গলবার) মামলাটির শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে ২০২৩ সালের শুরুতে চমেক হাসপাতালে রোগী ও তাদের স্বজনরা আন্দোলনে নামেন। কয়েকদিন ধরে চলা এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে ওই বছরের ১০ জানুয়ারি বিক্ষোভকারীরা চমেকের প্রধান ফটকের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। এ দিন পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আন্দোলনকারীদের সড়ক ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা সড়ক না ছাড়ার ঘোষণা দেন। বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি নিজের মুঠোফোন বের করে বিক্ষোভকারীদের ভিডিও ধারণ করেন এবং তাদের পরে দেখে নেবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন। এরপর একযোগে সবাই ওসির বিরুদ্ধে হইচই শুরু করেন এবং ভিডিও ডিলিট করার দাবি জানান।
চমেক হাসপাতালে কিডনি রোগীদের স্বজনদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দেয়। এদিন ওসির মারমুখী আচরণের ফুটেজ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। মানবিক এ আন্দোলন থেকে একজনকে মারতে মারতে গ্রেপ্তার করেন ওসি নাজিম। গ্রেপ্তার মোস্তাকিমও ওসির সেই মোবাইল সরিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে হাতাহাতিতে ওসির মোবাইল মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়। এরপর ওসি মোস্তাকিমকে পেটাতে পেটাতে চমেকের প্রধান ফটকের বিপরীতে এপিক হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেও তাকে আরেক দফা মারধর করা হয়। কিছুক্ষণ পর এপিকের সামনে থেকে আরও একজনকে ধরে ভেতরে নিয়ে যান ওসি। পাশাপাশি অন্য পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেন।
একপর্যায়ে একজনকে ছেড়ে দিলেও মোস্তাকিমকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর ওই দিন রাতে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচলাইশ থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় মোস্তাকিমকে। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়। এতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা ও কর্তব্য কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মোস্তাকিমকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
জামিনে মুক্ত হয়ে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে পিটিশন মামলা করেন মোস্তাকিম। আদালত পিটিশনটিকে নিয়মিত মামলা হিসেবে পাঁচলাইশ থানায় রেকর্ডের আদেশ দেন। একইসঙ্গে মামলাটি এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা দিয়ে সিআইডিকে তদন্তের আদেশ দেন। তদন্ত শেষে গত বছরের ১১ মে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় সিআইডি।
এমআর/এআইএস