প্রথম আলোর সম্পাদকসহ তিনজনকে অব্যাহতির আবেদন
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানসহ তিনজনকে অব্যাহতির আবেদন করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখা সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে মিথ্যা এবং বানোয়াট তথ্য-ছবিযুক্ত সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে তথ্যপাচার ও প্রকাশ করার অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়। অপর দুজন হলেন- পত্রিকাটির সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস ও সহকারী ক্যামেরাম্যান।
গত ১৪ নভেম্বর রাজধানীর রমনা থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় এ প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিএমপির সিটিটিসির ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক) আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন। পরে ১ ডিসেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ছানাউল্লাহ মিয়া মামলাটি পরবর্তী বিচারের জন্য ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে বদলি করেন।
মামলায় অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর একটি ফটোকার্ডে একজন দিনমজুরের বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়। কিন্তু সে উদ্ধৃতির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় এক শিশুর ছবি। দিনমজুরের উদ্ধৃতির সঙ্গে শিশুর ছবি প্রকাশের অসংগতির বিষয়টি তুলে ধরে ১৭ মিনিটের মধ্যেই ফটোকার্ডটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে প্রত্যাহার করে সংশোধনী দেয় প্রথম আলো।
এ ঘটনায় ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ রাতে রমনা থানায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন আইনজীবী আবদুল মালেক। এ মামলায় পত্রিকাটির সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস ও ক্যামেরাম্যানসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়।
আরও পড়ুন
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২০২৩ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে একটি ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে প্রতিবেদনটি দৈনিক প্রথম আলো তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেয়ার করে। সংবাদটিতে দেখা যায়, একটি শিশু ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবেদকের দাবি, ওই শিশুটির নাম জাকির হোসেন। পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শিশু জাকির হোসেন বলে, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংবাদটি ভাইরাল হয়ে যায়। সংবাদটি দেশ ও বিদেশে অবস্থানরত হাজার হাজার মানুষ তাদের ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ক্রিনশটসহ শেয়ার করেন। এ ঘটনায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। মহান স্বাধীনতা দিবসের দিনে এ সংবাদ প্রকাশ করায় বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি ও স্বাধীনতার অর্জন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, পরবর্তী সময়ে একাত্তর টিভিতে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, প্রথম আলো পত্রিকা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা পরিচয় ও উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদটি পরিবেশন করেছে। যে শিশুটির কথা প্রথম আলোর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তার সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। নামপরিচয় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। পত্রিকায় বলা হয়, শিশুটির নাম জাকির হোসেন। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায় ওই শিশুর নাম সবুজ আহমেদ। তার বাড়ি সাভার থানার কুরগাঁও পাড়ায়। তার বাবা একজন রাজমিস্ত্রি। মা মুন্নী বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে মেজো সবুজ। প্রথম আলোর তথ্যে বলা হয়েছে, সে দিনমজুর। কিন্তু সাত বছরের শিশু সবুজ আহমেদ প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে এবং স্কুল শেষে মাঝেমধ্যে ফুল বিক্রি করে।
এজাহারে আরও বলা হয়, শামসুজ্জামানের প্রস্তুত করা প্রথম আলোর ওই সংবাদে বলা হয়েছে, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব’। প্রকৃতপক্ষে ওই শিশুটি এ ধরনের কোনো কথা বলেনি। শিশুটি জানিয়েছে, প্রথম আলোর সাংবাদিক শিশুর হাতে ১০ টাকা দিয়ে এ ছবি তুলেছে।
অপরদিকে একই ঘটনায় রাজধানীর তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলায় প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে অব্যাহতির আবেদন করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া নামে এক যুবলীগ নেতা বাদী হয়ে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ মামলাটি করেন। মামলাটি পরবর্তী বিচারের জন্য ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে বদলি করা হয়।
এনআর/এমজে