মতিঝিলে গুলি করে কর্মচারী হত্যা : ৮ বছরেও শুরু হয়নি সাক্ষ্যগ্রহণ
রাজধানীর মতিঝিলে হোটেল কর্মচারী রিয়াদ হোসেন হত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিলের প্রায় আট বছর পার হলেও সাক্ষ্যগ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। বছরের পর বছর ধরে সাক্ষী না আসায় আদালতে ঝুলে আছে আলোচিত এ মামলা।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২২ জুলাই হোটেল মালিকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ওয়ারী থানা পুলিশের পরিদর্শক আলিম হোসেন শিকদার। আর ওই বছরের ডিসেম্বরের ১ তারিখে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এরপর থেকে দীর্ঘ ৮ বছর পার হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার অতিরিক্ত দায়রা জজ ইব্রাহিম মিয়ার আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
সর্বশেষ গত ২ অক্টোবর এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ছিল। কোনো সাক্ষী হাজির না হওয়ায় বিচারক ১৫ জানুয়ারি নতুন তারিখ ধার্য করেন।
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর রাজধানীর মতিঝিলে হোটেল কর্মচারী রিয়াদ হোসেনকে চুরির সন্দেহে মালিক আরিফ হোসেন সোহেলের নির্দেশে বেঁধে রাখা হয়। পরে অন্য হোটেলে কর্মরত রিয়াদের ভাই রিপন হোসেন ভাইয়ের সন্ধানে এসে জানতে পারেন— মালিক চুরির ঘটনায় রিয়াদের বিচার করবেন। মালিকের জন্য তিনি হোটেলটির সামনে অপেক্ষা করতে থাকেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে হোটেলের মালিক গ্রিল কারিগর জসিমের সহায়তায় রিয়াদকে স্বামীবাগ এলাকায় নির্মাণাধীন এক ভবনে নিয়ে যান।
আরও পড়ুন
এরপর খবির মেসিয়ারসহ আরও অজ্ঞাতনামা ৩ থেকে ৪ জনের সহায়তায় রিয়াদকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে লাঠি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করা হয়। রাত ১টার দিকে তার মুখের ভেতর মালিক আরিফ হোসেন সোহেল গুলি করেন। এরপর আসামিরা রিয়াদকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনার পরদিন ২৮ অক্টোবর নিহতের ভাই রিপন হোসেন ওয়ারী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আদালত সূত্র জানায়, এ মামলার আসামি জসিম চৌকিদার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে এ ঘটনার সঙ্গে মালিক আরিফ হোসেনসহ মেসিয়ার খবিরের জড়িত থাকার কথাও জানিয়েছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে চিকিৎসক গুলির আঘাতে মৃত্যুর কথাও উল্লেখ করেন।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জসিম বলেন, ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে ম্যানেজার সুরুজ মিয়া জানান— শফিকুলের ১৫০০ টাকা ও একটি মোবাইল চুরির জন্য রিয়াদকে বেঁধে রাখা হয়েছে। মালিক এসে বিচার করবেন। ঘটনার দিন দুপুর ১২টা থেকে রিয়াদের ডিউটি ছিল। পরে রাত ১২টার দিকে মালিক আরিফ হোসেন সোহেল গাড়ি নিয়ে এসে রিয়াদকে আমাদের স্বামীবাগের স্টাফ রুমে নিয়ে যায়। মালিকের সঙ্গে শফিকুল, সালাম, ইলিয়াস ও আরও একজন নতুন কর্মী ছিল। আমি, বিল্লাল ও রাজু একটি রিকশায় করে মালিকের বিচার করা দেখতে যাই। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই রিয়াদকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে মালিক তাকে লাঠি দিয়ে ৪-৫ বার আঘাত করে। এ সময় রিয়াদ মোবাইল ও টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন।
এরপর আরিফ হোসেন পকেট থেকে পিস্তল বের করে গলার ডান পাশে গুলি করেন। রক্ত বের হতে দেখে তিনি হাত দিয়ে রিয়াদের গলা চেপে ধরেন। আমাকেও ধরতে বলেন। পরে আমি, রাজু ও খবির রিয়াদের গলা চেপে ধরেছি। এরপর রিয়াদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মালিক আমাদের পিস্তল দেখিয়ে হুমকি দিয়ে বলেন— মানুষের কাছে বলবি, মালিকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সময় ছিনতাইকারীরা রিয়াদকে গুলি করেছে। তখন হঠাৎ আমি জ্ঞান হারাই। তারা আমার মোবাইল নিয়ে আমাকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
হোটেল মালিকের কাছে সবসময় দুই-তিনটা পিস্তল থাকে বলেও জানান আসামি জসিম। ঘটনার সময় ৩০ জন মানুষের সেখানে থাকার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
সাক্ষী সমনের দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপপরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরবর্তী তারিখে স্বাক্ষীদের হাজির করা হবে।
এতোদিন হয়নি কেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাক্ষী হাজিরের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কোর্টের। এতোদিন তারা কেন করেনি, বিষয়টি আমার জানা নেই।
এনআর/এআইএস