সংবিধানের মূল অবয়ব পরিবর্তন করা হয় পঞ্চদশ সংশোধনীতে
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, এই মর্মে জারি করা রুলের শুনানিতে ইনসানিয়াত বিপ্লবের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেছেন, সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের প্রস্তাবনা ও মূল অবয়বকে পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংযোজন ও বিয়োজন করা হয়েছে।
বুধবার (২০ নভেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানিতে তিনি এ কথা বলেন।
অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ‘আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’কে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংবিধানে অনুচ্ছেদ ৭ক ও ৭খ সংযোজন করে জনগণের চিন্তা, বিবেক ও বাক স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার ভঙ্গ করে সংবিধানের বিরোধিতা পোষণ করাকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে জনগণের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান করেছে। অনুচ্ছেদ ১৪২-কে খর্ব করে গণভোটের অধিকার নষ্ট করা হয়েছে। অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয়। এর ফলে তিনটি ব্যর্থ অগণতান্ত্রিক নির্বাচন পরিলক্ষিত হয়। জনগণের ভোট ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া নিয়ে, একতরফা নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা হয়। রাজনৈতিক স্বার্থে সংবিধানে ৪ক অনুচ্ছেদ, ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম তফসিল সংযোজন করা হয়।
তিনি বলেন, পার্লামেন্ট সংবিধানের দ্বারা তৈরি। তাই সংবিধানের মৌলিকত্ব ও মূল ভিত্তি পরিবর্তন করার ক্ষমতা পার্লামেন্টের নেই। এছাড়াও ৫ম ও ৮ম সংশোধনীর মামলায় সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়কে অবজ্ঞা করে এই ধরনের শোষণমূলক সংবিধান প্রণয়ন করেছে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার। জনস্বার্থ পরিপন্থি এই সংশোধনীর ফলে দেশের জনগণের অধিকার খর্ব হয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে এসেছে জুলাই বিপ্লব।
আদালতে রিটকারী সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলমের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া। বিএনপির পক্ষে আছেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, বদরুদ্দোজা বাদল, অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল। জামায়াতের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী। ইনসানিয়াত বিপ্লবের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন। আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ৫ নভেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, এই মর্মে জারি করা রুলে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ইনসানিয়াত বিপ্লবের চেয়ারম্যান আল্লামা ইমাম হায়াতকে পক্ষভুক্ত করেন হাইকোর্ট।
গত ৩০ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, এই মর্মে জারি করা রুলে পক্ষভুক্ত হতে হাইকোর্টে আবেদন করেন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আল্লামা ইমাম হায়াত।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদনটি দাখিল করা হয়।
এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলে বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার পক্ষভুক্ত হয়েছেন।
গত ১৯ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেছিলেন।
সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত এ রুল জারি করেন।
২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই সংশোধনীর দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।
এছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বিদ্যমান ৪৫-এর স্থলে ৫০ করা হয়।
এমএইচডি/জেডএস