মিথ্যা তথ্য: বাদীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ হাইকোর্টের
টাকা ধার দেওয়ার জেরে ২০০৫ সালে রমান্দ্র পালিত নামের বৃদ্ধকে হত্যা করে মো. ফোরকান নামের এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় ওই বছরই মামলা দায়ের করেন রমান্দ্র পালিতের মেয়ের জামাই বিপ্লব খাস্তগীর। আদালতে হত্যার বিষয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিও দিয়েছিলেন আসামি। কিন্তু ১৫ বছর পর এ হত্যা মামলায় হাইকোর্টে আপসনামা জমা দিয়েছেন বাদী। সেখানে ‘এই মামলা চালানোর আর কোনো প্রয়োজন নেই’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে চেয়েছেন আসামির জামিনও।
এতেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উচ্চ আদালত। আসামিকে জামিন দিলেও মিথ্যা তথ্য দেয়ায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানাকে বাদী বিপ্লব খাস্তগীরের বিরুদ্ধে মামলার দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এই মামলার প্রধান আসামি মো. ফোরকানের জামিন শুনানিকালে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার (৩ জানুয়ারি) এই আদেশ দেন।
সোমবার (৪ জানুয়ারি) আদেশের বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানাধীন ফটিকছড়ি এলাকার রমান্দ্র পালিত ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ ছিলেন। এই বৃদ্ধ চাকরি শেষে যে টাকাগুলো পেয়েছিলেন তা একই এলাকার মো. ফোরকান নামের এক ব্যক্তিকে ধার দেন। টাকা ধার দেওয়া নিয়ে মনোমালিন্য চলছিল। এই বিরোধের জের ধরে ২০০৫ সালে ফোরকান রমান্দ্র পালিতকে হত্যা করেন।
পরে রমান্দ্র পালিতের মেয়ের জামাই বিপ্লব খাস্তগীর হাটহাজারী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৬৪ ধারায় কীভাবে রমান্দ্র পালিতকে হত্যা করেন তার বর্ণনা আদালতে নিজেই দেন মো. ফোরকান। ইতোমধ্যে তিনজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এমতাবস্থায় মামলার বাদী বিপ্লব খাস্তগীর হাইকোর্টে এসে আপসনামা দাখিল করে বলেছেন, এই মামলা চালানোর আমাদের আর কোনো প্রয়োজন নেই। তাকে জামিন দিলেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
এই আপসনামা দেখে হাইকোর্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আদালত বলেছেন, ৩০২ ধারার অধীনে দায়েরকৃত কোনো মামলা আপস হতে পারে না। একটা হত্যাকাণ্ড হয়েছে। লাশ পাওয়া গেছে। ১৬৪ ধারায় আসামি স্বীকার করেছেন, এভাবে মানুষটাকে আমি হত্যা করেছি। এই মামলা আপস হয় কীভাবে? মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতকে বিভ্রান্ত করায় এতে আদালত উষ্মা প্রকাশ করেছেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আদালত আরও বলেছেন, যেহেতু বাদী নিজেই আসামির জামিন চাচ্ছেন, আমরা জামিন দিলাম। কিন্তু বাদী মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এ কারণে হাটহাজারী থানাকে নির্দেশ দিচ্ছি, বাদীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার জন্য।
আদালতে আসামির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না।
এমএইচডি/এফআর