‘আপনারা আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবেন এজন্য তো আসিনি’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ইমন হোসেন গাজী নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যার অভিযোগে যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের (বিএবি) সাবেক সভাপতি এবং নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের রিমান্ড শুনানিতে বিচারকের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। দীর্ঘ সময়ের হট্টগোল শেষে শান্ত হয় এজলাস কক্ষ।
বুধবার (২ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমানের আদালতে এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করা যায়।
এদিন বিকেলে আসামিকে আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে দশদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. মাহাবুল ইসলাম।
শুনানির শুরুতে বিচারকের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন তদন্ত কর্মকর্তা। তদন্ত কর্মকর্তার কাছে আসামিকে রিমান্ডে চাওয়ার কারণ জানতে চান বিচারক। এসময় তদন্ত কর্মকর্তা মামলার অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত করতে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে বলে জানান। এরপর আসামির রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চান বিচারক।
উত্তরে তদন্ত কর্মকর্তা আসামির সাবেক আওয়ামী সরকারের সাথে তার সংশ্লিষ্টতা ও সরকারের অর্থদাতা হিসেবে পরিচয় দেন। এক পর্যায়ে রাষ্ট্র পক্ষে সহযোগিতাকারী বিএনপিপন্থি আইনজীবী কথা বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছেই উত্তর চান বিচারক। এসময় কথা বলতে চাওয়া আইনজীবীর নাম জানতে চাইলে এক পর্যায়ে আইনজীবীরা ক্ষিপ্ত হয়ে বিচারকের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর বিএনপিপন্থি সিনিয়র অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী সবাইকে থামানোর চেষ্টা করলে এজলাসে শান্ত পরিবেশ ফিরে আসে।
এসময় বিচারক আইনজীবীদের জানান, আপনাদের আচরণে আমি নিজেই লজ্জিত। আপনারা আমাকে সহযোগিতা না করলে কীভাবে আদালত চলবে। বিচারক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুককে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি এর আগেও আমার কোর্টে শুনানি করেছেন। আপনি জানেন আমি সবাইকেই প্রশ্ন করি। এর ফলে আদেশ লিখতে সুবিধা হয়। আপনারা আমাকে পছন্দ না করলে বলতে পারে ইউ মে লিভ। অথবা আপনাদের যদি ওইরকম শক্তি সামর্থ্য থাকে তাহলে আমাদের অন্য কোথাও পাঠাবেন। আপনারা আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবেন এজন্য তো আসিনি। আমরা ঢাকা কোর্টে থাকতে আসিনি।
এরপর ওমর ফারুক ফারুকী বিচারককে বলেন, এখানে যারা আইনজীবী হিসেবে সহযোগিতা করতে এসেছেন এরা সবাই ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নির্যাতিত। এসময় ঢাকা বারের সিনিয়র এজিএসকে দেখিয়ে বলেন, উনি তিনবার আওয়ামী লীগের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন। কাজেই সবার চাপা ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। এরপর তিনি আসামিকে রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে শুনানি করেন।
আদালত আসামি পক্ষের বক্তব্য শোনেন। সেখানেও আসামি পক্ষের আইনজীবীকে কিছু প্রশ্ন করেন বিচারক। এরপর আদালত আসামির সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন। আদেশের পর আইনজীবীরা আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার চিটাগাং রোডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ইমন হোসেন গাজী নামের এক যুবক নিহত হন। এই ঘটনায় তার ভাই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ২৮ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় ৮৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করেন।
এদিকে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।
এনআর/পিএইচ