আসিফ মাহতাব কারাগারে, আরিফ সোহেলের জামিন
কোটা আন্দোলনের সময় সেতু ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বনানী থানার মামলায় আলোচিত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেলের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শনিবার (৩ আগস্ট) ছয়দিনের রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আবু সাইদ মিয়া। অপরদিকে আসামি পক্ষে জামিন চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবীরা। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শান্ত ইসলাম মল্লিকের আদালত এ আদেশ দেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে শনিবার (২৮ জুলাই) রাত ১টার দিকে আসিফ মাহতাবকে উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরের বাসা থেকে ডিবি পরিচয়ে আটক করে নিয়ে যায়। ঢাকা পোস্টকে এ কথা জানান আসিফ মাহতাবের ছোট বোন নাফিসা তাসনিম। এদিকে ২৭ জুলাই দিবাগত রাত ৪টার দিকে আরিফ সোহেলকে তার ভাড়া বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়। আরিফের ছোট বোন উম্মে খায়ের ঈদি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আরও পড়ুন
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই প্রতিদিনের মতো সেতু ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথারীতি অফিসের কার্যক্রম করতে থাকেন। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অজ্ঞাতনামা ২৫০ থেকে ৩০০ জন আসামি কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নাশকতা করার লক্ষ্যে বেআইনি জনতাবদ্ধে আবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল নিয়ে আমাদের অফিসের সামনে এসে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
সেতু ভবনের সিনিয়র সচিবসহ কর্মকর্তাদের পদ-পদবি উল্লেখ করে খোঁজাখুঁজি করে হুমকি প্রদর্শন ও ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্ঘাতমূলক ভীতি সৃষ্টি করে সেতু ভবন লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে আসামিরা আমাদের অফিসের মূল ফটক ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে সেতু ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে নিচতলার ভবনের সামনে রক্ষিত জিপ, কার, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মোটরসাইকেল, নিরাপত্তা ভবন, সিসি ক্যামেরা, পার্কিং শেড, ক্যান্টিন, গাড়িচালকদের কক্ষ, আনসার শেড, মুজিব কর্নার, জেনারেটর কক্ষসহ মূল ভবন ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ ঘটায়। এসময়ে সেতু ভবনের সিনিয়র সচিব ও অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সেতু ভবনের ভেতরে থাকা অফিস স্টাফ ও নিরাপত্তাকর্মী আসামিদের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম থেকে সরে যেতে অনুরোধ করলে আসামিরা তাদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে সেতু ভবনের সিনিয়র সচিব, অন্য অফিস স্টাফ ও নিরাপত্তা কর্মীদের এলোপাতাড়ি মারধর করে সাধারণ ও গুরুতর জখম করে। পরে আসামিরা নিচ তলার আনসার শেড, ড্রাইভার শেড থেকে চেয়ার-টেবিলসহ অন্য আসবাবপত্র এবং সেতু ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে নিচ তলা থেকে ১১তলা পর্যন্ত অফিসে ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে অফিসে রক্ষিত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফাইল কেবিনেট, এসি, ফ্যান, পানির ফিল্টার, চেয়ার-টেবিল, আসবাবপত্রসহ সরকারি ও ব্যক্তিগত মালামাল চুরি করে এবং প্রত্যেক ফ্লোরে অগ্নিসংযোগ ঘটায়।
আসামিদের এমন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ও অগ্নিসংযোগে সেতু ভবনের নিচ তলা থেকে ১২তলা পর্যন্ত ফ্লোরে রক্ষিত সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, পদ্মা সেতু প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বহুলেন সড়ক টানেল প্রকল্প, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প সেতু বিভাগের আওতাধীন সব প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দলিল, এফডিআর ইনস্ট্রুমেন্ট, টেন্ডার সিকিউরিটি ডকুমেন্টস, ইন্টারনেট সার্ভার, শতাধিক কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী, আসবাবপত্র, কম্পিউটার, জেনারেটর, ফায়ার এক্সটিংগুইশারসহ যাবতীয় নথিপত্র এবং সেতু ভবনের পার্কিংয়ে থাকা ৩২টি জিপ গাড়ি, ৯টি পিকআপ, ৭টি মাইক্রোবাস, একটি মিনিবাস, ৫টি মোটরসাইকেল, একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিলে পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মারফত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় সেতু ভবনের কেয়ারটেকার রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে বনানী থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
এনআর/এসএসএইচ