রিমান্ড বাতিল, শিশু হিসেবে স্বীকৃতি মিলল সেই ফাইয়াজের
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ১৭ বছরের কিশোর হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে শিশু হিসেবে ঘোষণা করেছেন আদালত। এছাড়া, এ মামলায় তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ বাতিল করা হয়েছে।
রোববার (২৮ জুলাই) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক রোকসানা বেগম হ্যাপীর আদালত এ আদেশ দেন।
তার আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফাইয়াজকে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে আমরা ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন দায়ের করি। এর আগে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভারপ্রাপ্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসিবুল হক ফাইয়াজের রিমান্ড বিষয়ে বিশেষ শুনানির ব্যবস্থা করেন।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, এ দিন তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা হকের আদালত তার রিমান্ড বাতিল করেন এবং মামলাটি শিশু আদালতে বদলির আদেশ দেন। আমরা শিশু আদালতে শিশু আইন ২০১৩ এর ২১ ধারা অনুযায়ী ফাইয়াজকে শিশু ঘোষণা করে শিশু আইনের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের আবেদন করি। আদালত আমাদের আবেদন গ্রহণ করে তাকে শিশু হিসেবে ঘোষণা করেন। পরে গাজীপুরে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন।
তিনি আরও বলেন, জন্ম নিবন্ধন ও এসএসসির সার্টিফিকেট অনুসারে ফাইয়াজের বয়স ১৭ বছর তিন মাস আট দিন। যাত্রাবাড়ী থানার এ মামলায় আদালতে ফাইয়াজের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আমরা বয়সের কারণে রিমান্ড বাতিলের আবেদন করি। এ মামলাটি শিশু আদালতে প্রেরণের অনুরোধ করি। তবে, আদালত তখন অপারগতা প্রকাশ করেন।
জানা যায়, জন্ম নিবন্ধন অনুসারে, হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের জন্ম ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল। ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকার শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পেয়েছে সে। সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় মাতুয়াইল হাসপাতালের বিপরীত পাশে এক পুলিশ সদস্যকে মেরে ঝুলিয়ে রাখার মামলায় ১৭ জন আসামির মধ্যে ১৬ নম্বর আসামি এ শিক্ষার্থী।
পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে লাশ গুম ও এই কাজে সহায়তাসহ তার মোটরসাইকেল চুরির মামলায় আসামি হিসেবে ২৭ জুলাই ঢাকার নিম্ন আদালতে হাজির করা হয় ফাইয়াজকে। এরপর মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা অন্য আসামিদের সঙ্গে ফাইয়াজকেও ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্তা আক্তারের আদালত প্রত্যেক আসামির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের নায়েক গিয়াস উদ্দিন (৫৮) পরিবারসহ মাতুয়াইল মাতৃসদন হাসপাতালের বিপরীত পাশে ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করতেন। গত ১৯ জুলাই রাত্রী আনুমানিক ৯টায় গণভবনে সরকারি ডিউটি পালনের উদ্দেশ্যে তার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল যোগে বাসা থেকে বের হন। রায়েরবাগ ফুটওভার ব্রিজের উত্তর পাশে আসা মাত্রই পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে উল্লিখিত আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা অনেকে পুলিশ পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাকে আটক করে। এরপর তাকে ধারালো অস্ত্রের মাধ্যমে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় গুরুতর আঘাতে রক্তাক্ত জখম করে।
আরও বলা হয়, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রাস্তায় পড়ে গেলে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিনের নাক-কান, মুখ, গলা ও হাত, বুক, পেট, পিঠ, ডান পায়ের হাঁটুর নিচে ও গোড়ালির নিচেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে। এরপর তাকে রশি দিয়ে ফুটওভার ব্রিজের সাথে বুলিয়ে রাখে। মৃত্যুর পর মরদেহ নিয়ে আসামিরা পৈচাশিক আনন্দে মেতে ওঠে। মরদেহ গুম করার লক্ষ্যে উলঙ্গ করে তাতে আগুন লাগিয়ে পোড়ানোর চেষ্টা করে।
ওই ঘটনায় রাজধানী যাত্রাবাড়ী থানায় গত ২৪ জুলাই নিহতের ভগ্নিপতি ফজল প্রধান এই মামলাটি দায়ের করেন।
এনআর/কেএ