রায়ের কপি না পাওয়ার অভিযোগ ড. ইউনূসের আইনজীবীর
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ড. ইউনূসের ৬ মাসের সাজা শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে স্থগিতের আদেশ বাতিলের রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। তবে এই রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন।
বুধবার (৩ জুলাই) ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত ১৮ মার্চ যখন হাইকোর্ট রায় দেন তখনই রায়ের কপি পাওয়ার জন্য সেকশনে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আজ সেকশনে রায়ের কপির জন্য গেলে সেখান থেকে বলা হয়েছে, আমাদের আবেদন নাকি পাওয়া যায়নি। তাই রায়ের কপি দেওয়া যাবে না।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ড. ইউনূসের ৬ মাসের সাজা শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে স্থগিতের আদেশ বাতিলের রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন
রায়ে আদালত বলেছেন, সাজা কখনও স্থগিত হয় না।
বুধবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ ৫০ পৃষ্ঠার এই রায় প্রকাশ করেছেন।
এর আগে গত ১৮ মার্চ শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ড. ইউনূসের
৬ মাসের সাজা ও দণ্ড শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে স্থগিতের আদেশ বাতিল করেন হাইকোর্ট। ফলে ড. ইউনূসের ৬ মাসের সাজা চলমান থাকবে বলে রায়ে বলা হয়।
এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।
সেদিন আদালতে ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। কলকারখানা অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ৬ মাসের সাজার বিরুদ্ধে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিদেশ যেতে হলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালকে জানিয়ে যেতে হবে বলে আদেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ড. ইউনূসের ৬ মাসের সাজা স্থগিতের আদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি স্থগিতের আদেশ বাতিল প্রশ্নে রুল জারি করেন আদালত।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ড. ইউনূসের ৬ মাসের সাজা স্থগিতের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। এছাড়া আদালতের অনুমতি ছাড়া ড. ইউনূস যেন বিদেশ যেতে না পারেন সে আবেদনও করা হয়।
হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান এ আবেদন দায়ের করেন।
গত ২৮ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলার রায় চ্যালেঞ্জ করে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে জামিন দেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন আদালত। সেদিন শ্রম আদালতের দেওয়া সাজা স্থগিত করেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে জামিন চেয়েছিলেন তিনি। সেইসঙ্গে শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলার রায়ে ৬ মাসের সাজার বিরুদ্ধে ২৫টি যুক্তি দেখিয়ে খালাস চেয়ে আপিলও করেছিলেন তিনি।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে আপিল করেন ড. ইউনূস।
সেদিন ড. ইউনূসের আইনজীবী আইনজীবী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আদালত আমাদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে এবং নিম্ন আদালতের সম্পূর্ণ রায়কে সাসপেন্ড করেছেন। একইসঙ্গে আগামী ৩ মার্চ নিম্ন আদালতের সেসব নথি আনার জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছে। আর আপিল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে স্থায়ী জামিন দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা আদালতে জামিন প্রার্থনা এবং আপিল করেছি। রাষ্ট্রীয় সর্বমহলে এমনকি বিদেশিদের কাছেও বলা হচ্ছে, এ মামলা সরকার করে নাই। এ মামলা শ্রমিক করেছে। কিন্তু ঘটনাটা সঠিক নয়। সরকার তার প্রতিষ্ঠান কলকারখানা অধিদপ্তরের মাধ্যমে এ মামলা করেছে। শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করা হয় নাই, বর্ধিত ছুটি দেওয়া হয় নাই এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশ দেওয়া হয়নি— এমন তথ্য দিয়ে এ মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠান এ মামলা করেছে। এ মামলায় যে রায় হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ। ৩০৭ ধারা অনুযায়ী এ মামলায় শাস্তি দেওয়ার বিধান নেই। কারণ লেবার আইনের ২৩৬ ধারা অনুযায়ী এ মামলার শাস্তির বিধান আছে। এ ধারাতেই বলা আছে, যদি বকেয়া থাকে তাহলে সেটা পরিশোধের জন্য নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে। এটা না করলে ১ লাখ টাকা জরিমানা, প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা করে। পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি আইন অনুযায়ী এটা আদায় করা হবে। কিন্তু সেসব ভায়োলেট করে বিশ্বের কাছে নন্দিত নোবেলজয়ী ড. ইউনূস ও তার বন্ধুদের সামাজিক ব্যবসা ধ্বংস করার জন্য এ সাজা দেওয়া হয়েছে।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গত ১ জানুয়ারি ৬ মাসের সাজা হয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার জনের। রায় প্রদানকারী বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানার স্বাক্ষরের পর ৮৪ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, আসামিরা শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ৪(৭) (৮), ১১৭, ২৩৪ এর বিধান লঙ্ঘন করে আইনের ৩০৩(৫) ও ৩০৭ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তা প্রমাণিত হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। এ অবস্থায় আসামি গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ৪(৭) (৮), ১১৭, ২৩৪ ও বিধি ১০৭ লঙ্ঘনের জন্য ৩০৩(৩) ও ৩০৭ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের ওই আইনের ৩০৩ (৩) ধারার অপরাধে ০৬ (ছয়) মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫,০০০/-(পাঁচ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ১০ (দশ) দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৩০৭ ধারার অপরাধে ২৫,০০০/-(পঁচিশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে অতিরিক্ত ১৫ (পনেরো) দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলো।
গত ১ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। তবে আপিল করার শর্তে ড. ইউনূসসহ আসামিদের ১ মাসের জামিন দেওয়া হয়।
ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা এ রায় ঘোষণা করেন। এ মামলায় অন্য আসামিরা হলেন— গ্রামীণ টেলিকমের এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। তাদেরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
ড. ইউনূসসহ আসামিদের শ্রম আইনের ৩০৩ (ঙ) ধারায় সর্বোচ্চ ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপরদিকে ৩০৭ ধারায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন আদালত।
এমএইচডি/এমএসএ