আদালতকে যা জানালেন ঝিনাইদহের আ.লীগ সম্পাদক মিন্টু
ভারতের কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারকে খুনের উদ্দেশ্য অপহরণের মামলায় গ্রেপ্তার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) তাকে আদালতে হাজির করে ডিবি পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ওয়ারী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান।
এদিন রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। অপরদিকে আসামিপক্ষে রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবীরা। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন।
আরও পড়ুন
শুনানির সময় বিচারক আসামি সাইদুল করিম মিন্টুর কিছু বলার আছে কি না— জিজ্ঞাসা করলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। বলেন, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। ৪৬ বছরের রাজনীতিতে আমার খুন-খারাবির ইতিহাস নেই। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে আজ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। এখন সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন চাওয়ায় আমার অপরাধ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি ওয়ান ইলেভেনে গ্রেপ্তার হয়েছি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ১৩ বার গ্রেপ্তার হয়েছি। মানুষের জন্য রাজনীতি করেছি। কিন্তু আমাকে রাজনৈতিক কারণে ফাঁসানো হচ্ছে।
এদিন বেলা ২টার দিকে মিন্টুকে আদালতে হাজির করা হয়। তাকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। বেলা ৩টার দিকে ডিবি পুলিশের গাড়িতে করেই আদালতের সামনে আনা হয়। বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট পড়ানো অবস্থায় তাকে এজলাসে তোলা হয়। এজলাসের সামনে নিয়ে এলে স্বজনরা তাকে ঘিরে ধরেন। এ সময় তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। মিন্টুকেও কাঁদতে দেখা যায়।
বেলা ৩টা ৬ মিনিটের দিকে শুনানি শুরু হয়। প্রথমে আদালত তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্য শোনেন। এরপর রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু। তিনি বলেন, মামলার তদন্তে অনেক কিছু বেড়িয়ে আসছে। ডিবি পুলিশ ঘটনার সঙ্গে এ আসামির সম্পৃক্ততা পেয়েছে। পরিকল্পনাকারী কে কে আছে, বের হওয়া দরকার। স্টেটমেন্টে অনেকের নাম আসছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে। তার রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।
আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, ডিবি পুলিশ তাকে ১২ জুন গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। কিন্তু জানলাম ১১ জুন ৩টায় তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি। এখানে ডিবি পুলিশ আইনের যথাযথ প্রয়োগ করেনি। তিনি ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনবারের নির্বাচিত মেয়র। কারো সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক বিরোধ ছিল না। ১৬৪- তে কে নাম বলেছে তার বক্তব্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করতে তাকে এ মামলায় সম্পৃক্ত করে হয়রানি করা হচ্ছে।
গত ১১ জুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধানমন্ডি থেকে সাইদুল করিম মিন্টুকে আটক করে ডিবি পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
গত ২২ মে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।
মামলার অভিযোগে মুনতারিন ফেরদৌস ডরিন উল্লেখ করেছেন, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের বাসায় আমরা সপরিবারে বসবাস করি। ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা আনোয়ারুল আজিম আনার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। ১১ মে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাই।
১৩ মে বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে উজির মামার হোয়াটসঅ্যাপে একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। এতে লিখা ছিল, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি রয়েছে। আমি অমিত সাহার কাজে নিউটাউন যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। আমি পরে ফোন দেব।’ এ ছাড়া আরও কয়েকটি বার্তা আসে। ক্ষুদে বার্তাগুলো আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজ করতে থাকি। কোনও সন্ধান না পেয়ে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস বাদী হয়ে ভারতের বারানগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর আমরা খোঁজাখুজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে বাবাকে অপহরণ করেছে।
এনআর/এমজে