এ জে মোহাম্মদ আলী অত্যন্ত বড় মাপের মানুষ ছিলেন : প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী এমন এক পরিবারের সন্তান, যার বাবা বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন এবং সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রেসিডেন্টও ছিলেন। এ জে মোহাম্মদ আলী নিজেও অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এরকম আর পাবেন কি না বলা মুশকিল।
শনিবার (৪ মে) বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এ জে মোহাম্মদ আলীর জানাজার আগে স্মৃতিচারণ করে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এম এইচ খন্দকারকে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ করেন। তারই সন্তান এই মোহাম্মাদ আলী সাহেব। আইনজীবী থাকাকালে আমরা তখন যাকে সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে নিতাম তার মধ্যে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাহেব এবং এ জে মোহাম্মাদ আলী সাহেব অন্যতম। এ জে মোহাম্মাদ আলীর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। তিনি নিতান্ত একজন ভদ্রলোক ছিলেন। তার রাজনৈতিক বিশ্বাস নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, মতবিরোধ থাকলেও কিন্তু মানুষ হিসেবে তিনি অত্যন্ত বড় মাপের মানুষ ছিলেন।
এসময় প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক যেসব সভাপতি মৃত্যুবরণ করবেন তাদের লাশ যেন সুপ্রিম কোর্ট বারে আনা হয়, সে উদ্যোগ নিতে বারের নেতাদের পরামর্শ দেন।
আরও পড়ুন
এছাড়া এ জে মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুতে রোববার আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে প্রধান বিচারপতির কাছে বারের প্রেসিডেন্ট আহ্বান জানালে প্রধান বিচারপতি বলেন, রোববার কোর্ট বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতি প্রাঙ্গণে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে এ জে মোহাম্মদ আলীর জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজায় ইমামতি করেন সুপ্রিম কোর্ট বার মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মো. আবু জাফর।
জানাজায় অংশগ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আপিল বিভাগের বিচারপতিরা, হাইকোর্টের বিচারপতিরা, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, বার সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক, সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতিরা, বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ শত শত আইনজীবী।
জানাজার আগে এ জে মোহাম্মদ আলীর স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, এ জে মোহাম্মদ আলীর ছেলে রিয়াজ হোসেন খোন্দকার, মেয়ে রাদিয়া খোন্দকার। তার জীবনী পাঠ করে শোনান সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জরুল হক।
পরে তার ছেলে রিয়াজ হোসেন খোন্দকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বনানী কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হবে।
এর আগে শুক্রবার (৩ মে) সন্ধ্যায় সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর মরদেহ ঢাকায় আনা হয়।
গত বৃহস্পতিবার (২ মে) জাতীয়বাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে দেশটির মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। শোকবার্তায় তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের দ্বাদশ অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বাবা এম এইচ খন্দকার ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।
তিনি ১৯৮০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর ২০০১ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হন। পরে ২০০৫ সালের ৩০ এপ্রিল অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হন। ২০০৭ সালের ২৪ জানুয়ারি অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। এছাড়া তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটিরও দায়িত্ব পালন করেছেন।
এমএইচডি/এসএসএইচ