পিকে হালদারের সাক্ষাৎকার প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে দুদক
সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা পাচার করার অভিযোগ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদন করা হয়।
আবেদনে একইসঙ্গে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে গত সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) পিকে হালদারের প্রচারিত সাক্ষাৎকার এবং মধ্যরাতে প্রচারিত টকশোর ভিডিও ক্লিপ আদালতে তলব করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) দুদকের আইনজীবী বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। ওইদিন আদালত এ বিষয়ে লিখিত আবেদন দিতে বলেন। সে অনুসারে বুধবার লিখিতভাবে এ আবেদন করা হয়।
মঙ্গলবার আদালতে খুরশিদ আলম খান বলেছিলেন, সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে একজন পলাতক আসামির সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়। এছাড়া তাদের রাতের টকশোতেও ওই আসামিকে লাইভে এনেছে। আমাকেও সংযুক্ত করেছিল। আমি তার কথা শুনে লাইভ থেকে বেরিয়ে এসেছি। কারণ আমিতো পলাতক আসামির সঙ্গে টকশো করতে পারি না। প্রথম কথা হলো, পিকে হালদার পলাতক, আর দ্বিতীয় হলো তার বিষয়ে এই আদালতে একটা সুয়োমোটো মামলা বিচারাধীন। এ অবস্থায় তার প্রচারিত সাক্ষাৎকারে কী আছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এই আদালত সেই ভিডিও সাক্ষাৎকার তলব করে দেখতে পারেন। এরপর প্রয়োজনীয় আদেশ দিতে পারেন।
এরপর আদালত লিখিত আকারে আবেদন করতে বলেন।
গত ১৮ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিক ‘পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে ১৯ নভেম্বর তাকে বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেফতার করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে স্বঃতপ্রণোদিত আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
ওই আদেশ অনুসারে গত ২ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক। এরপর ৯ ডিসেম্বর পিকে হালদারের কাজিন পিপলস লিজিংয়ের সাবেক পরিচালক অমিতাভ অধিকারী এবং পিকে হালদারের সাবেক সহকর্মী ও পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জল কুমার নন্দীকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় পক্ষভূক্ত করা হয়। একইসঙ্গে পিকে হালদারের গ্রেফতারি পরোয়ানা ইন্টারপোলের কাছে পাঠানো এবং তার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়ে ৩ জানুয়ারি পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
এর মধ্যে গত ২০ ডিসেম্বর দুদক আইনজীবী জানিয়েছেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারপোলের কাছে পাঠানো হয়েছে।
প্রশান্ত কুমার হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরে দুই বিনিয়োগকারীর করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি এক আদেশে প্রশান্ত কুমার হালদারসহ সংশ্লিষ্ট ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
এর মধ্যে দেশে ফিরতে প্রশান্ত কুমার হালদার এ বিষয়ে আদালতের কাছে আবেদন করতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের কাছে একটি চিঠি দেন। এরপর কোম্পানিটি আদালতে আবেদন করে। গত ৭ সেপ্টেম্বর আদালত বলেছেন, তিনি কখন কীভাবে আসবেন তা জানাতে। পরে ২০ অক্টোবর একটি আবেদন করেছে কোম্পানিটি। যেখানে নির্বিঘ্নে দেশে আসার কথা বলা হয়েছে এবং সেখানে ২৫ অক্টোবরের একটি টিকিটের কপিও সংযুক্ত করা হয়।
২১ অক্টোবর হাইকোর্ট এ বিষয়ে এই আদেশ দেন। আদেশে দেশে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার গ্রেফতার নিশ্চিত করতে বলা হয়। পরে তার গ্রেফতারি পরোয়ানা বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠাতে বলা হয়েছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক, ইমিগ্রেশন অথরিটি চিফ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এমএইচডি/জেডএস