হলি আর্টিজান হামলা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে : হাইকোর্ট
হলি আর্টিজানে দেশি-বিদেশি ২০ জন নাগরিকসহ ২ পুলিশ কর্মকর্তাকে যে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাতে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া এমন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড জনসাধারণের মনে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এবং জননিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করেছে বলেও উল্লেখ করেন আদালত।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) হলি আর্টিজান হত্যা মামলার রায়ে বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন। রায়ে নিম্ন আদালতের দেওয়া ৭ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট।
আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ।
আসামিদের বিরুদে সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯-এর ধারা ৬ (১) (ক) (আ) ধারার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত এ রায় দেন। একইসঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন আদালত।
এর আগে বেলা ১১টা ২৮ মিনিটে রায় পড়া শুরু হয়। বাংলা ভাষায় রায় পাঠ করেন বেঞ্চের জুনিয়র বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
আরও পড়ুন
রায় ঘোষণার সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নির্মুল কুমার দাশ উপস্থিত ছিলেন। আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট আমিমুল এহসান জুবায়ের উপস্থিত ছিলেন।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির (আত্মঘাতী) সদস্যরা।
দেশের ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস এ হামলায় ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি, একজন ভারতীয়, একজন বাংলাদেশি-আমেরিকান দ্বৈত নাগরিক ও দুজন বাংলাদেশিসহ মোট ২০ জন নিহত হন। এ ঘটনায় সন্ত্রাসীদের গ্রেনেডের আঘাতে প্রাণ হারান বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন আহমেদ ও সহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম।
হামলার পর জিম্মি অবস্থার অবসানে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়েছিলেন পাঁচ জঙ্গি। তারা হলেন- মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ওরফে মামুন, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল।
এছাড়া এ ঘটনার পর বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন নব্য জেএমবির আরও ৮ সদস্য।
ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার দাস। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির মামলাটি তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।
তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল হাসনাত রেজা করিমকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান এই মামলায় সাতজনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
এমএইচডি/এসএম