ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরানের নিয়োগ বাতিল
ড. ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতি দিতে অস্বীকৃতির কথা গণমাধ্যমে জানানো ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে মন্তব্য করার জেরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার নিয়োগ বাতিল করে দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার তার নিয়োগ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইং।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সলিসিটর রুনা নাহিদ আক্তার এ প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, 'The Bangladesh Law Officers order, 1972 (PO No. 6 of 1972) এর ৪ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া'র নিয়োগাদেশ জনস্বার্থে বাতিলক্রমে তাঁকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। ইহা অবিলম্বে কার্যকর হবে।'
এমরান আহম্মদ ভূঁইয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রী।
এর আগে সোমবার সরকারের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
তিনি বলেন, ড. ইউনূসের পক্ষে ১৭৫ জন বিদেশি ব্যক্তি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিনটনও রয়েছেন। ওই বিবৃতির বিরুদ্ধে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে পাল্টা বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাকে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছে। কিন্তু আমি ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করব না।
অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে— এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া এমন কথা বললেও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ড. ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ড. ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে, সুপ্রিম কোর্টের সাধারণ আইনজীবীরা ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতি দিচ্ছেন। সেই বিবৃতিতে তারা স্বাক্ষর দিচ্ছেন। তার একটি কপি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে দেওয়া হয়েছে।
ড. ইউনূস প্রসঙ্গে এমরানের বক্তব্য গণমাধ্যমে আসার পরই তার বরখাস্ত হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। মঙ্গলবারই আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন ডিএজি (ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল)। তিনি যদি সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন, তাহলে তাকে হয় পদত্যাগ করে কথা বলা উচিত, অথবা অ্যাটর্নি জেনারেলের অনুমতি নিয়ে কথা বলা উচিত। তিনি সেটি করেননি। তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন।
শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করা এবং বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গত মাসে খোলা চিঠি দিয়েছেন ১৭৫ জন বিশ্বনেতা। চিঠিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি তাকে (ড. ইউনূস) লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করায় আমরা উদ্বিগ্ন এবং এটি তাকে বিচারিকভাবে হেনস্তা করার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া বলে আমাদের বিশ্বাস।’
এরও আগে চলতি বছর মার্চ মাসে প্রথমবারের মতো ড. ইউনূসের ‘নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লেখেন ৪০ জন বিশ্বনেতা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে ছাপা হয়েছিল চিঠিটি।
ড. ইউনূসের বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে লেখা খোলা চিঠির বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি সরকার। গত ২৯ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন— ‘ভদ্রলোকের যদি এতই আত্মবিশ্বাস থাকে যে তিনি অপরাধ করেননি, তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না। যারা বিবৃতি দিয়ে তার বিচার স্থগিত করতে বলেছেন তাদের বলছি, বিবৃতি না দিয়ে আইনজীবী পাঠান। এক্সপার্টরা দেখুক, অনেক কিছু পাবেন। আমাদের দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। সবকিছুই আইন মতো চলে। কেউ যদি ট্যাক্স (কর) না দেয় আর যদি শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করে, শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যদি মামলা করা হয়... আমাদের কি সেখানে হাত আছে যে মামলা বন্ধ করে দেব?’
পরে ওই চিঠির বিষয়ে বিবৃতিতে ১৪ দল বলে— চলমান বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে বেআইনি ও অযৌক্তিক দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর নিকট দেশি-বিদেশি কিছু ব্যক্তির খোলা চিঠি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে হুমকি।
এ বিষয়ে নিন্দা আসে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ থেকেও। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের ১৭১ জন বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী এক বিবৃতিতে বলেন— ওই খোলা চিঠির বক্তব্য বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর স্পষ্ট হুমকি হিসেবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশের বিবেকবান নাগরিক হিসেবে আমরা বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ার ওপর এ ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
বিদেশিদের লেখা ওই খোলা চিঠির প্রতিবাদ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দেশের ৫০টি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ ও ১৩টি জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ফেডারেশন।
এমএইচডি/এনএফ